• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা অপুষ্টি ঘনীভূত হচ্ছে:প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ১০:০৭ পিএম, ২৪ জুলাই ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৬ বার

আন্তজার্তিক ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী টেকসই, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ইতালিতে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে ইউএন ফুড সিস্টেম সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে ৬৯০ মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই এবং প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষ সুষম খাবার থেকে বঞ্চিত। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট খাদ্য, সার, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টির সমস্যাকে ঘনীভূত করেছে

পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহের অক্ষমতার জন্য কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যই বিশ্বব্যাপী অপুষ্টিজনিত সমস্যার একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সংকট নিরসনে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাপী টেকসই, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্রস্তাবনা-

আধুনিক কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন।জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ডিল কে চালু রাখার পাশাপাশি খাদ্য ও সার রপ্তানির বিধি-নিষেধগুলো তুলে নেয়াসহ যে কোনো বাণিজ্য বাধা অপসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত দরকার।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ‘ফুড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার রূপান্তরের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল রেখে ন্যানো-প্রযুক্তি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স ও অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তিগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া বাঞ্ছনীয়।প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অপচয় রোধে তরুণ সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি ।

রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে ২৪-২৬ জুলাই ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট বা খাদ্য ব্যবস্থাপনার শীর্ষ এই সম্মেলনে ২০ টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ ১৬০ টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় দু’হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।

জাতিসংঘ সচিবালয়ের উদ্যোগে ইতালিতে এই শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।তিন দিন ধরে উচ্চ-পর্যায়ের এ বৈঠকের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম খাদ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষ সম্মেলনের পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতিগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে দেশগুলোর জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা এবং স্থায়ী বাধা ও সাফল্য চিহ্নিত এবং অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৮টি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৪ বছরে ৬৯০টি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল শস্যের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা লবণাক্ত-সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করেছেন এবং খরা ও জলমগ্ন-সহিষ্ণু ধান উদ্বাবনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিশেষভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অতিমারি মোকাবিলায় আমাদের সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা কৃষি প্রণোদনা প্রদান করেছে। আমি দেশের সকল মানুষকে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছি। আমি চাই আমাদের নিজেদের খাবার যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি। সে অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সবজি-পুষ্টি বাগান তৈরি করা হয়েছে। প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার কৃষক এবং তাদের পরিবার এই কর্মসূচি থেকে উপকৃত হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০১৬ সাল থেকে দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠির জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। গত বছর পর্যন্ত প্রতি কেজি চালের দাম ছিল ১০ টাকা। বর্তমানে ১৫ টাকা কেজি দরে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কর্মসূচির মাধ্যমে সকলের জন্য উন্মুক্ত রেখে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৪ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি সব্বোর্চ্চ পাঁচ কেজি চাল এবং পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারেন। চলতি জুলাই মাস থেকে টিসিবির মাধ্যমে চিনি, ডাল ও ভোজ্য তেলের সাথে সারা দেশের এক কোটি পরিবারকে মাসিক পাঁচ কেজি করে ওএমএসের চাল দেয়া শুরু হয়েছে।