• মঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪

‘ভবঘুরে’ ভিক্ষাবৃত্তি’তে ৫ শতাধিক পাকড়াও


প্রকাশিত: ১১:২৫ পিএম, ৪ এপ্রিল ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫ বার

 

বিশেষ প্রতিনিধি : এবার ভিক্ষুক ধরতে গিয়ে নিরীহ শ্রমজীবী ধরা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আটকের সংখ্যা বেড়েছে ৫ শতাধিক। এদের বিরুদ্ধে ভবঘুরে হয়ে যত্রতত্র ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর আটকের সত্যতা স্বীকার করেছেন। জানা গেছে, ভবঘুরে পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য রাস্তাঘাট কিংবা হাটবাজার থেকে নির্বিচারে লোকজনদের আটকের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের স্বজনরা বলছেন, কাজে বের হওয়া এসব মানুষকে নানা কারণ দেখিয়ে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বজনদের সাথে দেখাও করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বলছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটের নির্দেশেই তাদের আটক করা হয়েছে।রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা শাহরিয়ার শাফি রোহান। দুই বছরের শিশু তানহাকে নিয়ে মিরপুরের সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা স্ত্রীর জন্য। তার দাবি, মঙ্গলবার বাজারের জন্য কাজে বের হলে ধরে আনা হয় স্ত্রী মনিকাকে। এখনো জানেন না কোন অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে, কখন মিলবে মুক্তি।

শাহরিয়ার শাফি রোহান বলেন, কাজ শেষ করে সে দুপুর ২টা আড়াইটার দিকে বাসায় আসছিল। এ সময় তাকে রাস্তা থেকে ডাক দিয়েছে বলেছে যে শোনেন, একটু কথা বলবে। সাইডে নেওয়ার পরে দুই জন মহিলা তাকে গাড়িতে তুলে ফেলেছে। কোনো কথাই বলে নি।

রোহানের মতো এমন অভিযোগ ছবি হাতে অপেক্ষায় থাকা শতাধিক মানুষের। তাদের কেউ দাঁড়িয়েছিলেন যাকাতের জন্য, কেউ করতেন হকারি৷ কেউ সেদিনই বেড়াতে এসেছিলেন ঢাকায়। কিন্তু তাদের থানায় হাজিরা দেওয়ার নাম করে নিয়ে আসা হয় আশ্রয় কেন্দ্রে।

একজন ভুক্তভোগীর স্বজন বলেন, ‘অনেকে বাজার করতে গেছে ধাপ করে তাকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। অনেকেই জাকাতের কাপড় আনতে গিয়েছিল সেখান থেকে ধরে নিয়ে এসেছে। একটু আগেই একজন ফোন করেছিল, ওনাদের পানি পর্যন্ত দিচ্ছে না। হকারগুলোকে ধরে এনে ওনারা বলছে যে ভিক্ষুক। আমরা তো একটা ব্যবসা করে খাই। ৫ হাজার করে টাকা চায়। বলেছে যে টাকা দাও তাহলে ছেড়ে দেবো।

ঘটনার সত্যতা জানার চেষ্টা করলেও ভেতরে ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দাবি, ভবঘুরে ও নিরাশ্র‍য় ব্যক্তি পুনর্বাসন আইনের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু আশ্রয়ন কেন্দ্রে হঠাৎ ৪০০ মানুষ কিভাবে এলো তার সদুত্তর মেলেনি।

সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহা. আল-আমিন জামালী দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, গত ১ তারিখে ছিল ৭৮ জন। ২ তারিখে হল ৪৪২ জন। সরকারের নির্বাহী আদেশে এই অভিযান চালানো হয়েছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা আটক করার পর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দাঁড় করানো হয়েছে। তিনি কথা বলার পর হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য আটকাদেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কিন্তু ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নাই।

আটক বেশিরভাগ মানুষের সাথে ভবঘুরে আইনের সংজ্ঞার কোনো মিল নেই। ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ ধারা ২ এর ১৪ উপধারা অনুযায়ী “ভবঘুরে” অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যার বসবাসের বা রাত্রি যাপন করার মত সুনির্দিষ্ট কোন স্থান বা জায়গা নাই অথবা যিনি কোন উদ্দেশ্য ছাড়া অযথা রাস্তায় ঘোরাফেরা করে জনসাধারণকে বিরক্ত করেন অথবা

যিনি নিজে বা কারো প্ররোচনায় ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হন; তবে কোন ব্যক্তি দাতব্য, ধর্মীয় বা জনহিতকর, কোন কাজের উদ্দেশ্যে অর্থ, খাদ্য বা অন্য কোন প্রকার দান সংগ্রহ করলে এবং উক্ত উদ্দেশ্যে বা কাজে তা ব্যবহার করলে তিনি এর অন্তর্ভুক্ত হবেন না।সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে এ বিষয়ে কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ভিক্ষুক উন্নয়ন বিষয়ক প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তার দাবি, সবকিছু আইন অনুযায়ীই হচ্ছে।

ভিক্ষুক, চা, শ্রমিক ও হিজড়া প্রকল্পের উপ-পরিচালক শাহজাহান বলেন, আমরা তো তাদের ধরি নাই। ধরেছে পুলিশ আর স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট যারা তারা। তাদের বিষয়টি তো আমি ব্যাখ্যা দিতে পারব না। যে কোনো কোর্টের মাধ্যমে সাময়িক আশ্রয়ের জন্য তাদের এখানে রাখবে এটাই নিয়ম।বিনা অপরাধে আটক এসব ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর স্বজনরা।