• শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কলিকালের পাগলা বাবা ফকির বাবা পীর বাবাদের ভন্ডামি


প্রকাশিত: ২:৪৬ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩৭১ বার

ওমর ফারুখ  : কলিকালের পাগলা বাবা ফকির বাবা পীর বাবাদের ভন্ডামি নিয়ে অতীতের সকল vvvরেকর্ড ভঙ্গ হতে চলেছে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের ( সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ) শেষ যুগ হলো কলি যুগ বা পাপের যুগ। বেদব্যাস রচিত বষ্ঞিুপুরাণে বলা হয়েছে যে কৃষ্ঞের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছে। কলি যুগে পাপের পরিমাণ যেমন পূণ্যের তিনগুণ তেমনি এ সময়ে ঘরের বাবার চেয়ে বাইরের বাবার পরিমাণও শতগুণ। আমাদের চারিদিকে আজ বাবা আর বাবা- বিড়ি বাবা, টাইগার বাবা, হাঁটা বাবা, চুমু বাবা, ফুঁ বাবা, লাঠি বাবা, ল্যাংটা বাবা, শিকল বাবা, পানি বাবা।

vv বাবারে বাবা, কতো বাবা! বিড়ি বাবার আগমন ঘটে ছিল কুমিল্লার বড়ুরা থানার খোসবাস গ্রামে, নাম আব্দুল মালেক। তার কেরামতি ছিলো তার আবুল বিড়ি। এই বিড়ি খেয়ে নাকি জ্বর-ঠা্লা, জন্ডিস-যক্ষা এমনকি ক্যান্সারও ভালো হতো। কেউ এই বিড়ির ধোয়া, কেউ পানিতে সেটা চুবিয়ে পান করতো, আবার মেয়েরা সন্তান লাভের আশায় বাবার ধোয়াঁর পাশে রাতও কাটাতো।

রাজধানীর উত্তরা থেকে টাইগার বাবা ওরফে কালাম শিকদার ওরফে বাউল শিকদার নামে এক ভুয়া চিকিত্সক র্যাবের হাতে গ্রপ্তোর হয়েছিলো। কালাম কদমতলী এলাকায় এনার্জি ড্রিং, সরিষার তেল ও মোমবাতি দিয়ে প্যারালাইসিস, ক্যান্সার ও প্রতিবন্ধীদের চিকিত্সার নামে লোকজনকে বর্বরোচিত নির্যাতন ও অনৈতিক কর্মকা্লে বাধ্য করত।
vvvv
ঢাকার ব্যস্ত নগরীতে হাঁটা বাবার নাম শোনেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পিচঢালা রাজপথে ভক্ত ও অনুরাগীদের নিয়ে হাঁটতো মাইলের পর মাইল। তার পুরো নাম মোহাম্মদ জুলফিকার হায়দার। ভক্তরা ডাকতেন হাঁটা বাবা’ নামেই। দাম্পত্য কলহে নিমজ্জিত মহিলারা আর ব্যবসায়িক সাফল্যের তদবির নিয়ে লোকজন তার কাছে বেশি আসতো। মারা যাওয়ার পর তার কবরের স্থান নির্ধারণ নিয়ে ভক্তদের মধ্যে গন্ডগোলের ঘটনাও ঘটেছিল।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাপাডা জেলা প্রোদ্দাতুর গ্রামে চুমু বাবা নামে এক নতুন বাবার উদয় হয়েছিল যিনি সমস্যা দূর করতে চুমু দিত। মহিলারা তার কাছে সেবা নিতে তিনি তাদের মনঃস্কামনা শুনে তা পূরণের জন্য তাদেরকে চুমু দিত, কিন্তু পুরুষরা আসলে ধরিয়ে দিত কাগজি লেবু। অশস্নীলতার অভিযোগে পরে তাকে গ্রপ্তোর করা হয়েছিল।

vvvভারতের তীর্থস্থান বৃন্দাবনে এবার ধর্ষণের শিকার হয়ে ছিলেন এক মার্কিন নারী। অভিযুক্ত ছিলেন বৃন্দাবনের এক সাধু বাবা। সুদূর আমেরিকা থেকে বৃন্দাবনে বেড়াতে এসেছিলেন ওই নারী। বৃন্দাবনের সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে একপর্যায়ে তিনি সাধু বাবারও ভক্তে পরিণত হন। এ সময়েই ওই ভন্ড সাধুর যেৌন লালসার শিকার হন।

ধামরাইয়ের চেৌহাট গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র পালের ছেলে ভন্ড সাধু নিতাই চন্দ্র পাল ছিলেন ফুঁ বাবা। তিনি বন্ধ্যা নারীদের সন্তান হওয়া, অল্প বয়সে চুল পাকা, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাল করা, প্রেমিক-প্রেমিকাকে পাইয়ে দেয়া, জ্বীন-ভূতে ধরা, যেসব নারীর বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, আমাশা, গ্যাষ্ট্রিক, পিত্তথলিতে পাথর, প্যারালাইস, বাতের ব্যথা, হঁাপানি, এক শিরা, যেৌন দুর্বলতা, আলসার, ব্যথা, স্বপ্ন দোষ সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিত্সা করত বলে কথিত আছে।

বরগুনার আমতলী শহরের মাজার রোডের হজরত ইসমাইল শাহর (রা.) মাজারে কালাম সিকদার (৪০) নামের কথিত এক ফকির জটিল সব রোগের অভিনব চিকিত্সা দিত। তার চিকিত্সা পদ্ধতি ছিলো রোগীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা, তাতেই লোকজন তাকে লাঠি বাবা বলে ডাকতো।

গাইবান্ধায় পলাশবাড়ি উপজেলার নান্দিশহর, উদয়সাগর এলাকা থেকে ল্যাংটা বাবা বলে পরিচিত আব্দুর রহমান ও তার গংকে গ্রপ্তোর করা হয়েছিল। এসময় তাদের কাছ থেকে গঁাজা, ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয় ও আদালতে হাজির করে ল্যাংটা বাবা আব্দুর রহমান, নায়েব আলী ও লাইলী বেগমকে দেড় বছর করে করাদ্ল এবং অন্য তিনজনকে ৬ মাস করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল।

‘একুশের চোখে’ উঠে আসে শিকল বাবা নামে এক মহাপ্রতারকের কাহিনী যিনি স্বামী/স্ত্রী বশিকরণ, নারী-পুরুষের গোপন রোগ, কিডনি সমস্যা, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি, ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, হঁাপানি এমন কোনো রোগ নেই যে তার চিকিত্সা করত না।  তার বাড়ির সামনের গাছে তারই দেয়া নানা ধরণের নিয়তে তাবিজ বাধলেই এসব নাকি সেরে যায়। শিকল বাবার বাসায় আছে এক বিশাল হাড়ি যেখানে তার কাছে চিকিত্সা নিতে আসা লোকজন টাকা ফেলে যায়। সে নাকি বিবাদমান দুই নেত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য একুশের চোখের প্রতিবেদককে তাবিজও দিয়েছিল, ফলাফল আমরা সবাই জানি।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রাজীবপুর গ্রামে ভন্ডপীর সাজিয়ে নিজেকে পাগলা বাবা নাম জাহির করে দরবার বানিয়ে গঁাজা, ফেন্সিডিল ও মদের জমজমাট গঁাজার আসর বসাতো নুরুজ্জামান। পরে তাকে পুলিশ গ্রপ্তোর করে লাল দালানে আশ্রয় দেয়।

ফেরিওয়ালা থেকে কবিরাজ পানি বাবা সেজে পানি, তেল পড়া আর ঝাড়-ফু দিয়ে জটিল সব রোগ সারাতেন সাভারের ধামরাইয়ের এক ভন্ড।  জ্বর, পেটের ওষুধ এমনকি ডায়বেটিকসসহ সর্বরোগের চিকিত্সা করে এই পানি বাবা।

এ বাবারা বরাবরই আমাদের সমাজে ছিল। ভুল বাবাদের অনেকেই হয়তো এখন অতীত, আবার ইতোমধ্যে কিছু নতুন বাবাদেরও আবির্ভাব ঘটেছে। তবে, এরা নীচু শ্রেণির বাবা, এরা বাদে এ সমাজে আরও অনেক উচ্চমার্গীয় বাবারা রয়েছে তাদের কথা আজ বাকী রয়ে গেলো। শত-সহস্র সমালোচনার মুখেও দীর্ঘ দিন ধরে এরা তাদের বাবাত্ব ধরে রেখেছেন।

একবিংশ শতকেও কীভাবে পাগলা বাবা, ফকির বাবা, পীর বাবা, দয়াল বাবা, মাইজ ভান্ডারী বাবা, সাধু বাবাদের রাজত্ব কায়েম রয়েছে তা সত্যিই এক বিষ্ময়। ভুল জেনেও স্বীয় এলাকার লোকেরা এদের প্রতিবাদে এগিয়ে আসে না বা পক্ষান্তরে মেৌন সম্মতির মাধ্যমে তাদের ব্যবসার পসার জমাতে সাহায্য করে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস, গুজব ও ধর্মীয় কুসংস্কার, সাথে যুক্ত হয় স্থানীয় প্রশাসন, গ্রামের প্রভাবশালী নেতা নেত্রী ও মুরীদ/খাদেমদের অর্থপ্রাপ্তির লালসা।

জটিল-কঠিন গোপন রোগের চিকিত্সার জন্যে তাদের দিকে ধেয়ে যাওয়া সহজ-সরল দরিদ্র মানুষের এই জনস্রোতের দায় আমাদের শিক্ষিত ডাক্তারেরাও কখনো এড়াতে পারে না- সরকারি হাসপাতালে অসুস্থ পরিবেশের দেৌরাত্ম, শহরমুখীতার কারণে গ্রামে চিকিত্সকের সঙ্কট, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সার নামে আর্থিক হয়রানি এ সবই তাদেরকে এ ভুল পথে পা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে।

এ ভুয়া যে সকল চিকিত্সা প্রদান করে বলে দাবী করে সেগুলো মধ্যে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, হেপাটাইটিস, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদির মতো কঠিন রোগের নাম দেখে মনে হয় আমাদের দেশে এ সবের ভালো কোনো চিকিত্সা নেই বা সাধারণ মানুষের এ সব চিকিত্সা লাভের কোনো সুযোগ নেই। তদুপরি, যেৌনশিক্ষা বা সচেতনতার অভাবে সিলিফিস, গনোরিয়া, এইডসের মতো রোগেও জন্যেও মানুষ পানিপড়া, জুতাপড়া প্রভৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ নিরসন, বশীকরণ, সন্তান লাভ, পরীক্ষায় পাস, ভোটে জয়লাভ, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীতে ঘায়েল করা প্রভৃতি যার সাফল্য বা ব্যর্থতা সবসময়ই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। ফলে ঝড়ে বক মারার কৃতিত্ব ধর্মীয় লেবাসি এ সব ‘হুজুর’দের ভাগ্যে জুটলেও ব্যর্থতার গস্নানি কখনো তাদেরকে স্পর্শ করতে পারে না। এভাবেই তারা টিকে ছিল, আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।

ছাব্বিশ বছর পার হলেও ‘অবসকিউর’ ব্যান্ডের সাইদ হাসান টিপুর সেই গানটা যেন আজও অম্লান, শ্বাশত, চিরন্তন  কলিকালের ভন্ড বাবা খাজা বাবার নাম ভাঙ্গাইয়া ধর্মটারে ল্যাং মারিয়া ভাঁওতাবাজির এমডি সাজে বাবা রে বাবা ও বাবা ভন্ড  বাবা বাবা রে বাবা হায় ও বাবা কলি বাবা।