মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন যেন পরকীয়া সেক্স বাগান
দিনা করিম : মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন যেন পরকীয়া সেক্স বাগানে পরিণত হয়েছে।এক শ্রেনীর নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এসব অপকর্ম চলায় পুরো পার্কের পরিবেশ এখন দুষিত। কোন ভদ্রলোক পার্কে যেতে লজ্জাবোধ করেন।বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার হচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন নিরাপদ ডেটিং জোন। শুধু ডেটিং জোন বললেই হবেনা। কিছু স্থানীয় মাস্তান এবং ইজারাদারের নিয়ন্ত্রনে এর আড়ালে চলছে নানা অসামাজিক কাজ। কেউ কেউ বোটানিক্যাল গার্ডেনকে অভিহিত করছেন রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে।
এ সম্পর্কিত অনেক খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ঘটনার দিন বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রথম গেট পেরিয়ে দ্বিতীয় টিকিট চেকিং গেটের পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন এক সুন্দরী তরুণী । বেশ নিচু গলায় কথা বললেও অনেকটা কৌতূহল বশতঃ শোনার চেষ্টা করছিলাম।
“এ্যাই তুমি কোথায় জলদি আসো, আমার হাতে বেশী সময় নাই,তারাতারি বাসায় ফিরতে হবে। আমি রানার ওখানে মানে রানা যেখানে ডিউটি করে, আরে বুঝলা না, গত পরশু যেখানে বসেছিলাম, ওকে ওকে রাখলাম। সোজা ওখানে চলে আসো। আমি চলে যাচ্ছি।”
ফোনটা ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে তরুণী সোজা চলে গেলেন ঝোপের কাছে। মিনিট কয়েকের ব্যবধানে সেখানে এলো এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক । এক পিচ্চির কাছ থেকে প্রায় কেজিখানেক পেপার নিয়ে মাটিতে বিছিয়ে অন্তরঙ্গ পরিবেশে বসে পড়লেন দু’জন।
মিরপুরের ওই উদ্যানটি এখন রাজধানীর পরকীয়া প্রেমক-প্রেমিকাদের সেক্স প্লেস হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশপথ থেকে একটি সোজা পাকা সড়ক চলে গেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিস পর্যন্ত। প্রবেশদ্বার থেকে কয়েক পা এগোলে পাকা সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে একেবারে উত্তরের শেষ মাথা পর্যন্ত লেকের পাড় দিয়ে অসংখ্য ঝোপঝাড়। ওই সব ঝোপঝাড়ের আড়ালে জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতী। শুধু এখানেই নয়, উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিসের পেছনে, পদ্মপুকুর পাড়ে ওরা আছে সব খানে।
কোন ঝোপঝাড়ের দিকে প্রবেশাধিকার নেই সাধারণ দর্শনার্থীদের। ওদিকে যেতে চাইলে বাধা। বাঁশের ছোট ছোট চিকন লাঠি হাতে পাঁচ-সাত জন করে যুবক দাঁড়িয়ে। ওরা পাহারাদার। হাতের লাঠি হচ্ছে ওদের পরিচিতি।লাঠি হাতে দেখলে বুঝে নিতে হবে ওরা উদ্যান ইজারাদারের নিয়োজিত লোক। পুরো উদ্যানে লাঠি হাতে ওদের সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে ষাট জন।
ওদের কাজ গার্ডেনের দর্শনার্থীদের নিরপাত্তা বিধান করা, যাতে কেউ উদ্যানে গিয়ে প্রতারণার কবলে বা ছিনতাইয়ের কবলে না পড়ে। সরজমিন বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখা গেল লাঠি হাতে ওই বাহিনী। পাঁচ-সাত জনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঝোপঝাড় এলাকায় বিশেষ দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যস্ত।
দেখা গেল বেশ কয়েক জায়গায় দল বেঁধে বসে সিগারেট ফুঁকছে তারা। তাদের সামান্য দূরে ঝোপের মধ্যে অপত্তিকর অবস্থায় কয়েক জোড়া প্রেমিক যুগল। ও দিকটায় এগোতে চাইলে দল বেঁধে বসা যুবকদের একযোগে উচ্চারণ- এদিকে নয়, ওদিকে যান। তাদের ভাবগতিক দেখে ওদিকে এগোতে সাহস পায় না কেউ।
দেখা গেল বোটানিক্যাল গার্ডেনে ডেটিং করতে আসা বেশির ভাগই মধ্যবয়সী, এখানে টিনএজার প্রেমিক জুটির সংখ্যা কম। বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি, একটা বিষয় লক্ষ্য করি, এখানে এখন যারা ঘুরতে আসে তাদের বেশির ভাগই পরকীয়া করে, এখানে স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা কম আসে।
প্রায় ১ কোটি টাকা দিয়ে উদ্যানের প্রবেশদ্বারসহ পার্কিং ইজারা নিয়েছেন একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারাদার কোম্পানি তাদের বেশি আয়ের জন্য এখন এখানে অবাধ অশ্লিলতা পর্যন্ত ওপেন করে দিয়েছে!
এখন আর উদ্যানের শোভা উপভোগ করতে বা বৃক্ষরাজির সঙ্গে পরিচিত হতে উদ্যানে কেউ যান না।
আমাদের জাতীয় ওই উদ্যানটি এখন একটি ভাড়ায় চলা ডেটিং জোনে পরিণত হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বলে অনেকে এখানে আসতে চান না।
এ ব্যপারে প্রশাসন এবং সচেতন সমাজ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই মনোরম উদ্যানটি তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে স্থায়ী ভাবে রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে পরিচিতি পাবে ।