• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

আব্দুল মোনেমে’র চিনি কেলেংকারি


প্রকাশিত: ১:০৭ এএম, ২৫ এপ্রিল ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২০ বার

 

 


০০ রাজস্ব লুট ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ-
০০ আমদানি রপ্তানি বন্ধ-
০০ ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ-

 

 

 

 

শফিক রহমান : এবার চিনি কেলেংকারি ধরা খেয়েছে আব্দুল মোনেম গ্রুপ। সরকারি সুবিধায় চিনি আমদানি করেছিল মোনেম গ্রুপ। বাজারে চাহিদা থাকায় গোপনে বিক্রি করে দিয়ে ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনার পেছনে লেগে ছিল বন্ড কমিশনারেট। তারা ধরে ফেলে ঘটনাটি।

৫ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি কারখানা থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে।এতে সরকারের ১ হাজার ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে আপোষ রফায় ছয় কিস্তিতে এসব অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা শোধ করা বন্ধ করে দেয়।

সরকারের বাকি থাকা শুল্ক ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত না দেয়ায় অভিযানে নামে বন্ড কমিশনারেট। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আব্দুল মোনেমের সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। একই সঙ্গে সব বিন নম্বর বা বিআইএন স্থগিত করেছে এনবিআর।

সরেজমিনে জানা গেছে, ৬৭৪ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ আব্দুল মোনেমের আমদানি-রপ্তানি স্থগিত ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে কর ফাঁকি দেওয়া ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা তারা পরিশোধ করেনি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (দক্ষিণ) এক অফিস আদেশে এ নির্দেশ দিয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) কমিশনারেটের একটি সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আদেশে দেশের সব সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরকে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করার পাশাপাশি সব বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা বিআইএন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনারের পক্ষে আদেশে সই করেন বন্ড কমিশনারেটের উপকমিশনার দ্বৈপায়ন চাকমা।এতে বলা হয়, কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ এর ২০২ এর (১) (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের চলতি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য সব অ্যাকাউন্ট অপরিচালনাযোগ্য করার অনুরোধ করা হলো।

ওই অফিস আদেশে বলা হয়, শুল্ক পরিশোধ না করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি কারখানা থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ছয় কিস্তিতে এসব অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তবে বাকি ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত জমা দেয়নি।

বিআইএন স্থগিত রাখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে বন্দরে প্রতিষ্ঠানটির যেসব পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে, তার শুল্কায়ন কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। একইভাবে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এর মালিকানাধীন ও ব্যবস্থাপনাধীন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার অর্থ—প্রতিষ্ঠানটি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন বা লেনদেন করতে পারবে না।

দেশের ১৯টি শুল্ক স্টেশনসহ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে নির্দেশনা দিয়ে আদেশপত্রে বলা হয়, কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ২০২ (১),বি) অনুযায়ী সরকারি পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠান অথবা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অথবা একই মালিকানাধীন বা ব্যবস্থাপনাধীন প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাস স্থগিত থাকবে।পাশাপাশি বন্ড সুবিধায় আনা সুগার রিফাইনারি থাকা সব ধরনের অপরিশোধিত চিনি বাজারজাতকরণ ও সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বন্ড কর্মকর্তাদের।

জানা গেছে, মেসার্স আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি বন্ডেড সুবিধায় চিনি এনে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে, যা বন্ডেড সুবিধার অপব্যবহার। প্রথম ধাপে ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯১৯ টন চিনি ওয়্যারহাউস থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে, যার প্রমাণ পেয়েছে বন্ড কমিশনারেট।

এতে প্রাথমিকভাবে মামলা করা হয়। রায়ে অর্থদণ্ডসহ প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা দাঁড়ায় ৬১২ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৪ টাকা। এরপর দ্বিতীয় ধাপে অবৈধভাবে আরও ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩০ টন চিনি অপসারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায়ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে বন্ড কমিশনারেট। এই মামলার রায়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে জরিমানাসহ রাজস্ব পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮২ কোটি ৪৬ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৮ টাকা।

দুই ধাপে প্রতিষ্ঠানটিকে অনিয়মের দায়ে অর্থদণ্ড এবং শুল্ক-করাদিসহ ১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা পরিশোধের রায় দেয় ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট, যা সুদসহ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এ আদেশ জারির পর প্রতিষ্ঠানটিকে ৬ কিস্তিতে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধেরও সুযোগ দেয়া হয়; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ৬৭৪ কোটি টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।