• রোববার , ১৯ মে ২০২৪

শেষ ধাপে নো লাশ প্রত্যাশা-রাত পোহালে ৭১০ ইউপি ভোট


প্রকাশিত: ৩:১১ এএম, ৪ জুন ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৬ বার

আসমা খন্দকার   :   রাত পোহালে ৭১০ ইউপি’তে ভোট । আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি! নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ষষ্ঠ ও শেষ ধাপের ভোট শুরু হতে সময় আছে মাত্র কয়েক ঘ12ন্টা। ভোটের সব প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থী আর ভোটাররা আছেন ভোরের অপেক্ষায়।

শনিবার শেষ পর্বের ৭১০ ইউপির ভোটের জন্য বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার চালিয়েছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রায় ৩৩ হাজার প্রার্থী।

ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় পৌঁছেছে ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচন সামগ্রী। শুক্রবার বিকালের মধ্যেই নিরাপত্তা প্রহরায় নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে।
ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পর্বের তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যন্ত অন্তত ৯৮ জনের প্রাণহানি এবং সহস্রাধিক আহত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এসেছে গোলযোগ এবং অনিয়মের অভিযোগও।

সহিংসতা-অনিয়ম নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি আগের পাঁচ ধাপের চেয়ে এবার ‘ভালো করে’ তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ভোটের লড়াই শেষ করতে চাইছে।
তবে সহিংসতা-অনিয়ম অব্যাহত থাকায় শেষ ধাপের ভোট নিয়ে শঙ্কা কাটেনি সংশ্লিষ্টদের।

ইউপিতে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে। অনিয়ম-সহিংসতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। ক্ষমতাসীনরা সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে দাবি করলেও বিএনপি বলছে ‘তামাশার ভোট’ হচ্ছে।

সহিংসতায় হতাশ নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আশায় আছেন, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’- এমন উপলব্ধি থেকে শেষটায় ‘আলাদা উদ্যোগ’ নেবে ইসি।নতুন কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও ‘কঠোর অবস্থান নেওয়ার’ কথা বলেছে সংস্থাটি।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সহিংসতা রোধ ও সংখ্যালঘুসহ ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছি। আশা করি, ভালো নির্বাচন হবে শেষ ধাপে।

অনিয়ম রোধে ইসির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ভোটে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে একজন সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাঁশখালীর সব ইউপির ভোট বন্ধ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইসির উপ-সচিব রকিবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ৭১০টি  ইউপিতে পৌঁছাতে নির্বাচনী সামগ্রী এখন জেলায় রয়েছে। আদালতের আদেশে এ সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ৫৮টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহলে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ষষ্ঠ ধাপের ভোট তথ্য

ভোট ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৭১০ ইউপিতে।ভোটার ১ কোটি ১০ লাখের বেশি। সাড়ে ছয় হাজার কেন্দ্রে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজারের এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৭ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।এক লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকছেন ভোটের দায়িত্বে।

শেষ এ ধাপের ভোট সামনে রেখে ‘ভালো কিছু’ আশা করছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

অন্তত শেষটায় ভালো নির্বাচনের আশা করছি আমরা। কোনোভাবেই ভোটের নামে প্রাণহানি আর নয়। আমরা চাই- পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগাবে ইসি। দলগুলোও সহায়তা করবে,বলেন তিনি।

তবে নতুন করে ‘ভালো কিছু’ হবে এমন আশা রাখেন না ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আব্দুল আলীম।তিনি বলেন, যেভাবে সহিংসতা চলছে তাতে আর নতুন কিছু আশা করা মুশকিল। নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দলগুলোকেও এতে সহায়তা করতে হবে। শেষটা কেমন হয় তা দেখার অপেক্ষায় আমরাও।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও ২৭ জন

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, এ ধাপে ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি উপজেলায় ভোট স্থগিত হওয়ায় বাকি ২৭ জন এখন বিনা ভোটে জয়ীর তালিকায়।

এসব ইউপি হচ্ছে- শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের রামভদ্রপুর, চরকুমারী, রাঙ্গামাটির কাউখালীর ফটিকছড়ি, মাদারীপুরের শিবচরের ভদ্রাসন, ভোলার দৌলতপুরের ভবানিপুর, চরফ্যাশনের চর কুকরিমুকরি, বগেরহাটের মোল্লাহাটের গাংনি, বগুড়া সদরের ফাঁপোর, শাহজাহানপুরের আশেকপুর, পিরোজপুর সদরের শংকরপাশা, পাবনা সদরের গয়েশপুর, নরসিংদীর পলাশের জিনারদা, চরসিন্দুর, নাটোরের বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর, ঢাকার সাভারের তেঁতুলঝোড়া, টাঙ্গাইলের কালিহাতির দশকিয়া, চাঁদপুরের মতলব উত্তরের গজরা, কালাকান্দা, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট, ১৪ নম্বর হাইতকান্দি, ১১ নম্বর মঘাদিয়া, ১০ নম্বর মিঠানালা, বাঁশখালীর সরল, সাতকানিয়ার সোনাকানি, ধর্মপুর, কুমিল্লা সদরের বাগমারা, বেলঘর (দক্ষিণ) এবং মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর।

পাঁচ ধাপে আ. লীগ ২২৬৭, বিএনপি ৩১০

ভোটে অন্তত দেড় ডজন দল অংশ নিলেও মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। পাঁচ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২২৬৭ ইউপিতে ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩১০ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন।

নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।

দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৬৬ জন; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯ জন। বিএনপির প্রার্থীরা ৬০টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন; স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯টিতে।

চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪০৫ জন জয়ী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ৩৫ জন। এ ধাপে বিএনপির ৭০ জন ও ১৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।

পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে ৩৯২ জন ভোটে এবং ৩৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিএনপির ৬৭ জন, স্বতন্ত্র ১৭০ জন, জাতীয় পার্টির ৯ জন এবং অন্য দলের একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন।