• শনিবার , ১৮ মে ২০২৪

যেন মিনি পাকিস্তান-বিহারীরা ভোটার


প্রকাশিত: ৭:৪৬ পিএম, ২৭ এপ্রিল ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৭ বার

genevavote3বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা:  ঢাকায় আটকে পড়া পাকিস্তানি বা উর্দুভাষীদের এককভাবে সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল জেনেভা ক্যাম্প। কয়েক বিঘার এই জায়গায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বাস। জেনেভা ক্যাম্পের নিয়ম অনুযায়ী এখানকার প্রতিটি ঘরের আয়তন ৮ ফুট বাই ৮ ফুট। সময়ের সঙ্গে মানুষ বাড়ছে। তাই এই ঘরের ওপরই উঠছে নতুন ঘর। ক্যাম্পটির সরু গলি দিয়ে হাঁটলে সহজেই চোখে পড়ে কেমন করে ইট-কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পটি। এ ছাড়া একটু সামনে এগোতে থাকলেই চোখে পড়ে, ঘুপচি ঘরে সলমা-জরির কাজ চলছে। শব্দযন্ত্র থেকে ভেসে আসছে উর্দু গান। এটাই বিহারি পল্লি। এখানকার প্রতিটি দিন এমনই। তবে ঢাকা সিটি নির্বাচন ঘিরে এই পল্লিতে একধরনের জল্পনা-কল্পনা চলছে।

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের অবস্থান ঢাকার উত্তর সিটিতে। ক্যাম্পে ভোটের হাওয়া সম্পর্কে জানতে কথা হয় জেনেভা ক্যাম্পের বিহারিদের সংগঠন এনএলআরসির চেয়ারম্যান এস কে গোলাম জিলানীর সঙ্গে। তিনি জানান, আটকে পড়া পাকিস্তানি বা বিহারিদের ভোটাধিকার নিয়ে তারা কয়েক বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়েছেন। যাতে তাদের পক্ষে রায় আসে ২০০৮ সালে। সে সময়ই তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এখান থেকে ভোট দেন প্রায় ২৫০০ ভোটার। এবার শুধু জেনেভা ক্যাম্পেই ভোটার আছেন ১০ হাজারের বেশি। যারা মোহাম্মদপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার কে হবেন, তা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন। তিনি জানান, এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে আরও ৫টি ছোট বড় ক্যাম্প আছে। যেগুলোতে ভোটার আছেন আরও ৭-৮ হাজার। যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন।

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার নির্ধারণ করবেন বিহারিরা :
উত্তরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ৩৭ হাজারের একটু বেশি। যে ওয়ার্ডে রয়েছে দুটি বিহারি ক্যাম্প। যেগুলোতে ভোটার আছেন অন্তত ১২ হাজার। যারাই এবার মূলত নির্ধারণ করবেন, কে হবেন এই ওয়ার্ডের কমিশনার। কথা হলো, এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুর রহমান মিজানের সঙ্গে। তিনিও স্বীকার করেন, এবারের ভোটে তারাই হবেন মূল নিয়ামক। তাকে দেখা গেল কয়েকজন বিহারি কমিউনিটি লিডারকে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন। দিচ্ছেন বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিও। তিনি জানান, জেনেভা ক্যাম্পে স্কুল মাত্র একটা। যেখানে গাদাগাদি করে শিশুরা পড়াশোনা করে। তিনি নির্বাচিত হলে এই কমিউনিটির সদস্যদের জন্য নতুন করে বেশ কিছু কাজ করতে চান। বড় করতে চান স্কুলের পরিসর। নিশ্চিত করতে চান স্বাস্থ্যসেবা। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা মাহমুদা সানম বলেন, তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা পয়নিষ্কাশন। এখানে ১০৮ জন মানুষের জন্য ছোট্ট একটা টয়লেট বরাদ্দ। তাদের এ নিয়ে যে কী পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা শুধু তারাই জানেন। তিনি বলেন, যারা তাদের ন্যূনতম এই সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করবেন, তাকে নির্বাচিত করবেন বিহারি ক্যাম্পের ভোটাররা।

মিরপুরে ২৫০০০ ভোটার :
মিরপুর ১০, ১১ ও কালশীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিহারি ক্যাম্প আছে ৮-১০টি। সবকটি মিলিয়ে যেখানে ভোটার কমপক্ষে ২৫০০০ হাজার। ১১ নাম্বার ঢালের পাশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের অফিসে গেলেও পাওয়া যায় নির্বাচনী আমেজ। এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ক্যাম্পের চেয়ারম্যানসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা। তারাও এ নির্বাচন নিয়ে বেশ উত্তেজিত। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আছেন যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছেন। কালশীতে আগুনের ঘটনায় ১০ জন মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার সংকুচিত। তা সবাই জানে। এ ভোটের মাধ্যমে তারা প্রথমবারের মতো নাগরিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। যে সুযোগটি সবাই আনন্দের সঙ্গেই গ্রহণ করছেন।

মিরপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৭০ হাজার ভোটার। যার মধ্যে রয়েছে ১১ নম্বরের বড় বিহারি ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের ভোটারদের ওপর ভরসা করেই এবার নির্বাচনে কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটকে পড়া পাকিস্তানি বা বিহারি সাদাকাত খান। তিনি প্রথম কোনো ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশের সিটি বা যেকোনো ধরনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে কথা হয় তার সঙ্গে। সাদাকাতও তোলেন কালশীর ঘটনাটি। বলেন, ভোটাধিকার থাকার পরও তারা যে কতটা অসহায়, তা ওই ঘটনাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, আমরা আটকে পড়া পাকিস্তানি। আমাদের অধিকার সীমিত। একজন বাংলাদেশি ভোটার আর এই ক্যাম্পের ভোটার এক নয়। তার পরও বৃহত্তর এই গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখার জন্যই তার নির্বাচনে দাঁড়ানো। ভোট যদি সুষ্ঠু হয়, তাহলে জনরায় তার পক্ষে আসবে বলেই আশাবাদী সাদাকাত খান।