• বৃহস্পতিবার , ৯ মে ২০২৪

মানুষের ত্যাগ আর ভালোবাসার অনুপম কোরবানি


প্রকাশিত: ৩:৩৫ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৩ বার

মুমিত আল রশিদ :   প্রবাসী বাংলাদেশিরা ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আত্মশুদ্ধির অনন্য দৃষ্টান্ত ঈদুল আজহা। পবিত্র এই দিনে 0তেহরানের বাংলাদেশি কমিউনিটিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতো ঈদ উৎসবে মেতে ওঠেন। ঈদুল আজহার দিন তেহরানের ইউসুফাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের পঞ্চম তলাটি সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এবার ঈদের জামাতে হাজির হওয়ার জন্য প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি জড়ো হয়েছিলেন। এবারই প্রথম দূতাবাসের পক্ষ থেকে ঈদ জামাত পরবর্তী আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁইয়াইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁইয়া উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রবাসে সকলকে মিলেমিশে দেশ ও জনগণের সেবায় নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানান। আপ্যায়নের আগে দূতালয় প্রধান এ টি এম মোনেমুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রবাসীদের জন্য পাঠানো ঈদ শুভেচ্ছাবাণী পাঠ করে শোনান।

0000ঈদের নামাজের পর এখানে বসবাসরত বাংলাদেশি ভাইয়েরা কোরবানি দেওয়ার উচ্ছেদে দলবেঁধে তেহরান থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে কারাজের শাহরিয়ার গরুর ফার্মে ছুটে যান। যদিও কোরবানির মাংস দিয়ে ঈদের দিনের খাবার শুরু করার সুন্নত পালন করা হয়ে ওঠে না; তবুও দিন শেষে কোরবানির মাংস নিয়ে ঘরে ফিরতে পেরে তেহরানের প্রবাসীরা অপার আনন্দে মেতে ওঠেন।
এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, গরুকে যমটুপি পড়িয়ে কসাইখানায় নেওয়া হয়। হ্যালো তেহরানের বর্তমান সমন্বয়ক প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান ইনাম ভাই জানালেন, এখানে এত মানুষ কোরবানি দেন সেটা কারাজের গরুর হাটে না গেলে বুঝতে পারতাম না!

00বাবাদের হাত ধরে গরুর হাটে বাংলাদেশি শিশুরাইরানের ঈদুল আজহা উৎসবে বাংলাদেশের মতো অলিগলিতে গরু-খাসি চোখে পড়ে না। ইরানিদের যারা কোরবানি দেন তারা কসাইখানায় গিয়ে কোরবানি করে থাকেন। অনেকে কোরবানির টাকাটা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে থাকেন।

সরকারি ছুটি একদিন থাকায় আমাদের মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে। কারণ ঈদের আগে ও পরে যথারীতি কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। এবারের ঈদে ইরানে গতবারের হজে মিনায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হাজিদের নিয়ে আলোচনায় মুখর ছিল সর্বত্র। সৌদি আরবে ঘটে যাওয়া গতবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাস্তা-ঘাটে বড় বড় ফেস্টুন ও বিলবোর্ড চোখে পড়েছে। মসজিদে নামাজ পরবর্তী নিহত হাজিদের জন্য প্রার্থনা ও এবারের হজে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

000কোরবানির গরুকে যমটুপি পরিয়ে কসাইখানায় নেওয়া হচ্ছেএ ছাড়া ইরানে অধ্যয়নরত বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরাও নিজ উদ্যোগে কোরবানি দিয়েছেন। রাতে ছাত্রাবাসে ফিরে দেখি আমাদের সিরিয়ান বন্ধু আবু আদনান কোরবানির মাংস পাঠিয়ে দিয়েছেন। কোরবানি দেশ-কাল ভেদে মানুষের ত্যাগ আর ভালোবাসার অনুপম এক নিদর্শন এবং ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অপার এক দৃষ্টান্ত হিসেবেই বেঁচে আছে।

তেহরানে কর্মরত আরও একটি বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর ঈদ উদ্‌যাপনের কথা উল্লেখ না করলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করছি। যাদের শ্রম আর ঘামে আজকের বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিবার থেকে বছরের পর বছর দূরে থেকে প্রবাসে মিলেমিশে ঈদের আনন্দ উদ্‌যাপনে এদের উচ্ছ্বাস দেখে দারুণ আনন্দ লাগে। এদের কাছে গেলেই সত্যিকারের বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। কোনো ধরনের কপটতা বা ভণ্ডামির মুখোশ নেই। সহজ-সরল, প্রাণবন্ত, উচ্ছলতায় ভরপুর।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবদান যাদের হাতেঈদ উৎসব ছাড়া বাকি দিনগুলোতে ইরানিদের জীবনধারা, পারিবারিক ও বৈষয়িক বিষয়ে এরা পুরোপুরি মিশে যায়। এভাবেই ওরা হাজারো স্বপ্ন নিয়ে আলবোরজ আর যাগরোস পর্বতের মাঝখানের অসম্ভব সুন্দর ইরান নামক দেশটিতে বেঁচে থাকে।(লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে পিএইচডি গবেষক, তারবিয়্যাত মোদাররেস বিশ্ববিদ্যালয়, তেহরান, ইরান।
ইমেইল: mumit2020@gmail.com)