• বুধবার , ১ মে ২০২৪

গাজীপুর উত্তাল দিনভর সংঘর্ষ-পুলিশ সদস্যের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন


প্রকাশিত: ১২:৩০ এএম, ৯ নভেম্বর ২৩ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪ বার


স্টাফ রিপোর্টার : তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ইস্যুতে ফের উত্তপ্ত গাজীপুর। বুধবার বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নাওজোড় এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের এপিসি কারে এক বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য।

গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় বুধবার দুপুরের পর থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। তারা মহাসড়কে অবস্থান নেয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।শ্রমিকরা এ সময় মহাসড়কের দু’পাশের বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করেন। থানা ও শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাসন থানাধীন নাওজোড় এলাকায় আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে চলা এই সংঘর্ষ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছিল।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে একানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য প্রবীর, ফুয়াদ ও খোরশেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ফুয়াদের অবস্থা বেশি গুরুতর। তিনি ডান হাতের আঙ্গুল ও কব্জির নিচের অংশে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আশিকুল ও বিপুলকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্য

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এপিসি কারের ভেতরে পুলিশ সদস্যদের অসাবধানতায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা আহত হন। একজনের হাতের কব্জি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই বিস্ফোরণেই।পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, সফিপুর, মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন।

মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ নির্ধারণ করার পর তা প্রত্যাখ্যান করে বুধবার সকালে ফের আন্দোলনে নামে পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত হন। এরপর বেশ কয়েক ঘণ্টা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।
দুপুরের পর কোনাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আবার সংঘর্ষে জড়ান শ্রমিকরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায়ও পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হন।

সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাবের সমন্বয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শ্রমিকরা পিছু হটে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘বুধবার পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে মোট আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সকালে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন ও বিকেলে নাওজোড় এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন।বিকেলে যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি এপিসি কারে বিস্ফোরণেও আহত হওয়ার ঘটনা আছে। এখন শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে গেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে।