• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

ভূমধ্যসাগরে ডুবল নরসিংদীর অভাগারা-১৪ ফ্যামিলির ভাগ্য লুটেছে দালাল জাকির ও নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুর


প্রকাশিত: ১১:৫৮ পিএম, ১২ আগস্ট ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫ বার

নরসিংদী প্রতিনিধি : স্বপ্নের ইতালি যেতে চেয়েছিল ওরা ১৪ জন। এজন্য দালালের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল ওরা। কিন্তু ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবে ওদের ১৪ ফ্যামিলির স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গেছে। নিরীহ পরিবারগুলো স্বজনদের লাশও হয়ত কোনো দিন পাবেনা। পেয়েছে শুধু নিখোঁজের খবর!

সরেজমিনে জানা গেছে, আবারও দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার সময় নরসিংদীর ৭ তরুণ নিখোঁজ হয়েছে। এর আগে গত জুন মাসে নিখোঁজ হয়েছিল ৭ জন। তারা প্রত্যেকেই জেলার বেলাব উপজেলার বাসিন্দা। নিখোঁজের খবরে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।

আজ শনিবার ১২ আগস্ট নিখোঁজ হওয়া তরুণদের স্বজনেরা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে জুন মাসে একইভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর রায়পুরার একজনের মরদেহ উদ্ধার ও বেলাব উপজেলার ৭ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ তরুণরা হলেন, জেলার বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে কামাল হেসেন (৩৪),ভাটের চর গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশীদ রশিদের ছেলে মনির হোসেন(২২), একই এলাকার আ.মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া(২০) ও নিলক্ষিয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১)।

নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে দুই দালাল দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন ওই তরুণরা।

নিখোঁজ কামাল মিয়ার ছোট ভাই জামাল মিয়া জানায়, ৫ থেকে ৬ মাস আগে আমার ভাইকে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালির উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন গেমঘরে রেখে গত বুধবার (৯ আগস্ট) রাত ৮ টায় বোটে তুলে ইতালির পথে যাত্রা করে কিন্তু ৪০ মিনিট পর বোটটি ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে ২০ জন থেকে ১২ জন ফিরে আসলেও আটজন নিখোঁজ রয়ে যায়। এ তথ্য দালাল জাকির হোসেন স্থানীয় মিলন মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের জানায়। এর মধ্যে আমার ভাইও নিখোঁজ।

নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, আমার ভাই আট মাস আগে লিবিয়া গিয়েছিল ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে। কিন্তু সেখানে ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেয়নি। দুলালকান্দির দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আমার ভাইয়ের কোনো খবর পাচ্ছি না। আমরা আমার ভাইয়ের সন্ধান চাই।

রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার জানায়, আজ থেকে ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি বলেছে আমার জন্য দোয়া কইরো। আমরা এখন গেম ঘরে আছি, আগামী বুধবারে ডেঙ্গিতে তুলবে, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আর কোন যোগাযোগ করতে পারে নি।

এ বিষয়ে দুলালকান্দি গ্রামের বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মেম্বার জানায়,আমি খবর পেয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ফোন দিলে মোবাইল অন্য একজন রিসিভ করে আমাকে জানায়, জাকির হোসেনের অধিনে থাকা ২০ জনের থেকে ১২ জন উদ্ধার হলে ও আটজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে দালাল জাকির হোসেন ও শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।

এ বিষয়ে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.তানভীর আহমেদ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে এবং লোক মুখে শুনেছি। তবে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
ওদিকে বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, নিখোঁজের সংবাদ লোক মুখে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। নিখোঁজের বিষয় জানতে প্রবাসী ও বৈদেশি কর্মসংস্থানে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।এর আগে গত ২৪ জুন নৌপথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৭ জন নিখোঁজ ও রায়পুরা উপজেলার ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।