• শনিবার , ১১ মে ২০২৪

বিমানের লাভের গুড় যাচ্ছে শফিক-আশরাফের পেটে.. মুনা’র কব্জায় ১২০০ টিকিট


প্রকাশিত: ২:২৮ পিএম, ৩ জানুয়ারী ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৯ বার

Photo0430টিপু খন্দকার.ঢাকা:
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওমরা হজ টিকিটের লাভের গুড় যাচ্ছে শফিক-আশরাফের পেটে।সিন্ডিকেট এই চক্রটি বিএসপি সেলহীন মুনা ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সিকে বিশেষ বিনিময়ে বাড়তি সুবিধা দিয়ে তাদের ১২০০ ওমরা হজ টিকিট পাইয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। ট্রাভেল এজেন্টরা অভিযোগ করেছেন, মুনার লোকজন শফিক-আশরাফের সহযোগীতায় বিমানের মতিঝিল অফিসের মাধ্যমে বাড়তি ৭০ ডলার বেশী নিয়ে ওমরা হজ টিকিট বিক্রি করছে।এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি এর সত্যতা স্বীকার করে বিমানের উর্ধতণ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একাধিক ট্রাভেল এজেন্ট জাতিরকন্ঠকে জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি সিন্ডিকেট লুটেরা চক্র এবার গত ডিসেম্বর মাস থেকে ওমরা হজ টিকিট লুটেপুটে খাওয়া শুরু করেছে। এরাই বিমানের গত হজ মৌসুমে হজফ্লাইটের মোক্ষম সময়ের হজটিকিট লুটপাট করেছিল। ইতিমধ্যে এই চক্রটির কর্নধার বিএসপি সেলহীন মুনা ট্রাভেলস এর মালিক মি. হেলাল বিপুল সংখ্যক ওমরা হজ টিকিট বিক্রি করেছেন বাড়তি ৭০ ডলার বেশী নিয়ে।
এদিকে বিমানের শফিক-আশরাফ চক্রের চাতুরীতে ব্যবসায় টিকতে না পেরে ট্রাভেল এজেন্টরা তাদের সংগঠন আটাব-এ অভিযোগ করে। অভিযোগের ভিত্তিতে এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) বিমানের টপ এজেন্টদের নিয়ে পাঁচ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করে। আটাব সভাপতি ও সম্পাদকসহ গঠিত কমিটি সরেজমিনে বিমান মতিঝিল সেলস অফিসে গিয়ে এর সত্যতা পান। পরে তাঁরা বিমানের ডিজিএম সেলস শফিকের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে সকল ট্রাভেল এজেন্টকে টিকিট দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান।
কিন্তু চোরে শোনেনা ধর্মের কাহিনীর মত শফিক আশরাফও তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। উল্টো শফিক বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিনের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দাবি করে ট্রাভেল এজেন্টরা তার কিছুই করতে পারবেন না বলে হুমকি দেন। শফিক দম্ভোক্তি দেখিয়ে এও বলে, যান স্যারের কাছে গিয়া বলেন, আমি মুনারে টিকিট দিছি এবং আগামীতেও দিমু..।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানের মতিঝিল সেলস অফিসে ওমরা হজ টিকিট বানিজ্য নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটে চলেছে গত ২০ডিসেম্বর থেকে। ওই দিন থেকে মুনা ট্রাভেলস ওমরা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ৭০ ডলার বেশী নিচ্ছেন।
বিমানের নিবেদিত টপ এজেন্টরা অভিযোগ করেছেন, হজ টিকিট বানিজ্যের মত এবার ওমরা হজ টিকিট নিয়েও গোপন লেনদেন ব্যবসা করছে বিমানের শফিক-আশরাফ চক্র। এদের একজন বিমানের ডিজিএম সেলস এবং অপরজন সেলস প্রমোশন ম্যানেজার। চক্রটি বিমানের পরিচালক মার্কেটিংকেও তাদের কব্জায় নিতে সক্ষম হয়েছে।
গত হজ মৌসুমে এই চক্র আল ফাহাদ (বর্তমানে ডিফল্ট) নামের একটি ট্রাভেলসকে অবৈধভাবে হজ টিকিট দিয়ে নিজেদের সিন্ডিকেটে টিকিট রেখে পরস্পর লাভবান হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, এদের জালিয়াতি ধরতে পেরে ডাইনেস্টি ট্রাভেলস লিখিত অভিযোগ করে বিমান কর্তৃপক্ষকে। বিষয়টি তদন্ত করতে  কমিটি গঠন করা হলেও লুটেরা চক্র তা ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন।বিমানের মতিঝিল অফিসের এই ঘাপলা চক্রের সর্দার আশরাফ এবার তার শেষ দান মারছেন মুনা ট্রাভেলসকে দিয়ে। কারণ, আশরাফের চাকরীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মার্চ মাসে। তাই শেষ সময়ে তিনি লুটেপুটে খাওয়া দাওয়া শেষ করছেন বলে প্রকাশ্য দেখা যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, মুনাকে ব্যবসা করতে দিয়ে শফিক আশরাফ চক্র এবার মোটা টাকার অংকে লাভবান হবেন।
এদিকে আশরাফ-শফিকের শেল্টারে মুনা ট্রাভেলস প্রতি ফ্লাইটে ৫০টি সিট তাদের নামে ব্লক করে রেখেছেন। এ নিয়ে উত্তপ্ত অবস্থা সৃষ্ঠি হলে গত ২০ ডিসেম্বর এজেন্টরা বিমানের ডিজিএম সেলসকে ঘেরাও করে। এসময় সেখানে এয়ার ট্রিপ, ভার্সেটাইল, ডাইনেস্টি, কাজী এয়ার, স্টার ট্যুরস, ভ্যালেন্সিয়াসহ বিমানের টপ এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা অভিযোগ করেন, বিমান মুনাকে ২০ ডলার কম দামে টিকিট দিয়ে ওই টিকিট মুনার কাছ থেকে কেনাচ্ছে ৭০ ডলার বেশী দিয়ে। আর এই ব্যবসা হচ্ছে মতিঝিল বিমান অফিসের কাউন্টারেই।মুনার কারণে সাধারন ওমরা যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেনা।এ সম্পর্কে বিমানের ডিজিএম সেলস শফিক ও ম্যানেজার সেলস প্রমোশন আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে আটাব সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাতিরকন্ঠকে জানান, কোন নির্দিষ্ঠ এজেন্সির নামে সিট ব্লক করা অন্যায়, এটা ঠিক না।বিমানের উদ্দেশ্য হবে ওপেন ফর অল এজেন্সি। আমরা ইতিমধ্যে বিমান সেলস অফিসকে মৌখিকভাবে এর প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এবার আমরা লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে সিট ব্লক বন্ধ করতে বলব।
এদিকে এ সম্পর্কে মুনা ট্রাভেলসের মালিক মি. হেলাল জাতিরকন্ঠকে জানান, ওমরা হজ নিয়ে বিমান একটি সার্কুলার করে। ওই সার্কুলারের ভিত্তিতে আমি আবেদন করি। ওমরা হজ নিয়ে  বিমানের সঙ্গে আমার একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা আমাকে মাসে ৪০০ সিট দেয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমি বিমানকে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা এ্যাডভান্স করেছি। অথচ তারা এখন বলছে টিকিট দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। বিমানের কারণে আমি ইতিহাদের কাছে টিকিট পেয়েও নেইনি।
ওদিকে বিমানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনা ট্রাভেলসকে শফিক-আশরাফ বিশেষ সুবিধা দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। একাধিক টপ এজেন্ট অভিযোগ করে জানান, মুনা ট্রাভেলস যে সার্কুলারের কথা বলেছে সেটা বিমান তার জন্যই তৈরী করে তাঁকে বিশেষ সুবিধা দেয়।