• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

জেলে বসেই ছক্কা ইমরানের-ক্ষমতার মসনদ ডাকছে


প্রকাশিত: ২:৩৩ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৮ বার

 

 

লাবণ্য চৌধুরী : ফের ক্ষমতায় আসছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান! ভোটেরফল পরিসংখ্যান তাই বলছে। কারণ, সরকার গঠন করতে দরকার ১৩৪ আসন। সেখানে ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৭টি আসনে বেসরকারি ফলাফলে এগিয়ে আছেন।ইমরানের দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৩টি আসন নিয়ে যোগদান করলে ইমরানের সমর্থিত আসন দাড়ায় ১৩০ টিতে। ওদিকে ফল ঘোষনা হয়নি আর মাত্র ৬টি আসনের। সেখান থেকে আর মাত্র ৪টি আসন পেতেই পারেন ইমরান খান। সে হিসেবে ইমরান খানের পাল্লাটাই ভারী।

ওদিকে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তানি মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এগিয়ে ৭৫টি আসনে। ৫৪ আসনে বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তানি পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এই দুই দলের মোট আসন দারায় ১২৯টি। নওয়াজ শরীফ এর দল সরকার গঠন করতে চাইলে তাদেরকেও স্বতন্ত্রদের সহায়তা নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্ররাই হচ্ছে পাকিস্তানের সরকার গঠনের নিয়ামক শক্তি। আর এই স্বতন্ত্ররাই হচ্ছে ইমরানের একনিষ্ঠ সমর্থক। সুতরাং ফের ক্ষমতার মসনদ ডাকছে ইমরান খানকে।

নির্বাচনের ফল নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই এ নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কারাগারে বসেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি এমন দাবি করেন। ইমরান খান বলেন, সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বনের পরও জনগণ ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দিয়েছে। আমরা সব সময়ই বলে আসছি, যার সময় এসে গেছে তাকে কোনো শক্তিই প্রতিহত করতে পারবে না।

সেই সঙ্গে ইমরান খানের দল পিটিআই জানিয়েছে, বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সঙ্গে জোট গঠন করবে না তারা। শুক্রবার নির্বাচনে ভোট গণনার মধ্যেই এ ঘোষণা দেন পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান। তিনি বলেন, পিটিআই সংসদে থাকবে এবং তার ভূমিকা পালন করবে।

তিনি জানান, পিএমএল–এন ও পিপিপির সঙ্গে তারা কোন যোগাযোগ রাখছে না। ১৫০টি আসনে পিটিআই জয় পেতে যাচ্ছে। পিটিআই কেন্দ্রে এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠন করব। খাইবার পাখতুনখোয়ায় পিটিআই-এর জয় নিশ্চিত এবং সেখানেও সরকার গঠন করব আমরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সব পিটিআই সমর্থিত। তারা দলীয় নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন না।

যাহোক, নানা নাটকীয়তা আর দফায় দফায় সংঘর্ষ-সহিংসতার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় ভোটগ্রহণ শেষ হলেও ফলাফল ঘোষণায় অস্বাভাবিক বিলম্ব দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫৯টিরও বেশি আসনে ভোট গণনা শেষে হয়েছে। এতে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) -সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৭টি আসনে বেসরকারি ফলাফলে এগিয়ে আছেন। নওয়াজ শরিফের পাকিস্তানি মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এগিয়ে ৭৫টি আসনে। ৫৪ আসনে বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তানি পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৩টি আসন নিশ্চিত করেছে।

দেশটির গণমাধ্যম বলেছে, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে মোট ২৬৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ২৫৯টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এখনও ৬টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। আর স্থগিত করা হয়েছে একটি আসনের নির্বাচন।

নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৩৩ বছরের জেল সাজা পায়। এর পরেও ইমরান খান ও তার দল পিটিআই এই নির্বাচনী প্রতীক ছাড়াই এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নেন এবং বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় তারাই এগিয়ে রয়েছেন।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অভিযোগ, সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তানি মুসলিম লীগ। তারা নানাভাবে এ নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের আগের দিন দেশটিতে দফায় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৮ জন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নির্বাচন বানচালের জন্য এসব সহিংসতা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীনরা।

এছাড়া বৃহস্পতিবার ভোটের দিন দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং বেলুচিস্তানে আলাদা বোমা হামলায় ছয় নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে কে বাবা কারা এ হামলা চালিয়েছে তা জানা যায়নি।

এদিকে ভোটের ফলাফল দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে বিতর্কের মুখে পড়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে প্রধান দুই দল একে অপরকে দোষারোপ করছে। গণমাধ্যমগুলো বলছে, এবার কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে চাইলে তাদের ১৩৪টি আসনে জিততে হবে।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানে এবার কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে। ফলে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। ২৪ কোটি মুসলমানের এই দেশটির ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী এই চক্র ভাঙতে পারবে কি না তা ভবিষ্যৎ বলবে।