• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আন্দোলনের বল তারেকের কোর্টে-কি করবে বিএনপি!


প্রকাশিত: ১১:২৪ পিএম, ১১ নভেম্বর ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩০ বার

 


বিশেষ প্রতিনিধি : রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সিইসি সংসদ নির্বাচনের তফসিল শিগগির ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানানোর পর নড়েচড়ে বসছেন বিএনপি। নতুন কি কর্মসূচি নেয়া যায় তা নিয়ে তারা ভাবছে। চলমান অবরোধ চলবে নাকি আরো কিছু যোগ হবে তা কেউ খোলাসা করছে না। তবে সবাই তাকিয়ে আছে তারেক রহমানের নয়া নির্দেশনার ওপর। একইভাবে পশ্চিমারা কি প্রতিক্রিয়া জানায় সেটাও তারা দেখছে। তবে বড় অপেক্ষা হচ্ছে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি নির্দেশনা দেন সেটাই হচ্ছে বিএনপির আসল নির্দেশনা।

এছাড়াও আন্দোলনরত অন্য দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও গোপনে আলোচনা চালাচ্ছে বিএনপি আত্মগোপনে থাকা নেতারা। ফলে সঙ্গত কারণেই এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি বিএনপির নেতারা।নির্দেশনা আসলে তা কিভাবে মোকাবেলা করবে তাও ভাবছে বিএনপি নেতারা।

বিএনপি নেতাদের ধারণা, বিরোধী দলগুলো যখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে, তার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকেও। এখন তারা সেখানকার নির্দেশনারও অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা।

ওদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল দ্রুতই প্রকাশ করা হবে- বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এমন ঘোষণা দেয়ার পর বিরোধী দল বিএনপিও তাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি কীভাবে আরও জোরদার করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।জানা গেছে, বিএনপির সাথে এতদিন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো ছাড়াও সরকার বিরোধী অবস্থানে আছে- এমন সব দলকে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যেভাবেই হোক আন্দোলনের ‘এক ছাতার নীচে’ আনার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে বিএনপিসহ এসব দল যার যার অবস্থান থেকে একযোগে একই কর্মসূচি দিয়ে ‘আরও বড় ধরনের’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে বলে বিএনপির একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন।তবে সেই ‘বড় ধরনের’ কর্মসূচি বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা দলটির নেতারা কেউ এখনি দিতে রাজী হননি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আলাদা কোন কর্মসূচি দেয়া হবে কি না বা চলমান কর্মসূচির সাথে আরও কিছু যোগ করা হবে কি না – এসব বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা এখনো কিছু জানাননি।আমি শুধু এটুকু বলতে পারি এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। তাই সরকারের পদত্যাগের জন্য আমাদের এক দফার আন্দোলন চলছে এবং চূড়ান্ত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলেন তিনি ।

গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি।রোববার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত তারা চতুর্থ দফার অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ওই দিনই আবার নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। সে কারণেই এখন আলোচনায় আসছে যে নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে বিএনপি এখনকার মতো করে কর্মসূচি পালন করে যাবে, না কি বাড়তি কোন কর্মসূচির দিকেও তারা অগ্রসর হবে। আর অগ্রসর হলেও সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়েও নানা মত তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।

বিএনপি নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই বিএনপির সাথে এতদিন ধরে আন্দোলনে থাকা এবং এর বাইরেও সরকার বিরোধী যেসব দল আছে-সবাইকে নিয়ে একযোগে বড় আন্দোলনের কথা ভাবছে তারা। কারণ, বিএনপি গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বেশ কিছু দলের সাথে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। গত ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে অনেক দিন ধরে বিএনপির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির কর্মসূচির দিনে একই কর্মসূচি পালন করছে।

আবার চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে- এমন কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। যদিও তারা বিএনপির সঙ্গে মিলে আন্দোলন করবে কি না এমন কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

তবে ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকায় গত সপ্তাহের মহাসমাবেশে সরকারকে দশই নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, সরকার দাবি না মানলে আন্দোলনরত বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।দলটি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে ‘একতরফা নির্বাচনের’ চেষ্টার প্রতিবাদে রোববার দুপুরে তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ওদিকে শেষ পর্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার বিরোধী অবস্থান নেয়া সব দলকে এক জায়গায় আনা না গেলে কি হবে তা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা বরছেন, নানা ধরণের বিশ্লেষণ চলছে দলের অভ্যন্তরে। অবরোধ অব্যাহত থাকবে না কি অন্য কোন কর্মসূচি দেয়া হবে, অথবা অবরোধ বহাল রেখেই আরও কর্মসূচি দেয়া হবে – নানা বিকল্প নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। বিএনপির কেউ কেউ ধারণা দিয়েছেন অবরোধ বহাল রেখে ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচির পালন করা যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা আছে।

এদের যুক্তি নির্বাচন নিয়ে গত এক বছরেরও বেশী সময় ধরে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে।এমনকি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করছে, এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দেশটি।এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের দিক থেকেও নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য বিবৃতি আসছে।

কয়েক নেতা ধারণা দিয়েছেন যে দলের একটি বড় অংশ মনে করছে, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ আরও জোরালো হবে। সেই সাথে বিএনপিও আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করলে সেটি দেশজুড়ে তাদের কর্মী সমর্থকদের আরও চাঙ্গা করে তুলবে।

ইসি জানায়, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী উনত্রিশে জানুয়ারি। ফলে ওই দিনের আগের নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্রুতই তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।বিএনপি বলে আসছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেই মনে করে তারা এবং এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছে।অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরিষ্কার জানিয়েছে যে, নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে এবং এর বাইরে অন্য কিছু তারাও মানবে না।