• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

এন্টি নৌকার ভোট চায় জাপা


প্রকাশিত: ১২:১৫ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৮ বার

জাতীয় পার্টি না ঘরকা না ঘাটকা!

 

 

শফিক রহমান : ভোটের মাঠে সমঝোতা যাই হোক এবার এন্টি আওয়ামী লীগ বা এন্টি নৌকার ভোট টার্গেট করছে জাতীয় পার্টি। এলক্ষ্যে তারা দু’নৌকায় পা দেয়ার অবস্থানে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী রওশন এরশাদ কে ভোট থেকে বের করে দেয়ায় কৌশল ক্ষমতাসীন মহল খুব খুশী নন জাতীয় পার্টির প্রতি। এছাড়াও জাতীয় পার্টির অন্যতম আরেক প্রভাবশালী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকেও কৌশলে বিতাড়িত করাটাও ভাল চোখে নেয়নি ক্ষমতাসীন মহল।

কিছুদিন আগে জাপা চেয়ারম্যান বলেছিলেন অন্যের ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হবেন না! অথচ এখন আসন সমঝোতার চেষ্ঠা তদবির করছেন বলে খবর সর্বত্র চাউর হযে আছে। এসব নিয়ে জাপা চেয়ারম্যান কোনো কথাও বলছেন না। রাজনৈতিক অঙ্গণে বলাবলি হচ্ছে, মানুষ বলছে-এখন দেখছি শুধু সিঁড়িই না তারা গরমে হাওয়ায় শার্ট, শীতের কাঁথাও বটে!

অভিজ্ঞ মহল বলছেন, ভোটের মাঠে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে জাতীয় পার্টি নিজেদের অবস্থান না ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ বহুল প্রচলিত একটি বাংলা প্রবাদ এর মতো যায়গায় পৌচেছেন।
প্রবাদটি ভারতে বহুল ব্যবহৃত। হিন্দিতে ধোবি কা কুত্তা ন ঘর কা ন ঘট কা- থেকে হিন্দি ন ঘরকা ন ঘটকা হয়ে বাংলায় এসে না ঘরকা না ঘাটকা রূপে স্থিতি পেয়েছে। হিন্দি মূল প্রবাদে বর্ণিত কুত্তা, কুকুর ইঙ্গিত করলেও প্রবাদটির আসল উৎস-কারণ কুতা। কুতা হিন্দি শব্দ। গাছের গুঁড়ি কেটে বানানো যে পাটাতনের ওপর ধোপারা একসময় আছড়ে আছড়ে কাপড় ধৌত করত সেটাকে হিন্দি ভাষায় কুতা বলা হয়। ধোপাদের জন্য কুতা একটি প্রয়োজনীয় বস্তু। এখন শানবাঁধানো ঘাটের যুগে কুতার কদর বা ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক কমে গেলেও এর ব্যবহার অনেক জায়গায় এখনো দেখা যায়।

কুতা ঘরে রাখার জিনিস নয়, কারণ ঘরে এর কোনো কাজ নেই। কুতার সব কাজ ঘাটে। কাপড় কাচার কাজের জন্য ঘাটই তার উপযুক্ত স্থান। তাই কুতাকে ঘাটে রেখে আসা উচিত। কিন্তু চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে কুতাকে ঘাটে রেখে আসা যায় না। কাজ শেষে প্রতিদিন অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঘরে নিয়ে আসতে হতো।পরদিন আবার ঘাটে নিয়ে যেতে হতো, আবার নিয়ে আসতে হতো কাজ শেষে।বেচারা কুতা ঘরেও থাকতে পারত না, ঘাটেও থাকতে পারত না। অর্থাৎ, কুতা এমন একটি জিনিস যাকে স্থায়ীভাবে ঘরে রাখা যায় না, ঘাটেও রাখা যায় না— আবার ফেলেও দেওয়া যায় না। কুতা এবং কুতার প্রতি মানুষের এমন ব্যবহার থেকে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ প্রবাদের উদ্ভব।

সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাকে ঘরে স্থান দেওয়া যায় না, আবার ঘরের বাইরেও রাখা যায় না. অর্থাৎ যাকে কাছেও রাখা যায় না আবার সম্পূর্ণভাবে দূর করেও দেওয়া যায় না— সেসব মানুষকে প্রকাশের জন্য ধোপার কুতাকে উদাহরণে এনে হিন্দিতে বলা হয় ‘ন ঘর কা, ন ঘট কা’। বাংলায় যা ‘না ঘরকা না ঘাটকা’।

যাহোক, ভোট নিয়ে নানা শংকার কথা জানিয়ে আসছিল জাতীয় পার্টি।
কিন্তু শেষমেষ তারা ভোটে আসলেও আবার আসন নিয়ে তদবির শুরু করেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। অথচ কদিন আগেও তারা বলে আসছিল এককভাবে ভোট করে তারা সরকার গঠন করবে। এরি মধ্যে তাদের সেই কল্পনা হঠাৎ চুপসে গেল কেন?

যাহোক জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলছেন , এবার তারা অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোটের প্রত্যাশা করছেন। এনিয়ে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভোটের সমীকরণ সহজভাবে মিলছে না। কারণ, অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন কি না, এখন তা নিয়েই নাকি সংশয় রয়েছে তাঁদের।

এর জের ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে জাতীয় পার্টির দর-কষাকষি চালাচ্ছে। এ বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠকেরও পরও দুই দল চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। মূলত জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ কয়টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবে, তা নিয়েই দেন দরবার।মতপার্থক্যের এমন তথ্য আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টি প্রথমে ৫৫ থেকে বর্তমানে ৪৪টি আসনে তাদের প্রার্থীকে জয়ী করতে আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চায়। এ আসনগুলোতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও প্রত্যাহার চায় জাতীয় পার্টি। কিন্তু আওয়ামী লীগ চাচ্ছে ওই আসনগুলোতে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার না করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হোক। তবে জাতীয় পার্টির একটি প্রভাবশালী সূত্র বলেছে এবার আওয়ামী লীগ ১০ থেকে ১৫টির বেশী আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে না।

এতেই সমস্যা বাঁধছে। কিছুতেই রাজি হচ্ছে না জাতীয় পার্টি। এই জটিল সমস্যার আবর্তে দুই দলের সমঝোতা আটকে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত দুই দল নির্বাচনী কৌশলে একমত হতে পারেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, আসন সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করছেন। এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে।

গত এক সপ্তাহে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল একাধিকবার বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। আওয়ামী লীগের নেতারা জাতীয় পার্টিকে সারা দেশে সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরামর্শ দেন।

গত এক সপ্তাহে জাতীয় পার্টির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা। এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতায় কেন দেরি হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। একেকটা দলের একেক ধরনের চাওয়া-পাওয়া থাকে। তারা তাদের বাস্তবতা জানাচ্ছে, আমরা আমাদের কথা জানাচ্ছি। শেষ কথা হলো, আমরা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমও সম্প্রতি জাতীয় পার্টির সঙ্গে একাধিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এখনই বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। আলোচনা চলছে। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাড়ায়।শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। নির্বাচনের আগে আসন বণ্টন ইস্যুতেও এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এমন আভাস দিয়ে জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আসলে সবকিছুই তো এখন গোপনীয়। সিনিয়র নেতারা আলোচনা করতে যান আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কী হয় না হয় সেসব কিছু আমাদের জানান না।

একটি সূত্রের দাবি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ভাইস চেয়ারম্যান শেরীফা কাদেরসহ ২৫টি আসন নিরংকুশ করতে চায়। এগুলো আসনে তারা নৌকার প্রার্থী চায় না। এমনকি স্বতন্ত্রও চায় না।

জাতীয় পার্টির এসব আসন হচ্ছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা ও ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ (রংপুর-১), জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এ কে মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১), প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রশীদ সরকার (গাইবান্ধা-২), কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাপার সাবেক নেতা টি আই ফজলে রাব্বীর ছেলে মাইনুর রাব্বী চৌধুরী (গাইবান্ধা-৩), চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. তোফাজ্জল হোসেন (নওগাঁ-২), নাটোর জেলা সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মৃধা (নাটোর-৪), সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম ঝন্টু (সিরাজগঞ্জ-২), খুলনা জেলা সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম মধু (খুলনা-৬), প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত (সাতক্ষীরা-১), সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি মো. আশরাফুজ্জামান আশু (সাতক্ষীরা-২),
পটুয়াখালী-১ আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ, পিরোজপুর-৩ আসনে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাশরেকুল আজম রবি, টাঙ্গাইল-৫ আসনে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, টাঙ্গাইল-৭ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির, জামালপুর-২ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, জামালপুর-৫ আসনে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খান, শেরপুর-১ আসনে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হক মনি, নেত্রকোনা-৩ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, হবিগঞ্জ-২ আসনে দলের এনজিওবিষয়ক সম্পাদক শংকর পাল, কুমিল্লা-১ আসনে যুগ্ম মহাসচিব আমির হোসেন ভূঁইয়া, কুমিল্লা-৮ আসনে জাতীয় ওলামা পার্টির সভাপতি এইচ এন এন ইরফান, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে নোয়াখালী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠুর আসন উল্লেখযোগ্য।