• বৃহস্পতিবার , ৯ মে ২০২৪

দুদকের হিসাব চাওয়ার পর হঠাৎ ধনকুবের প্রিন্স থেকে ফকিরি হাল মুসা বিন শমসের?


প্রকাশিত: ১:৫১ এএম, ২১ মে ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৯৯ বার

musa-www.jatirkhantha.com.bdঅমিত হাবিব.ঢাকা: দুদকের হিসাব চাওয়ার পর হঠাৎ ধনকুবের প্রিন্স থেকে ফকিরি হাল মুসা বিন শমসের?ব্যবসায়ী মূসা বিন শমসের প্রিন্স বলে খ্যাত। তার আয়কর ফাইলে উল্লেখ করা সম্পদের হিসাব ও পরিমাণ দেখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)এর কর্মকর্তারা বিস্মিত। তারা তার আয়করের ফাইলের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন। সেখানে তিনি যে তথ্য দিয়েছে তা দুদক বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি তার সম্পদের ব্যাপারে দুদককে সঠিক ও যথাযথ তথ্য না দেওয়ায় ও আয়কর ফাইলে এত কম সম্পদের হিসাব দেওয়ায় মূল ঘটনা উদঘাটনে তারা নামে। সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে দুদক। দুদক তার ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের আয়করের তথ্য পর্যালোচনায় জানতে পারেন, মূসা বছরে আয় করেন ছয় লাখ টাকা। যা তার বাৎসরিprince-moosa-2ক বেতন। বছরে বাড়ি ভাড়া পান ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০ হাজার টাকা। তিনি বাড়ি ভাড়া পেলেও থাকেন তার স্ত্রীর গুলশানের বাড়িতে। বাড়ি ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা তিনি খাওয়ার পেছনে খরচ করেন। তার নিজের নামে দেশে বিদেশে কোন বাড়ি, গাড়ি নেই। যে গাড়িতে চড়েন ওই গাড়িটিও তার স্ত্রীর বলে উল্লেখ করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, মূসা রাজস্ব বোর্ডের ৭৪ নম্বর কর অঞ্চলের একজন করদাতা। তার আয়কর ফাইল নম্বর পুরাতন ২৬৭ ১০০ ২৪৮৭ আর নতুন নম্বর ৩২৪০৯৭২৪৬৬৯৩। তিনি তার চাকরি দাতা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে উল্লেখ করেছেন ড্যাটকো (প্রা.) লিমিডেট কোম্পানি। তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা।
mmm--3
তিনি তার জš§ তারিখ লিখেছেন ১৯৫৪ সালের ১৫ অক্টোবর। বর্তমান ঠিকানা বনানীর আই ব্লকের এক নম্বর রোডের ৫৭ নম্বর বাড়ি। স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে ব্যবহার করেছেন গুলশানের ৮৪ নম্বর রোডের একটি বাড়ি। যা তার নামে নয় স্ত্রীর নামে। দুদক জানতে পেরেছে, ওই বাড়ি এখন আবার শান্তা প্রপার্টিজ নামের একটি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে হাইরাইজ ভবন করার জন্য। আর এই জন্য শান্তা প্রপার্টিজ তার স্ত্রীকে সাইনিং মানি দিয়েছে ২০ কোটি টাকা।

মূসা তার ফাইলে দেখান, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে মোট আয় নয় লাখ টাকা। এরমধ্যে তার করযোগ্য মোট আয় ছয় লাখ টাকা। কর রেয়াতমুক্ত আয় তিন লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আয়কর দিয়েছেন ৪২ হাজার টাকা। এরমধ্যে অগ্রিম দিয়েছেন ২০ হাজার টাকা।

ড্যাটকো (প্রা.) লি. এর তিনি ৩৫০টি শেয়ারের মালিক। যার মূল্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার ফার্নিচার রয়েছে ৬৫ হাজার টাকার ও ইলেকট্রনিক্স জিনিস রয়েছে ৬০ হাজার টাকার। এই অর্থ বছরে তার হাতে মোট নগদ রয়েছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৬ টাকা। ব্যাংকে তার কোন টাকা জমা নেই। এছাড়াও তার অন্য কোন জমা আছে কিনা সেখানে কোন কিছুই উল্লেখ করেননি। ঘরটি ফাঁকা রেখেছেন। তার কোন গহনার কথাও তিনি এবার উল্লেখ করেননি।

তিনি আয়কর ফাইলে উল্লেখ করেছেন, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে তার সম্পদ ছিল ৭৪ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৯ টাকা। যার পুরোটাই দেনা। এরপর চলতি বছরের মোট আয় দিয়ে এর পরিমাণ ৯১ লাখ ২ হাজার টাকা। আর তার আয়ের চেয়ে দেনা বেশি। ৯১ হাজার ৩ হাজার টাকা। তিনি তার বছরে ১২ লাখ টাকা খরচ দেখান।

তার আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হলেও এর উৎস বলেননি। তবে তার স্ত্রী ও পুত্রদের উপর চাপিয়েছেন। ১২ লাখ টাকার খরচের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খাবার খান, কর দেন ৪৬ হাজার টাকা। বাড়িতে থাকার কোন খরচ নেই, স্ত্রী বহন করেন। গাড়িতেও তার কোন খরচ নেই তার স্ত্রীর গাড়িতে চড়েন। বাসার বিদ্যুৎ বিল দেন ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭২৩ টাকা। পানির বিল দেন তার স্ত্রী, গ্যাসের বিলও তার স্ত্রী দেন। বাসার টেলিফোনের বিল দেন তিনি ২৫ হাজার ১২৪ টাকা। এছাড়াও তার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খরচ ১ লাখ ৮ হাজার ১৫৩ টাকা। তার উপর কারো কোন ভরন পোষণের দায় নেয়নি। তিনি তাদের জন্য কোন খরচও করেন না। কেবল তাই নয় ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে তার বেতন থেকে আয় ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কর দেন ২৬ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া ২ লাখ ১৬ হাজার ও চিকিৎসা ব্যয় ২৪ হাজার টাকা।

দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি স্ত্রীর পেছনে একটি টাকাও ব্যয় করেন না। ছেলে মেয়ে ও তাদের পরিবারের জন্য কোন অর্থ খরচ করেন না এটা রহস্যজনক। যিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক দাবি করেন এর কোন প্রমাণ এখনও নেই। দুদক এখন দেখতে চায় তিনি আসলে কত সম্পদের মালিক। আর তার স্ত্রী কত। আর তিনি যে সব টাকা ও সম্পদের কথা দাবি করেন তা আসলে আছে কি নেই।

নাকি পুরোটাই তার স্টান্টবাজি সেটাও দেখতে চাইছে। তার নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন ত্রিশ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ ফোর্স, তাদের কোন খরচও তিনি বহন করেন না। এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে তার এই সব বাহিনীর খরচ কে বা কারা বহন করেন। তার বিদেশে সফর, সেখানে থাকা খাওয়ার খরচ কোথা থেকে আসে।

তিনি প্রিন্স বলে খ্যাত। তার সাত বিলিয়ন ডলার সুইস ব্যাংকে আটকে আছে বলেও দাবি করেন। ওই টাকার কোন ঘোষণা নেই। যিনি এত টাকার মালিক তিনি কেমন করে এত কম টাকার আয়কর দিচ্ছেন সেটাও দেখা হবে বলে জানায় ওই সূত্র। তাছাড়া তিনি দুদকের কাছে সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলারের কথা জানিয়েছেন ওই টাকা তিনি কেমন করে আয় করেছেন ও জমা রেখেছেন। সেটা কোন হিসাবে ওই হিসাবের বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। আর এই জন্য তার কাছে সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়েছে। ওই হিসাব তিনি দিলেই বোঝা যাবে তার আসলে কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তিনি কি ঘোষণা দেন। আসলে তার নামে সুইস ব্যাংকে কোন হিসাব আছে নাকি পুরোটাই প্রপাগান্ডা।

দুদক জানতে পেরেছে, সাভারে তার নামে ১২০০ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমিরও কোন বিবরণ তার আয়কর হিসাবে নেই। ওই জমি তিনি কত টাকায় কিনেছেন সেটাও দেখা হচ্ছে। এছাড়াও তার ব্যাপারে দুদকের কাছে যে সব তথ্য রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার পাঠানো নোটিশে তাকে সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এখন দেখতে হবে তিনি কি করেন। তার স্ত্রী ও সন্তানদের হিসাবও তাকে লিখতে হবে আমাদের প্রেসক্রাইব ফর্মে। সেটা না লেখার কোন সুযোগ নেই।

এদিকে মুসার সম্পদ নিয়ে এখনও রহস্য না কাটায় ও তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়ায় ও তার নামে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আসায় সেটাও বের করার চেষ্টা করছেন। তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব নেওয়ার জন্য কৌশল হিসাবে তার ছোট ছেলের শ্বশুড় এর সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। মুসা বিন শমসেরের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। অনুসন্ধান চলছে। তার ও টিপুর সম্পদেরও অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ।

দুদক সূত্র জানায়, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখী টেলিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) টিপু আলমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাকে তার সকল প্রকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দুদকে দাখিল করতে হবে। সোমবার টিপুর তেজগাঁওয়ের বাসার ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠায় দুদক। দুদকের নোটিশটি টিপু গ্রহণ করেছেন। দুদক সূত্র জানায়, মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে টিপুর নাম আসে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। অনুসন্ধানে মুসা বিন শমসের, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমার সঙ্গে ব্যবসায়ী টিপু আলমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় অনুসন্ধানেরই কারণেই তার সম্পদের হিসাবও খতিয়ে দেখতে চাইছে দুদক।