• বৃহস্পতিবার , ১৬ মে ২০২৪

দুঃস্বপ্নের যাত্রায় পড়ছেন মি. ফিজ!


প্রকাশিত: ২:৫৪ এএম, ১ আগস্ট ১৬ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫১ বার

 

আসমা খন্দকার   :    দুঃস্বপ্নের যাত্রায় পড়ছেন মি. ফিজ। কাঁধের চোটের অস্ত্রপচার করতেই হবে 99তাঁকে। অপারেশন থেকে সেরে উঠতে মি. ফিজের লেগে যাবে প্রায় ৬/৭ মাস্।এ যেন দীর্ঘ লম্বা মনোকষ্ঠ?কে দেবে কাটার জাদুকরকে স্বান্তনা?

মি.ফিজ মাশরাফি বিন মুর্তজাকে কাল দুবার ফোন করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। মাশরাফি ফোন ধরতে পারেননি একবারও। ‘দেখি, আমিই রাতে একবার ওকে ফোন করব…’—সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলছিলেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

77ফোন ধরতে না পারলেও মাশরাফি জানেন, এ সময় মুস্তাফিজ কেন ইংল্যান্ড থেকে ফোন করেছেন। তিনি নিজে বহুবার যে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে গেছেন, সেটি যে এখন চোখ রাঙাচ্ছে মুস্তাফিজকেও! কাঁধের অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা পেসার খেলা থেকে ছিটকে পড়েছেন লম্বা সময়ের জন্য।

চিকিৎসকেরা হয়তো ছুরি-কাঁচি চালিয়ে তাঁর বাঁ কাঁধকে আগের মতো সচল করে দেবেন, কিন্তু এই অমানিশায় মন ঠিক রাখার সবচেয়ে বড় ‘ডাক্তার’ যে মাশরাফিই! অগ্রজ এই পেসারের কাছ থেকে আসন্ন ‘যুদ্ধ’ জয়েরই অনুপ্রেরণা নিতে চান তরুণ মুস্তাফিজ।

44ইউনিভার্সিটি অব গ্রিনউইচের শল্যবিদ টনি কোচারকে দেখানোর পর মুস্তাফিজের রিপোর্টগুলো পাঠানো হয়েছে ম্যানচেস্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেনার্ড ফাঙ্ক ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ হয়ের কাছে। সবার মতামত পাওয়ার পর কালকের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে অস্ত্রোপচার লন্ডন, ম্যানচেস্টার নাকি অস্ট্রেলিয়ায় করানো হবে।

‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’-এর মতোই শুরু মুস্তাফিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কিন্তু এক বছরে দুটি টেস্ট, ৯টি ওয়ানডে আর ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেই55 যে তিনি এমন দুঃস্বপ্নে ডুবে যাবেন, সেটা কে ভেবেছিল!

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সাফল্য আর চোট হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। গত বছর জিম্বাবুয়ে সিরিজে কাঁধের চোট দিয়ে শুরু। এরপর পড়লেন পাঁজরের চোটে। আইপিএল থেকে হ্যামস্ট্রিং ও অ্যাঙ্কেলে সামান্য সমস্যা নিয়ে ফেরা মুস্তাফিজ সুস্থ হয়ে ইংল্যান্ডে গেলেন সাসেক্সে খেলতে।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেট নিয়ে তাক লাগানো শুরু সেখানেও। কিন্তু পরের ম্যাচেই আবারও কাঁধের চোট, যা কিনা পাঁচ-ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে তাঁকে। অক্টোবরে ইংল্যান্ড সিরিজ হলে তাতে মুস্তাফিজের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে তাঁকে পাওয়া যায় কি না, শঙ্কা তা নিয়েও।

পেসারদের চোট নিয়েই চলতে হয়। তবে মুস্তাফিজের ব্যাপারটা একটু ব্যতিক্রমী। মাত্র এক বছরের মধ্যেই দেখে ফেলেছেন মুদ্রার দুই পিঠ। সাফল্যের চূড়ায় যেমন উঠেছেন, তেমনি সবচেয়ে কঠিন দুঃস্বপ্নের দেখাও পেয়ে গেছেন এর মধ্যেই। মাঠে খেলাটুকু ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্য কোনো কিছুর সঙ্গেই এখনো পুরোপুরি মানিয়ে উঠতে পারেননি সাতক্ষীরার এই তরুণ।

পরিবার-বিচ্ছিন্নতা, ভিনদেশি খাবার, ভিনদেশি ভাষা আর সংস্কৃতি, সংবাদ সম্মেলন—এসবের কোনোটাতেই পুরোপুরি অভ্যস্ত নন। এর মধ্যেই কিনা তাঁকে দৌড়াতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে, ব্রিটিশ চিকিৎসককে বোঝাতে হচ্ছে কাঁধের ব্যথা কতটা তীব্র। ক্রিকেট খেলার বাইরে যাঁর অনেক কিছুই অজানা, সেই মুস্তাফিজ কীভাবে পারবেন এই দুঃস্বপ্নকে জয় করতে?

কাল রাতে কথা হয়ে থাকলে তাঁকে সেটারই টিপস দিয়ে থাকবেন সাতবার ছুরি-কাঁচির নিচ থেকে মাঠে ফেরা মাশরাফি। মুস্তাফিজের এই মুহূর্তে কেমন লাগছে, সেটা অনুমান করতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘একজন খেলোয়াড়ের জন্য এটা খুবই কঠিন পরিস্থিতি। খুব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এ রকম সময়ে।’

অবশ্য মুস্তাফিজের প্রতি সবার যে রকম ভালোবাসা আর সমর্থন; প্রতিকূল সময়কে তিনি জয় করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস মাশরাফির, ‘মুস্তাফিজের খুব বেশি সমস্যা হবে না। কারণ সে কখনো আড়ালে হারিয়ে যাবে না। সবাই তাঁর ফেরার অপেক্ষায় থাকবে। বিসিবি, জাতীয় দল, মিডিয়া, সমর্থক—সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে। এসবে সে একটা মানসিক সমর্থন পাবে, যেটা এ মুহূর্তে খুব বেশি দরকার।’

মুস্তাফিজ ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময়ই মাশরাফির মনের মধ্যে একটা খচখচানি ছিল। অনেকে ইংলিশ কন্ডিশনে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য হলেও মুস্তাফিজের সাসেক্সে খেলতে যাওয়া উচিত মনে করেছেন। কিন্তু কাছের মানুষদের কাছে মাশরাফির প্রশ্ন ছিল—এই জায়গায় এসে মুস্তাফিজের শেখার কী আছে?

এর চেয়ে তাঁকে ঝুঁকিমুক্ত রেখে খেলানোরই পক্ষে ছিলেন তিনি। মুস্তাফিজের চোট মাশরাফির শঙ্কাটাকেই সত্যি প্রমাণ করল। তবে কাল এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে অধিনায়ক শুধু দিলেন একটা সতর্কবার্তা, ‘ভবিষ্যতে মুস্তাফিজকে কোথাও খেলতে পাঠানোর আগে মাথায় রাখতে হবে, তাঁর বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’