• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

ত্রাপুর আ’লীগের বিষফোঁড়া রিয়াজ- লুটেছে ১৫ কোটি


প্রকাশিত: ৩:৩৪ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩ বার


লাবণ্য চৌধুরী : সূত্রাপুর আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া হিসেবে পরিচিত রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের বদনামের যেন শেষ নেই। সুযোগ পেয়ে যেমন যৌন হয়রানি করেছে তেমনি লুটে নিয়েছে স্কুল ফান্ডের ১৫ কোটি টাকাও। এনিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার দফতর সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। এরপরই আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। যার বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ। এমনকি অভিযোগ রয়েছে রিয়াজের আতংকে থাকতেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের (নারী শিক্ষা মন্দির) শিক্ষিকা-শিক্ষার্থীরা।

শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিংবডির সভাপতি পদ পেয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকাও আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহাবিদ্যালয়টির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাকে।

জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মহানগরীর সূত্রাপুর থানাধীন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন পদত্যাগ করায় অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) মনোনয়ন প্রদান করা হলো।

বিদ্যালয়টির সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রিয়াজের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের বরাবর সম্প্রতি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। এরপরই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলায় রিয়াজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের বরাবর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। রিয়াজ গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ম্যানেজ করে অডিট আটকে রেখে শূন্যের কোটায় এনেছেন বিদ্যালয়ের প্রায় ১৩ কোটি টাকার ফান্ড।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণির দোহাই দিয়ে নিয়মিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত হয়রানি করতেন রিয়াজ। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয়ে শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ এমনকি চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিতেন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের জন্য সিটিং রুম সংকট থাকলেও রিয়াজ নিজের ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে নিজের জন্য অত্যাধুনিক একটি সভাকক্ষ তৈরি করেন। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করতেন এবং নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সেখানে বিশেষ প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করতে ডাকতেন।

অভিযোগ উঠেছে, রিয়াজ শিক্ষামন্ত্রীর নামে ক্ষমতা দেখিয়ে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ ও যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজের এক অনুষ্ঠানে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু রিয়াজের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে বিভিন্ন অপকর্মে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রিয়াজ।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সৈয়দা মেহনাজ নাইয়্যারা বলেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন। আমাদের প্রতিষ্ঠান ফান্ডের যে টাকা ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতোন সেই টাকা উনি সব কিছু শেষ করে ফেলেছেন। আমরা একমাস ধরে বেতন পাই না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে উনি আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখান। উনাকে কেউ চাইলেও সরাতে পারবে না। আমরা চাইলেও কেউ উনার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবো না। উনি আমাদের সুন্দর প্রতিষ্ঠানটিকে গত দুবছরে শেষ করে ফেলেছেন। তার ভয়ে ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে চান না অভিভাবকরা। আমরা তার কাছে অসহায়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রিয়াজ উদ্দিন বলেন,’ এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনো প্রমাণ নেই। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যালয়টিকে আলোকিত করে তুলেছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।’এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং নৈতিকস্থলনের অভিযোগ শুনেছি। সেজন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।