• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক-নতুন ভর্তি ৮২০


প্রকাশিত: ১০:৪৪ পিএম, ৮ জুলাই ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫২ বার

মেডিকেল রিপোর্টার : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৭ জনে। নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন, যা চলতি বছরের এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী। এ অবস্থায় টিআইবি বলছে, আগাম সতর্কতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বড় সিটি করপোরেশনগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ৪ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ৬৭৮ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৫০২ জন।শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার (৭ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে শনিবার (৮ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৬০৩ জন ও ঢাকার বাইরের ২১৭ জন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে সারা দেশে দুই হাজার ৫০২ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৭৭৩ জন ও ঢাকার বাইরে ৭২৯ জন।
এতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১২ হাজার ১১৮ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় আট হাজার ৫৭৪ জন ও ঢাকার বাইরে তিন হাজার ৫৪৪ জন। একই সময়ে সারা দেশে ছাড়প্রাপ্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা নয় হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৭৫০ জন ও ঢাকার বাইরে দুই হাজার ৭৯৯ জন।গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬২ হাজার ৩৮২ জন ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৮১ জন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে-টিআইবি

দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্ততি ও কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। চলমান পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবি বলছে, আগাম সতর্কতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বড় সিটি করপোরেশনগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

শনিবার পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এ জাতীয় সতর্কবার্তা ছিল, তারপরও রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক।তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে মুনাফাভিত্তিক কীটনাশক নির্ভরতার ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্যান্য সব পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে দুই সিটি কর্পোরেশনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কোভিড সংকটের অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে পরামর্শক প্যানেল গঠন ও যথাযথ গুরুত্বসহ নিয়মিতভাবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

মশক নিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এডিশ মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বৃদ্ধি করা জরুরি। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনসহ যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে জরুরিভিত্তিতে।’

শুধু রাজধানীই নয়, সারাদেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই এটিকে জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট ঘোষণা দিয়ে জাতীয় পর্যায় থেকে সমন্বিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ঢাকার বাইরের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে মশা নিধনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষমতার ঘাটতি জরুরিভিত্তিতে চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে বহুগুণ।
ভবিষ্যতে আবার যাতে এ জাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ প্যানেলসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় পর্যায়ে এডিশ মশাসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণে কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী সব সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।