• বৃহস্পতিবার , ৯ মে ২০২৪

চাণক্যপুরির গুজরাট ভবন গমগমে


প্রকাশিত: ৪:৩১ এএম, ২০ মে ১৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার

প্রদীপ কুমার শীল: নয়াদিল্লী ২০ মে ২০১৪:

চাই মন্ত্রী-চাণক্যপুরির গুজরাট ভবন গমগমে ।
সংখ্যায় কম কিন্তু দক্ষ ও কার্যকর মন্ত্রিসভা গঠন করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই লক্ষ্যে গতকাল সোমবারও বিজেপি শিবির তৎপর ছিল। অবশ্য কবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি শপথ নেবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত রোববার ও গতকাল সোমবার বিজেপি শিবিরের তৎপরতার কেন্দ্রে ছিল তিন ঠিকানা। সবচেয়ে গমগম করেছে চাণক্যপুরিতে গুজরাট ভবন, যেখানে মোদি ডেরা বেঁধেছেন। দ্বিতীয় ঠিকানা বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের সরকারি বাসভবন৷ তৃতীয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কার্যালয়৷
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ৭ রেসকোর্স রোড থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত গুজরাট ভবনে সোমবার সকাল থেকেই ছিল রাজনৈতিক ভিআইপিদের অবিরাম আনাগোনা। অমিত শাহ ও অরুণ জেটলির সঙ্গে মোদি দীর্ঘ সময় অলোচনা করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল মন্ত্রিসভা গঠন। জেটলির দুর্ভাগ্য ‘মোদি হাওয়াতেও’ তিনি জিততে পারেননি। অমিত শাহ যদি মোদির ডান হাত হন, জেটলি তাহলে এ মুহূর্তে মোদির বাঁ হাত। জেটলির সৌভাগ্য, রাজ্যসভার সদস্যপদটি তাঁর আছে। তাই মন্ত্রী হতে অসুবিধে নেই। বিজেপি শিবিরে ইতিমধ্যে রটে গেছে, অর্থ কিংবা পররাষ্ট্র—দুটির যেকোনো একটি মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন জেটলি।
গতকালই প্রথম মোদির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন সুষমা স্বরাজ। কংগ্রেসে যেমন সোনিয়া গান্ধী, সুষমা স্বরাজ তেমিন বহুদিন ধরেই বিজেপির অকৃত্রিম নারীমুখ। গত লোকসভাতেও তিনি ছিলেন লোকসভার বিরোধী নেত্রী। তাঁর বাগ্মিতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো অবকাশই নেই। সুষমার দোষ একটাই, তিনি লালকৃষ্ণ আদভানির ঘনিষ্ঠ এবং মোদির উত্থানে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু নীতিগত এ অবস্থান সত্ত্বেও জনপ্রিয় এই নেত্রীকে উপেক্ষা করা মোদির পক্ষে সম্ভব নয়। সুষমার দাবি, রাইসিনা হিলসে অবস্থিত নর্থ ও সাউথ ব্লকে যে চারটি মন্ত্রণালয় রয়েছে, অর্থাৎ অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র, সেগুলোর যেকোনো একটি। মোদি কি সুষমার চাহিদা পূরণ করবেন? সেটা এখনো বড় প্রশ্ন।
মোদির খুব কাছের ও বিশ্বস্ত নেতাদের অন্যতম গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকর। গতকাল তিনিও মোদির সঙ্গে দেখা করেন। আর দেখা করেন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং। সীমান্ধ্র নেতা জগনমোহন রেড্ডিও জয়ী আট সাংসদকে নিয়ে মোদির সঙ্গে দেখা করে যান। বৈঠকের পর তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে ইস্যুভিত্তিক সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছেন। রাজ্য রাজনীতিতে জগনের প্রতিদ্বন্দ্বী তেলেগু দেশম রয়েছে বিজেপির জোটে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের স্বার্থে তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মোদির সঙ্গে জগনের সাক্ষাৎ অন্য দিক থেকেও অর্থবহ। জগনের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের তদন্ত এখনো চলছে এবং তিনি দীর্ঘদিন জেলে কাটিয়েছেন।
রাজনৈতিক তৎপরতার দ্বিতীয় ঠিকানা বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের সরকারি বাসভবন। সকাল থেকে সেখানেও ভিড় আর ভিড়। বরুণ গান্ধী, উমা ভারতী, জগদম্বিকা পাল, যোগী অদ্বৈতনাথ, গোপীনাথ মুন্ডে, অনুপ্রিয়া প্যাটেল এবং সুষমা স্বরাজ একে একে রাজনাথের সঙ্গে দেখা করেন। এঁদের মধ্যে অনুপ্রিয়া প্যাটেল উল্লেখযোগ্য। উত্তর প্রদেশে বিজেপি এই যে ৭৩টি আসন জিতল, তার একটা বড় কারণ অনুপ্রিয়া প্যাটেলের সঙ্গে হাত মেলানো। অনুপ্রিয়া উত্তর প্রদেশের কুির্ম জনগোষ্ঠীর নেত্রী। তাঁর বাবা প্রয়াত সোনেলাল প্যাটেল ‘আপনা দল’-এর প্রতিষ্ঠাতা। উত্তর প্রদেশের জাতপাতভিত্তিক রাজনীতিতে কুির্মরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও একার শক্তিতে তাঁরা জেতার মতো জায়গায় থাকেন না। অনগ্রসর জাত বলে চিহ্নিত হলেও মুলায়ম সিংয়ের অনুগামী যাদব ও মায়াবতীর অনুগামী জাটভদের দৌরাত্ম্যে তাঁরা মাথা তুলতে পারেন না। মোদি এবার এই আপনা দলের সঙ্গে জোট বাঁধেন। তাদের দুটি আসন ছেড়ে দেন। বদলে পূর্ব উত্তর প্রদেশের প্রতিটি আসনে কুির্মদের সমর্থন আদায় করেন। আপনা দল দুটি আসনেই জিতেছে। মোদি মন্ত্রিসভায় অনুপ্রিয়ার স্থান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
রাজনৈতিক তৎপরতার তৃতীয় কেন্দ্রে ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। সংঘের কার্যালয়েও গতকাল সুষমা স্বরাজ যান। তিনি ছাড়া আর যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিং, যিনি অবসর নিয়েই বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিহার থেকে জেতেন। তিনি মন্ত্রী হতে আগ্রহী। দিল্লি থেকে জেতা উদিত রাজ, ভোজপুরি অভিনেতা মনোজ তিওয়ারি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনয় কাটিয়ার, ঝাড়খন্ডের অর্জুন মুন্ডা আর বিহারের শাহনাওয়াজ হুসেন। অরুণ জেটলির মতো শাহনাওয়াজও জিততে পারেননি। বিহারে এই একজন মুসলমানকেই টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। উত্তর প্রদেশে একজনকেও নয়। বিজেপির ২৮২ জন সাংসদের মধ্যে এবার একজনও মুসলমান নেই।
মন্ত্রিসভাকে অহেতুক বড় করতে মোদি চাইছেন না। তাঁর সুবিধা হলো শরিকদের খুশি রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম, উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা কিংবা প্রকাশ সিং বাদলের শিরোমনি অকালি দলের কেউ না কেউ মন্ত্রিসভায় থাকবেনই। বিজেপির দিক থেকে সভাপতি রাজনাথ সিং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সুষমা রাজি না হলে রবিশঙ্কর প্রসাদের নাম ভাবা হচ্ছে। রাজনাথ মন্ত্রী হলে দলের সভাপতি কে হবেন? সাবেক সভাপতি নিতিন গড়কড়ি? তিনি আবার নগরোন্নয়নমন্ত্রী হতে আগ্রহী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ভাবা হচ্ছে দিল্লির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের নাম। তিনি নিজে চিকিৎসক এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। মুরিল মনোহর যোশির নাম ভাবা হচ্ছে কৃষি অথবা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের জন্য। বাজপেয়ি সরকারের মন্ত্রী অরুণ শৌরির দক্ষতাকে মোদি কাজে লাগাতে চান বলে খবর। তাঁকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হতে পারে। আর লালকৃষ্ণ আদভানি? গত রোববার মোদি গিয়েছিলেন আদভানির কাছে। শোনা যাচ্ছে, ৮৬ বছরের ‘লৌহপুরুষ’-এর নাকি লোকসভার স্পিকার হতে আপত্তি নেই।