• রোববার , ১৯ মে ২০২৪

চলে গেলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ঠ নাগরিক মোহাম্মদ আলী


প্রকাশিত: ২:৩৩ পিএম, ৪ জুন ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৩ বার

প্রিয়া রহমান   :   চলে গেলেন বাংলাদেশের এক বিশিষ্ঠ নাগরিক মোহাম্মদ আলী ক্লে।৭৪ বছর বয়সে klay-www.jatirkhantha.com.bdশুক্রবার রাতে হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন তিনি।পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলীর অবস্থা আশংকাজনক হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বক্সিং ছাড়ার পর প্রায় ৩২ বছর ধরে পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন তিনি। ২০১৪ সালেও একবার ফুসফুসের অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

klay-2-dhaka-www.jatirkhantha.com.bd১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন আলী। বাংলাদেশ তাকে সন্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে পাসপোর্ট’ও প্রদান করেন। বাংলাদেশে এসে আলী বলেছিলেন, আমাকে যদি আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়া হয়, দুঃখ নেই। কারণ, আমার আরেকটি ঘর আছে। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ । বাংলাদেশকে নিয়ে এভাবেই বলেছিলেন সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলী।

ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে একঝলক দেখতে ওই সময় প্রায় দুই লক্ষ বাংলাদেশি সমবেত হয়েছিলো। প্রখর রোদের মধ্যেও মুখে নেই এতোটুকু বিরক্তি। চোখে আনন্দের ঝিলিক। একটু পরেই যে আকাশ থেকে নেমে আসবেন তাদের ‘নায়ক’!
klay-3-www.jatirkhantha.com.bd
বাংলাদেশের পতাকা লাগানো বিমান যখন মাটি ছুঁয়েছে, ততক্ষণে আলীর জন্য অপেক্ষারত ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাস তার কান পর্যন্তও পৌঁছে যাওয়ার কথা। যখন বাইরে আসলেন, সবাই অবাক হয়ে দেখেছে। এই সেই আলী! বক্সিং রিংয়ে যাকে হারানোর কথা বললে স্বয়ং ভাগ্য পর্যন্ত ভড়কে যায়।

কিন্তু বাংলাদেশিদের চেয়েও বেশি অবাক হয়েছিলেন আলী নিজেই। তার চিন্তাতেও আসেনি, তৃতীয় বিশ্বের মাত্র স্বাধীন হওয়া একটা দেশ থেকে এমন ভালোবাসা পাবেন তিনি। সবসময়ে রোদচশমা পরে থাকতেন। না, শুধু এদেশের চামড়া পোড়ানো রোদের কারণে নয়। তার বাংলাদেশ ভ্রমণ নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আলী সবসময় রোদচশমা ব্যবহার করতেন। যতটুকু না রোদ থেকে বাঁচতে, তার চেয়েও বেশি অশ্রু লুকাতে। পাছে, রিংয়ে যুদ্ধ করা শক্ত আর ভয়ঙ্কর আলীর আবেগ বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায়।’
66
বাংলাদেশে এসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে। তখন আলীর ক্যারিয়ারের ভরা মৌসুম চলে। নিজের জনপ্রিয়তা টের পেয়েছিলেন বাংলাদেশে এসে। ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন বাংলাদেশের দর্শনীয় সব স্থান। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, বাঘ সংরক্ষণাগার, সিলেটের অপরূপ সুন্দর চা বাগান, রাঙামাটি আর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

মজার ব্যাপার হলো, সরকারী অতিথি হলেও যেখানেই গেছেন সেখানেই তার সাথী হয়েছে মানুষের ঢল। বাংলাদেশের মানুষ তাকে জয় করেছে। তিনিও জয় করেছেন সবার মন। তাদের সঙ্গে হেসেছেন, হাসিয়েছেন, কেঁদেছেন।

দক্ষিন এশিয়ার দেশটিতে এসে সবচেয়ে মজার কাণ্ডটাও আলী ঘটিয়েছিলেন বক্সিং রিংয়েই। পল্টনের যে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, সেটির উদ্বোধন সেবার এসে নিজেই করেছিলেন। স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের দিন গ্লাভস পরে রিংয়ে নেমেছিলেন তিনি। বিপক্ষে বক্সিংয়ে লড়েছিলো ১২ বছর বয়সী এক ক্ষুদে বক্সার। মহানরা হেরে জয় করেন। মন জয় করেন। আলীও সেটাই করেছিলেন। ওই ক্ষুদে বক্সারের কাছে হারার ভান করছিলেন। বিনোদন দিয়েছিলেন দর্শকদের।

আলীকে সঠিক মূল্য দিতে ভুল করেনি ততকালীন সরকারও। সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় তাকে। মাত্র কয়েকদিনের ভ্রমণে বাংলাদেশকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে আসার সময়ে যেমন মানুষের ঢল নেমেছিলো, আমেরিকার বিমানে ওঠার দিনও একইরকম। বিমানে ওঠার আগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন কিংবদন্তি আলী। ক্যামেরার দিকে বাংলাদেশ থেকে পাওয়া পাসপোর্টটা নাড়িয়ে বলেছিলেন, ‘যদি স্বর্গ দেখতে চাও, বাংলাদেশে এসো’।
কে এই মোহাম্মদ আলী-

তিনবারের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলীকে বলা হয় বক্সিং ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বক্সার। জিতেছেন অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক। তবে তার সবচেয়ে বড় অর্জনটা আসে ১৯৯৯ সালে। মোহাম্মদ আলীর নাম বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাট্রেটেড স্পোর্টসম্যান অব দ্যা সেঞ্চুরি ঘোষণা করে।

১৯৪২ সালে কেন্টাকিতে জন্মগ্রহণ করা আলী শুধু বক্সিং রিংয়ের আলো ছড়ানোর জন্যই স্মরণীয় নন। তিনি জয় করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হয়ে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। মারা যাওয়ার কদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রে ডোলান্ড ট্রাম্পের মুসলিম নিষিদ্ধ করার ঘোষণার নিন্দা জানান।

খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও, ১৯৭৫ তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। ক্যাসিয়াস মার্কাস ক্লে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন ‘নেশন অব ইসলাম’ এ যুক্ত হন তিনি।