• মঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪

‘এসপি বাবুলের স্ত্রীর খুনী জেএমবি-শিবির জঙ্গি’


প্রকাশিত: ৬:১৩ এএম, ৭ জুন ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৮ বার

চট্টগ্রাম থেকে প্রদীপ শীল   :   পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম খুনের ঘটনায় নিষিদ্ধ sp-babul-wife-www.jatirkhantha.com.bd-জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পাশাপাশি শিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।তবে ঘটনার ৩ দিন পরও পুলিশ ঘাতকদের ধরতে গলদঘর্ম হচ্ছে।

Babul-Akhter-www.jatirkhantha.com.bdসোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে মামলার তদন্ত নিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. ইকবাল বাহার।গত রোববার রাত দুইটার দিকে নগরের বাদুড়তলার বড় গ্যারেজ এলাকার রাস্তা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার দাবি করেন, এটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বড় গ্যারেজ এলাকার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার।

sp-babul-www.jatirkhantha.com.bdগত রোববার সকাল সাতটায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম। ঘটনার পর পুলিশ জানায়, জঙ্গি দমনে বাবুল আক্তারের সাহসী ভূমিকা ছিল। এ কারণে জঙ্গিরা তাঁর স্ত্রীকে খুন করে থাকতে পারে। হত্যার পর রাতে পাঁচলাইশ থানার এক এসআইকে দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে মামলার করার সিদ্ধান্ত হলেও গতকাল বাবুল আক্তার নিজে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, খুনের ঘটনায় চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনে এই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। কিসের ভিত্তিতে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা ভিডিওচিত্রের সঙ্গে তাঁদের অবয়বের কিছুটা মিল থাকতে পারে।

অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে গতকাল রাতে পুলিশ জানায়। পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, খুনিরা মোটরসাইকেল নিয়ে জিইসি এলাকার ঘটনাস্থল থেকে গোলপাহাড় মোড়-কাতালগঞ্জ হয়ে বাদুড়তলা পর্যন্ত গেছেন। এলাকাটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। নিজেদের নিরাপদ মনে না করলে খুনিরা কীভাবে ওই এলাকা দিয়ে পালাতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘শিবিরের প্রাক্তন কর্মীরাই এখন জেএমবিতে যোগ দিয়েছে। তাই এ খুনের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ঘটনার দিন বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মুঠোফোনে তাঁর ছেলের স্কুল থেকে এটি খুদে বার্তা পাঠানোর যে খবর ছড়িয়েছে, এর সত্যতা জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার পর থেকে মাহমুদা খানমের মুঠোফোনটি পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে, তারা কোনো খুদে বার্তা পাঠায়নি।

বাবুল আক্তারকে হুমকি দিয়ে কেউ কোনো চিঠি দেয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, পুলিশের পরিবারের সদস্যদের বাড়তি নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের নম্বর ভুয়া: পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটে রয়েছে ‘চট্ট মেট্রো-ল-১২-৯৮০৭’। গতকাল সকালে বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, এই নম্বরের গাড়ির মালিকের নাম মো. আবদুর রহিম। পিতা-মৃত সৈয়দ আহমেদ। ঠিকানা-১৮/১৯ টেরিবাজার, সিটি টাওয়ার, চট্টগ্রাম। ২০১৪ সালে মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন করা হয়।

টেরি বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে আবদুর রহিম গতকাল বলেন, ‘আমার গাড়ি আমার কাছে রয়েছে। কেউ হয়তো আমার গাড়ির নম্বর ব্যবহার করেছে।’ তাঁর গাড়ির নম্বর ব্যবহার করে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে দুর্বৃত্তরা খুন করার কথা তিনি জানেন না।
পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন নম্বর (আইপি ৫০ এফএমজি-২-এ-১২৯৯৪৬৫) এবং চেসিস নম্বর হলো (বিআরবিএই-১০১০০০০৪২)।

বিআরটিএ নিবন্ধন অনুযায়ী মোটরসাইকেলটি নম্বর হচ্ছে চট্ট মেট্রো-হ-১৩-১৫৯৭। অথচ ঘটনার দিন দুর্বৃত্তরা গাড়িটিতে অন্য নম্বর প্লেট (চট্ট মেট্রো-ল-১২-৯৮০৭) ব্যবহার করেছিল।
বিআরটিএ নিবন্ধন অনুযায়ী চট্ট মেট্রো-হ-১৩-১৫৯৭ নম্বরের মোটরসাইকেলটির মালিক নগরের জামাল খান এলাকার মৃত গোলাম শরীফের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন। ২০১০ সালে গাড়িটি নিবন্ধন করা হয়। জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১১ সালে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মোটরসাইকেলটি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর তিনি গাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক আবদুল করিম গতকাল তাঁর কার্যালয়ে বলেন, পুলিশের উদ্ধার করা মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেটের সঙ্গে ইঞ্জিন চেসিস নম্বরের মিল নেই। অন্য একটি গাড়ি নম্বর এতে লাগানো হয়েছে। নম্বর প্লেট ভুয়া হলেও গাড়ির ইঞ্জিন চেসিস নম্বর দিয়ে প্রকৃত মালিকানা যাচাই-বাছাই করা যায়।

আবদুল করিম আরও বলেন, মোটরযান আইন অনুযায়ী মালিকানা হস্তান্তরের ৩০ দিনের মধ্যে ক্রেতাকে মালিকানা পরিবর্তনের জন্য এবং বিক্রেতাকে ১৪ দিনের মধ্যে তা বিআরটিএকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। মালিকানা হস্তান্তরের পর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ তা না করে থাকলে প্রথমে গাড়িটি যাঁর নামে নিবন্ধন হয়েছে, তাঁর নামই থাকবে বিআরটিএ নথিতে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, আইন না মানাটা অপরাধ। কেন বিক্রির পর বিক্রেতা বিষয়টি বিআরটিএকে জানাননি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার কেনার পর অপরাধ করার উদ্দেশ্যেও কেউ বিআরটিএতে নিবন্ধন না করাতে পারেন। গত নয় মাসে জঙ্গিদের আস্তানা থেকে নিবন্ধনহীন দুটি মোটরসাইকেল ও একটি ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

মাহমুদা খানমের দাফন সম্পন্ন:

ঢাকায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে গত রোববার রাত পৌনে ১২টায় খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া কবরস্থানে মাহমুদা খানমের দাফন সম্পন্ন হয়। খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, রোববার রাতে মাহমুদা খানমের মরদেহ খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ায় তাঁর বাবার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে লাশ মেরাদিয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।