• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

যুদ্ধাপরাধে নিষিদ্ধ হওয়ার টেনশনে জামায়াত-মোদির সফরে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে শতগুন


প্রকাশিত: ১০:৪২ এএম, ১৩ জুন ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮০ বার

jamat bnp_www.jatirkhantha.com.bd লাবণ্য চৌধুরী.ঢাকা: যুদ্ধাপরাধে নিষিদ্ধ হয়ার টেনশনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের  পর এই উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে শতগুন।এমনিতেই নেতারা যুদ্ধাপরাধে নিষিদ্ধ হয়ার টেনশনে অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীতে জামায়াতকে ছাড়ার পরামর্শ দেয়ার পর তাদের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার  জোগাড় হয়েছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, মোদি তাদের সম্পর্কে কি বলেছেন তা খালেদা জিয়া কাউকে বলেননি।তারপর’ও মিডিয়া লিখে দিয়েছে জামায়াতের সম্পর্ক ছাড়ার।
stop-the-fascist-bnp1সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে মোদি বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বার্তা দিয়েছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর বের হওয়ার পর বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা। তাঁরা ওই বৈঠকের প্রকৃত তথ্য জানতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।
এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সফর শেষ না হতেই ৭ জুন সন্ধ্যায় তাঁর সফর নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে জামায়াত যে বিবৃতি দিয়েছিল, তা নিয়েও দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মোদি ঢাকা ছাড়ার আগেই তড়িঘড়ি করে প্রতিক্রিয়া জানানো ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন দলটির অনেকে। এ অবস্থায় জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা ভারতের বিষয়ে নতুন করে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে আপাতত বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জামায়াতে ইসলামীর উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
এই নেতারা দাবি করেন, তাঁরা আপাতত এতটুকু জেনে আশ্বস্ত হয়েছেন যে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের প্রথম ৩০ মিনিটের বৈঠকে জামায়াতের প্রসঙ্গ আসেনি। এরপর মোদি ও খালেদা জিয়া একান্তে যে ১২ মিনিট কথা বলেছেন, তা প্রকাশ না করার বিষয়ে তাঁরা দুজন একমত হয়েছেন বলে জামায়াত জেনেছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার একান্তে কী আলাপ হয়েছে, তা তাঁদের দুজনের কেউই প্রকাশ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
জামায়াতের আরেকটি সূত্র জানায়, তাদের বিষয়ে বিএনপির প্রকৃত মনোভাব কী, তার একটা ইঙ্গিত শিগগিরই পাওয়া যেতে পারে। চলতি মাসেই এমন একটি উপলক্ষ আছে।
এ অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়েছে বলে ২০-দলীয় জোটের অন্য শরিকদের মধ্যে আলোচনা আছে। বিএনপির বর্তমান মুখপাত্র আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মোদির সফরের পর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়েছে, তা ঠিক নয়। তবে আগে থেকেই জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিতে অস্বস্তি বা ভিন্নমত আছে। বিশেষ করে গত আন্দোলনে দলটির নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় নেতা-কর্মীরা অসন্তুষ্ট।’
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও পাঁচজন নেতা ছিলেন। তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন নেতা বলেন, ৩০ মিনিটের বৈঠকে খালেদা জিয়া সীমান্ত চুক্তির জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানান। এরপর তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় জনগণের হতাশার কথা জানান। একই সঙ্গে মোদির নেতৃত্বে শিগগিরই এ চুক্তি হবে—এ আশা প্রকাশ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এ ছাড়া দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয়সহ মোদির শপথ গ্রহণের দিন থেকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর উন্নয়ন, আন্তযোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন বিএনপির নেত্রী। এরপর বিএনপির তিনজন নেতা উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার অপরিহার্যতার বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় বহাল থাকা ও দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করেন।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে থাকা দুজন নেতা জানান, বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তা হলো গণতন্ত্রের অপরিহার্যতা; নির্দিষ্ট কোনো দল নয়, দুই দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া এবং সন্ত্রাসবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা। বিএনপির নেতারাও এর সঙ্গে একমত হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দলের নীতিগত অবস্থান তুলে ধরেন।
নরেন্দ্র মোদি সফরের শেষ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জনবক্তৃতায় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন অবস্থানের কথা বলেন। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তাঁর এ বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের প্রসঙ্গ কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে সংবাদ বিশ্লেষণে গুরুত্ব পাচ্ছে।
মোদির এই বক্তব্য জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বলতে যেসব সংগঠন নিষিদ্ধ এবং যারা চরমপন্থায় খুনখারাবি করছে, তাদের বোঝায়। জামায়াত যদি জঙ্গি সংগঠন হতো, তাহলে তো সরকার নিষিদ্ধ করত। তা ছাড়া সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ নতুন বিষয় নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক বিষয়।
অবশ্য জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়েও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ‘অস্বস্তি’ আছে বলে মোদির সফরের আগে-পরে দুই দেশের গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন বলেন, নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের আগ পর্যন্ত গত কয়েক মাসে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার পদস্থ একজন কর্মকর্তা বিএনপির একজন নেতার সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেন। প্রতিটি বৈঠকেই জামায়াত এবং তারেক রহমানের প্রসঙ্গ এসেছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেকের বিষয়ে ভারতের ওই কর্মকর্তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে ওই নেতা দাবি করেন। তিনি বলেন, জামায়াতের ব্যাপারে ভারতীয় সূত্রগুলোকে জানানো হয়েছে যে জামায়াতকে নিয়ে একসময় আওয়ামী লীগও আন্দোলন করেছিল। এখন দলটি বিএনপির জোটে আছে, কিন্তু বিএনপি কখনো জামায়াত দ্বারা প্রভাবিত হয় না, বরং বিএনপির প্রভাবে জামায়াত গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে আছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার মতে, বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে জাতীয় সংসদের ৬০ থেকে ৭০টি আসনের ভোটের হিসাবের ওপর। এই হিসাব থেকেই জামায়াতকে বিএনপি থেকে আলাদা করতে চায় আওয়ামী লীগ।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিতে অস্বস্তি বাড়ছে। দলের বড় একটি অংশ জোট থেকে জামায়াতের বিদায়ের পক্ষে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা জানান, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিতে তিনটি ধারা আছে। এর একটি জামায়াতের প্রতি সহনশীল বা দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্য বজায় রাখার পক্ষে। দ্বিতীয় ধারাটি জামায়াতের প্রতি বৈরী। তারা জামায়াতের সংশ্লেষ থেকে বেরিয়ে প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধতে বেশি আগ্রহী। এ অংশটি মনে করে, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগ নিতে তৎপর রয়েছে জামায়াত। আর তৃতীয় ধারাটি মধ্যপন্থী। এই ধারার নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ যদি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে পারে, তাহলে বিএনপি পারবে না কেন? তাঁরা জামায়াতের প্রতি একেবারে দুর্বল বা বৈরিতা না দেখিয়ে কৌশলগত সম্পর্ক রেখে দলটির জনসমর্থন আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যবহারের পক্ষপাতী। এই তিনটি ধারার মধ্যে তৃতীয় ধারাটিই শক্তিশালী।