• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মহিমা তব উদ্ভাসিত…


প্রকাশিত: ৩:৩৩ এএম, ৪ অক্টোবর ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২০৬ বার

hasina-2ফুলু সরকার: DSC02821   বিমানবন্দর থেকে গণভবনে  প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর ফুল নিয়ে এগিয়ে যান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৈয়দ হকের কুশল বিনিময়ের সময় যোগ দেন চিত্রশিল্পী হাশেম খানও।এ সময় দেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে গেয়ে ওঠেন ‘মহিমা তব উদ্ভাসিত…’ কলিটি।

বন্যার সুর ছড়িয়ে পড়ে কণ্ঠে কণ্ঠে। বন্যার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন উপস্থিত সুধীজন। গান আর মুহুর্মুহু আনন্দধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা গণভবন। ভালোবাসায় আবদ্ধ প্রধানমন্ত্রী স্তব্ধ হয়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবই জনগণের প্রাপ্য।’শনিবার গোটা বাঙ্গালি জাতি আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল।রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দর থেকে গনভবন পর্যন্ত মানুষের স্রোত বিশ্ব বাঙ্গালির গর্ব জননেত্রী শেখ হাসিনা কে একনজর দেখার জন্যে।
hasina-1-‘বিশ্বের গর্ব’ বাংলাদেশের শেখ হাসিনার এই যে সম্মান এই যে অর্জন তার শুরুটা ছিল ১৯৯৮ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী পুরষ্কারে’ ভূষিত করার মাধ্যমে। অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় সম্প্রতি রক্ষা এবং তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাঁকে এই পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছিল ওই দিন।
এরপর নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের জন্য ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিক্স হুফে বইনি’ শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত করে। শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ২৫ বছর ধরে পার্বত্য এলাকায় চলা বিবাদের নিরসন হয়।
দেশ ও জাতির জন্যে নিবেদিত শেখ হাসিনার এই যে অর্জন তা কেবল বাঙ্গালির জন্যেই। তার তো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।যার চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, বঙ্গবন্ধুর মত নিবেদিত রাজনীতি-তিনি তো সাকসেস হবেনই।

hasina-1শেখ হাসিনার উদাহরন তিনি নিজেই। তিনি নিজেই একটা ইতিহাস। যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান ততদিন রবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মহান কির্তির খতিয়ান।সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ লাভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক অ্যাচিমস্টেইনার শেখ হাসিনার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।পরিবেশ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘ বিশ্ব নেতাদের মধ্যে থেকে প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত করে। চারটি ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউএনইপি এই পুরষ্কার দেয়। পরিবেশ বিষয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবছর পলিসি লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ইভেট ডায়ান ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বের গর্ব’ বলে আখ্যা দেন এবং সেই সঙ্গে বলেন দেশবাসীর উচিত তাকে সহযোগিতা করা।

এর আগে ২ আগস্ট জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) পক্ষ থেকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) টার্গেট ১ (সি) অর্জনের সাফল্যের জন্য ‘অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পুরষ্কার লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পুরষ্কার অর্জনের কারণ হলো বাংলাদেশ ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অপুষ্টিজনিত জনদুর্ভোগ অন্তত ৫০ শতাংশ কমাতে অথবা ৫ শতাংশের নিচে আনার ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ  উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) টার্গেট ১ (সি) অর্জন করেছে।

গত বছরের নভেম্বরে শেখ হাসিনা তার সরকারের সময়ে দারিদ্র দূরীকরণ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং তৃণমূলে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের সাউথ সাউথ কোঅপারেশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। শেখ হাসিনার পক্ষে ওই পুরষ্কার নিয়েছিলেন তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল সাউথ সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪’ অনুষ্ঠানে জয়ের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ইপং ঝু। ‘অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস’ (ওএএস) এবং জাতিসংঘের ‘সাউথ সাউথ কো-অপারেশন’ কার্যালয় যৌথভাবে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর ‘গ্লোবাল সাউথ সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো’ আয়োজন করে।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ এবং প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষিণের দেশগুলোর সামগ্রিক উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতার দিগন্ত বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে জাতিসংঘে সাউথ সাউথ কো-অপারেশন কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়।২০১৩ সালে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো অপারেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের (আইওএসএসসি) প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস লোরেনজো প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই পুরষ্কার তুলে দেন।

২০১৩ সালের জুনে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়াড’ শীর্ষক পুরষ্কার প্রদান করা হয়। দারিদ্র সীমার নিচে মানুষের সংখ্যা কমাতে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের প্রথম ধাপ পূরণে এগিয়ে থাকায় ফাও-এর মহাপরিচালক জোসে ডি সিলভা প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই পুরষ্কার তুলে দেন।সাধারন মানুষের কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ২০১৩ সালের ৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোটারি পিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

২০১১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর “সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড-২০১১: ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট হেলথ” পুরষ্কার অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) সাউথ সাউথ নিউজ এবং জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে এই পুরষ্কারে ভূষিত করেন।
৫০ শতাংশ শিশুমৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

একইবছর ১০ জানুয়ারি শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরস্ত্রীকরণ এবং উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদকে’ ভূষিত করা হয়। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং শেখ হাসিনাকে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অসাধারন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে আখ্যা দেন। মনমোহন সিং বলেন, তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

জনজীবনে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালের ২৫ জুন মাদার তেরেসা আজীবন সম্মননা পুরষ্কার অর্জন করেন শেখ হাসিনা। ‘মাদার তেরেসা ইন্টারন্যাশনাল এবং মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড কমিটি যৌথভাবে এই পুরষ্কার দেয়। অ্যাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্থনি অরুণ বিশ্বাস এই পুরষ্কার তুলে দেন। এর আগে ১৯৯৮ সালের ১২ এপ্রিল অল ইন্ডিয়া পিস কাউন্সিল মর্যাদাপূর্ণ ‘মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করেন তাঁকে।১৯৯৯ সালের ২২ আগস্ট ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) কর্তৃক মর্যাদাপূর্ণ ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন শেখ হাসিনা।লেখক-রাজনীতিবিদ।