বিএনপিতে বিশ্বাসঘাতক মিরজাফররা ফের মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠছে॥ ভেঙে যেতে পারে ২০ দলীয় জোট
শফিউল আলম বাবু.ঢাকা: বিশ্বাসঘাতক আর মিরজাফররা আবারও মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠেছে বিএনপিতে। দলে নের্তৃত্বের কোন্দলের সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সামনেই জোট বিরোধী বক্তব্য দেয়ার সাহস পাচ্ছে।শহিদ জিয়ার হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যাদের হাত রয়েছে তারাও রয়েছে এদের দলে। এরাই চেয়ারপার্সনের সামনে জোট ভাঙ্গার বক্তব্য দিয়েছে।বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে ২০ দলীয় জোট ও বিএনপিতে।
একাধিক সূত্র জানায়, যে কোনো সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে যেতে পারে ।বৃহস্পতবিার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টটিউিট মিলিনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীর আলোচনা সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তার উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর জোটবিরোধী বক্তব্য রাখেন।
তার এ বক্তব্য জোট ভাঙ্গার ইন্ধনকে আরও উস্কে দিয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, পরপর দু’বার সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ ২০ দলীয় জোটে বর্তমানে অবিশ্বাস-সন্দেহ চরম আকার ধারণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শাহজাহার ওমরের জোটবিরোধী বক্তব্য অবিশ্বাস-সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।
২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো সূত্রে জানা গেছে, রীতিমত ক্ষুব্ধ ও অপমানিত জোটের শরিক নেতারা নিজেদের মধ্যে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় জোটের এক নেতার বাড়িতে ১২টি রাজনৈতিক দলের র্শীষ নেতারা বৈঠক করেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কর্নেল ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ওই দলের নেতা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর জোটবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যে আমরা রীতিমত অপমানিত ও অসম্মানিত।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পুরোধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গণতান্ত্রিকভাবে বিএনপি গঠন করেছিলেন। তিনি জোর করে বা ভয় দেখিয়ে কাউকে দলে যোগ দিতে বাধ্য করেননি। জাতীয়তাবাদের চেতনায় ও জিয়াউর রহমানের সঠিক নেতৃত্বের কারণে তৎকালীন নেতারা প্রথমে জাগো দল পরে বিএনপিতে যোগ দেন।
এ দেশের জাতীয়তাবাদী আর্দশের রাজনীতিকে তারা শক্তিশালী করেন। কিন্তু শাহজাহান ওমর যেভাবে বক্তব্য রেখছেন, তাতে তিনি শহীদ জিয়াকেই খাটো করেছেন। প্রকৃতপক্ষে জিয়ার অন্যতম এক খুনীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে শাহজাহান ওমরের পক্ষেই এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া সম্ভব।’
এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে ইতোমধ্যইে আলোচনা করেছি। আজও করব। ১২ র্শীষ নেতা রাতে বৈঠক করবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে বাকি সম্মানটুকু বজায় রেখে জোট থেকে বের হওয়া যায়।’
বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরকে সরকারের এজেন্ট হিসাবে দাবি করে জোটের অন্যতম নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘শুধু বিএনপির সঙ্গে জোট করার কারণে বিগত ৫/৬ বছর যাবত আমরা আমাদের ব্যবসাও করতে পারছি না। জোটের হেন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা নেই। অনেক মামলায় চার্জশিট দাখিল হয়েছে।
আমাদের চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাইদ আহমদে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন জেলে গিয়েছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর মতো প্রবীণ ও ভদ্রলোককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। অথচ শাহজাহান ওমর বলছে, জোটের নেতারা নাকি আন্দোলনে সক্রিয় নয়।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ জোট শরিকরা যদি আন্দোলনে সক্রিয়ই না থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেমন করে একাধিক মামলা হল? আর সরকারের এজেন্ট শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে গত ছয় বছরেও কেন একটি মামলা হল না। যেখানে বিএনপির হেন কোনো নেতা মামলা থেকে রেহাই পাননি। সেখানে কেমন করে তিনি মামলাহীন থাকেন।’
সেলিম আরও বলেন, ‘আমরাও বুঝতে পারি ও মনে করি, বর্তমানে আগের মতো ২০ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা ও আবেদন নেই। তা ছাড়া, বিএনপি নিজেই তো জোট গড়ার মূল কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে বর্তমানে সরে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘শাহজাহান ওমরের জোটবিরোধী এ ধরনের বক্তব্যের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা বিএনপির কাছে তার বক্তব্যর ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করছি। বিএনপি যদি আমাদের সঠিক ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে আমরাও আর অপমানিত হয়ে তাদের সঙ্গে থাকব না। এটি পরিষ্কার।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেন, ২০ দল কোনো আদর্শিক জোট নয়। এ জোট গঠন হয়েছিল আন্দোলন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেহেতু এ মুহূর্তে আমরা আন্দোলনকে নয়, দল পুনর্গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিকট ভবিষ্যতে নির্বাচনের সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সেহেতু জোট থাকার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, আমি দলের নীতিনির্ধারণী কেউ নই, তবে হাজারো নেতাকর্মীর যে মতামত আমিও তার পক্ষে। জোট বিলুপ্ত করে দল পুনর্গঠনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এদিকে, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মুস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান শাহজাহান ওমরের বক্তব্যের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।