ঢাকায় তাজিয়া মিছিলের গ্রেনেড হামলা-৫০০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম
প্রিয়া রহমান: রাজধানীর পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিলের গ্রেনেড হামলা হয়েছে বলে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে।ঘটনাস্থলের আলামত দেখে সিআইডি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ওদিকে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা তাজিয়া মিছিলের ৫০০ বছরের ইতিহাসেএটাই প্রথম বলে ইমামবাড়ার নেতারা জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে আশুরা উপলক্ষে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলার সময় হামলায় অন্তত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং ১০০ জনের মত মানুষ আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকার হোসেনী দালান চত্বরে শুক্রবার দিবাগত রাত দু’টার দিকে এই হামলা ঘটে।বাংলাদেশে এই প্রথম তাজিয়া মিছিলে বোমা বা গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটলো। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ হোসেন নামের ১৫-বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হয়।
তার বাড়ি লালবাগ এলাকায় এবং সে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে সেখানে এসেছিল। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।তাদের চিকিৎসায় বহু মানুষ হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন।হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশিরভাগই আশঙ্কামুক্ত।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হোসেনী দালান চত্বরে বিভিন্ন জায়গায় হতাহতদের ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে।পুলিশ ঐ জায়গা এবং যেসব জায়গায় বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে সেই জায়গাগুলো নিরাপত্তা কর্ডন হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র সদস্যরা সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন।হোসেনী দালান চত্বরে সিসিটিভির ফুটেজও পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
স্থানীয় চকবাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, তাজিয়া মিছিলের জন্য হোসেনী দালান চত্বরে এক হাজারের বেশি শিয়া মুসলিম জড়ো হয়েছিলেন। তাদের মিছিল শুরু করার প্রস্তুতির সময়ই পর পর তিনটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরিত হয়নি এমন আরো দুটি বোমা বা গ্রেনেড সদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ উল্লেখ করেছে, উদ্ধার করা বোমাগুলো কালো স্কচ টেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। এগুলো হাতে তৈরি গ্র্রেনেড বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
এই তাজিয়া মিছিলের সংগঠকদের অন্যতম রাশেদ আহমদ জাতিরকন্ঠকের জানান, আমরা শিয়া মুসলিমরা ৫০০ বছর ধরে ঢাকায় এই তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করছি। কিন্তু এবারই আমরা হামলার শিকার হলাম। আর কখনও আমরা কোন ধরণের হুমকি পাইনি এবং কখনও আমাদের ওপর কোন হামলাও হয়নি।
বাংলাদেশে সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক এবং সম্প্রীতির পরিবেশ আমরা পেয়েছি।তিনি এই হামলাকে ন্যাক্কারজনক ঘটণা বলে বর্ণনা করেন।মি. হোসাইন বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই হামলা করা হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।এদিকে, শনিবার ভোররাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।তিনি জাতিরকন্ঠকে জানান, তাজিয়া মিছিলের জন্য সেখানে পুলিশ, র্যাব এবং সাদা পোশাকে পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা নেয়া হয়েছিল।
এমন নিরাপত্তার মধ্যে বোমা হামলাকারীরা তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়ার সাজ নিয়ে হোসেনী দালান কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন।পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, এটি কোন জঙ্গী হামলা নয়। দেশে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারাই পরিকল্পিতভাবে এই নাশকতা করেছে।