• রোববার , ৫ মে ২০২৪

২৬ ব্যাংকের তালুকদারি-কম সুদে আমানত বেশি সুদে ঋণ


প্রকাশিত: ৪:৩৫ এএম, ৫ নভেম্বর ১৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৬ বার

Bangladeshi_Taka-0শফিক আজিজি.ঢাকা:
কম সুদে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেশি সুদে ঋৃণ দিয়ে আসছিল বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ঘটনাটি ধরা পড়লে তাঁরা নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনা ছিল সুদের ব্যাবধান ৪ শতাংশের বেশী হবেনা। কিন্তু বিবি’র এই নির্দেশনা থোরাই কেয়ার করেনি ২৬টি ব্যাংক।
ব্যাংক খাতে আমানত ও ঋণের সুদের ব্যবধান (স্প্রেড) সেপ্টেম্বর মাস শেষে কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বর মাস শেষে গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ; আগস্ট মাস শেষে ছিল ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে এই হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়েও বেশি।বাংলাদেশ ব্যাংকের স্প্রেড সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সুদ হারের ক্ষেত্রে ২৬টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে কম সুদে আমানত সংগ্রহ করে বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। এর ফলে গড় স্প্রেড বাড়ছে।২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান (স্প্রেড) কোনো অবস্থাতেই ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংক ঋণের ঊর্ধ্বমুখী সুদহারের কারণে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাদের মতে, ঋণের সুদহার বেশি হওয়ায় উদ্যোক্তারা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ফলে দেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সেইসঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। এর ফলে ব্যাংকের মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

অন্যদিকে ব্যাংকারদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলোতে অলস অর্থ পড়ে থাকলেও আমানতকারীদের নিয়মিতই সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে তারা আমানতে সুদের হার কমালেও ঋণে কমাতে পারছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্প্রেড সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাস শেষে ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই সুদহার কিছুটা কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে দেশের ৫৬টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশে। আর আমানতে গড় সুদহারও কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বিশেষায়িত খাতের বেসিক ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড রয়েছে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানার আরও ২৫টি ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তবে বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোর স্প্রেড বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি।

সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণে গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর আমানতের গড় সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশে। এতে তাদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে বেশি; ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ওয়ান ব্যাংকের ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এছাড়া বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংকে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং যমুনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর মাস শেষে বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের ব্যবধান (স্প্রেড) সবচেয়ে বেশি। এসব ব্যাংকের গড় স্প্রেড ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার কিছুটা কমে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ রয়েছে।

এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এনএ’র ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ওরি ব্যাংকের ৭ শতাংশ, এইচএসবিসির ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ব্যাংক আল-ফালাহ্’র ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার ব্যাংকের (সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা) ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশে। আর আমানতে সুদহার ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। এতে তাদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গড়ে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে। আর আমানতে সুদ দিয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। এতে তাদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ।