• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

লাভের পিয়াজে পচছে-সীমান্তে আটকা ১০০ কার্গো ট্রাক


প্রকাশিত: ১০:৪৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২৩ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

অর্থনৈতিক ডেস্ক রিপোর্ট: কথায় আছে অতি চালাকের গলায় দড়ি। ঠিক তেমনি অতি লাভের পিয়াজের ট্রাকে অবশেষে পচন ধরছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপেক্ষায় আছে কমপক্ষে ১০০ কার্গো ট্রাকের পিয়াজে পচন ধরা শুরু করেছে। এ পেঁয়াজের পরিমাণ ৩ হাজার টনের ওপরে। এসব পিয়াজ নিয়ে ট্রাকগুলো সীমান্তে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে সীমান্তে আটকে যায় ট্রাকগুলো। এসব পেঁয়াজে ইতোমধ্যে পঁচন শুরু হয়েছে এবং দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে।

জানা গেছে, আভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজারে। প্রায় দ্বিগুন দামে কিনতে হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এদিকে ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোতে আটকে পড়েছে পেঁয়াজবাহী কার্গো ট্রাক। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরাও। ছাড়পত্র না পাওয়ায় রোদ-বৃষ্টিতে এসব পেঁয়াজ ইতোমধ্যে পচতে শুরু করেছে ট্রাকের ওপরেই।

জানা গেছে, রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশের যে আমদানিকারকরা পেঁয়াজের অর্ডার দিয়েছিলেন, তাদের অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপেক্ষায় আছে কমপক্ষে ১০০ কার্গো ট্রাক। অপেক্ষায় থাকা এ পেঁয়াজের পরিমাণ ৩ হাজার টনের ওপরে।

এদিকে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গের অংশে ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এর দাম বেড়েই চলেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আকস্মিক রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে এসব ট্রাক স্থলবন্দরে আটকে আছে। এতে রপ্তানিকারক এবং ফ্রেটগুলোও লোকসানের মুখে রয়েছে। ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে উঠেছিল।

রপ্তানিকারক ও আমাদানীকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে ১০০ কার্গো ট্রাকে ৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অর্ডার দিয়েছিলেন বাংলাদেশিরা। এ পরিমাণ পেঁয়াজ নিয়ে স্থলবন্দরে পৌঁছামাত্র ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালক আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় ৮ ডিসেম্বর।

একজন রপ্তানিকারক বলেছেন, আরও কমপক্ষে ১ হাজার ট্রাক পেঁয়াজ সীমান্তের পথে রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। সব স্থলবন্দরে এ নিষেধাজ্ঞা এক রকম নয়। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর পেট্রোপোলে পেঁয়াজভর্তি ট্রাকগুলো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে অর্ডার পেয়েছিল। পরিস্থিতি উত্তর ২৪ পরগনার বশিরহাটের কাছে গজলডাঙ্গা স্থলবন্দরে ভিন্ন। সেখানে নাসিক থেকে পেঁয়াজবোঝাই প্রায় ৩০টি কার্গো ট্রাক ৮ ডিসেম্বর থেকে আটকে আছে। মালদার মাহাদিপুর স্থলবন্দরের ভেতরে ৭০টি এবং বাইরে ৮০টি কার্গো ট্রাক অপেক্ষায় আছে।

নাসিকভিত্তিক এক রপ্তানিকারকের এজেন্ট শনিবার গজলডাঙ্গা বন্দরে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উদ্বিগ্ন অবস্থায় অপেক্ষা করছি। কেন্দ্রীয় সরকার শিপমেন্টের বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স না দিলে রপ্তানি বিল পাবো না। বড় রকমের লোকসান হবে। চালানের অনেকটাই এরই মধ্যে পচে যাওয়া শুরু করেছে। আবার কিছু রপ্তানিকারক এসব ট্রাক থেকে বস্তা ধরে নিয়ে পেঁয়াজ স্থানীয় গোডাউনে রাখছেন সেখানকার বাজারে বিক্রির জন্য। ওই এজেন্ট আরও বলেন, যদি এই শিপমেন্টের বড় অংশ পচে যাওয়া শুরু করে তাহলে যে দামই পাই, সেই দামে তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবো।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিষেধাজ্ঞায় কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি শর্ত আরোপ করেছে, তার একটিও অনুসরণ করেনি এসব শিপমেন্টের রপ্তানিকারকরা। তিনটি শর্তের ওপর পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি আছে। তা হলো- যদি চালান বোঝাই পিয়াজ বোঝাই শুরু হয়ে থাকে নোটিফিকেশন দেওয়ার আগে, যদি চালান এরই মধ্যে পৌঁছে থাকে এবং বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় থাকে। পেঁয়াজের চালান যদি কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে অথবা নোটিফিকেশনের আগে কাস্টমস স্টেশনে পৌঁছে থাকে।

কাস্টমস সহকারী কমিশনার অনীল কুমার সিং বলেন, সরকারের নির্দেশ পরিষ্কার। এসব চালান তার কোনো শর্ত পূরণ করেনি।
ওদিকে রপ্তানিকারক ও ক্লিয়ারিং এজেন্টরা বলেছেন, আকস্মিক এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকরা সরকারের নির্দেশ কার্যকর হওয়ার আগেই তাদের অর্ডার দিয়েছেন।