• শনিবার , ১১ মে ২০২৪

লাকি খাঁচা আনলাকি জিহাদ ও ১৫ তরুণের হিরো হওয়া এবং হাসিনা কি জিহাদদের পাশে দাড়াবেন?


প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ১৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৬ বার

শফিক আজিজ.ঢাকা: সরকারি লোকজন যখন ব্যর্থ ঠিক তখন ১৫ তরুণ লাকি খাঁচা বানিয়ে আনলাকি জিহাদকে উদ্ধার করে হিরো হয়ে গেল দেশবাসির মনে।এ যেন ‘মোরা একটিkhacha--www.jatirkhantha.com.bd

ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি..’। জিহাদ বাঁচেনি কিন্তু একজন জিহাদকে বাঁচাতে সাধারনের যে অনন্ত চেষ্ঠা সেটাই যুগ যুগ স্মরণ করবে জাতি।একই সঙ্গে সরকারের লোকজনের সীমাহীন ব্যর্থতার দায়ভার এখন কে নেবে সেটাই প্রশ্ন। প্রশ্ন রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি নিরীহ জিহাদদের পরিবারের পাশে khacha-www.jatirkhantha.com.bdদাড়াবেন?

 

প্রশিক্ষিত দমকল বাহিনী যখন ব্যর্থ, পাঁচ ফুট উচ্চতার একটা লোহার খাঁচা, কিছু উদ্যমী তরুণ-যুবক আর একটি ক্যামেরাই সৃষ্টি করল ইতিহাস। টানা ২৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর উদ্ধার হলো ছোট্ট শিশু জিহাদ। তবে জীবিত নয়, মৃত।
১০-১৫ জন উদ্যমী তরুণ-যুবকের একটি দলই টেনে তুলে আনে জিহাদের দেহ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শফিকুল ইসলাম ফারুক, আবু বকর সিদ্দিক, আনোয়ার হোসেন, কবির মুরাদ, নূর মোহাম্মদ, আবদুল মজিদ, শাহজাহান আলী, ইমরান, রাকিব, মুন ও রাহুল।
শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে পাইপের ভেতর শিশু আটকে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন তাঁরা। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে জিহাদকে যখন বেলা তিনটার দিকে বের করে নিয়ে আসেন, তখন তাঁরা রীতিমতো ‘হিরো’। অনেকেই তখন তাঁদের নামে স্লোগান দিচ্ছিল এবং কাউকে কাউকে মাথায় তুলে নাচছিল উপস্থিত জনতা।
এই দলের সাতজনের সঙ্গে ঘটনাস্থল ও বাইরে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয়। দলের আরেক সদস্য ফারুকের সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। এঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ক্যামেরা পাঠিয়ে কূলকিনারা করতে ব্যর্থ হলে আনোয়ার নামের এক যুবক তাঁর নিজের ক্যামেরা কয়েকবার পাইপের ভেতরে পাঠান। এর মধ্যে লোহার খাঁচাও তৈরি করে কয়েকজন তা পাইপের ভেতরে ঢোকান। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। সব শেষে শফিকুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দিকসহ কয়েকজন মিলে ভারী বস্তু টেনে তোলার উপযোগী করে খাঁচা তৈরি করেন। ফারুক নিজের পকেট থেকেই টাকা দেন এ কাজে।
গতকাল দুপুরের পর ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শেষ করলে মওকা মেলে উদ্যমী তরুণ-যুবকদের। কিছু একটা করতেই হবে—এমন মনোভাব দেখান ফারুকসহ দলের অন্যরা। স্থানীয় মানুষ ও উৎসুক জনতাও তাঁদের উৎসাহ দিতে থাকেন। অবশেষে বেলা তিনটার দিকে খাঁচার সঙ্গে ক্যামেরা যুক্ত করে একটি টর্চ লাইটসহ প্রথম পাইপের ভেতর নামানো হয়।
আনোয়ার ও নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রায় ৭৮ মিটার যাওয়ার পর মনে হয়, খাঁচাটি কোনো কিছুতে আটকে যাচ্ছে। তখন মনিটরে ভেসে ওঠে শোলাজাতীয় কিছু এবং ইটের টুকরোর সঙ্গে কিছু আবর্জনা। কিন্তু মানবদেহের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
এর পরের গল্প শোনা যাক আনোয়ারের মুখ থেকেই। ‘প্রথমে আমরা খাঁচা পাইপের ভেতরে রেখে এর সঙ্গে বাঁধা দড়ি আস্তে আস্তে ছাড়ছিলাম। কিন্তু বারবারই বাধা পাচ্ছিল। এবার অন্য কৌশল নিলাম। যেখানে আটকে যাচ্ছিল, সেখান থেকে খাঁচাটা কয়েক গজ টেনে তুলে জোরে ছেড়ে দিলাম। এরপর যখন টান দিই, মনে হচ্ছিল কোনো কিছুতে আটকে গেছে। বাইরে থাকা মনিটরে আর ইটের টুকরো, আবর্জনা দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, সমতল একটা বস্তু পড়ে আছে। এমন সময় দড়ি টানা শুরু করি। তখন মনে হচ্ছিল, খাঁচার ওজনের চেয়ে বেশি কিছু আটকে আছে। ২০-২৫ কেজি বাড়তি ওজন অনুভূত হতে থাকে।’
কিছুক্ষণ দম নেন আনোয়ার। এরপর বলেন, ‘তখনই মনে আশার সঞ্চার হতে থাকে। কিছু দূর টেনে আনার পর আবার মনে হলো, ভারী বস্তুটা কিছুটা নেমে যাচ্ছে। তখন ক্ষণিকের জন্য দড়ি টানা বন্ধ করে দিই। আবার ধীরে ধীরে টানা শুরু করি। একপর্যায়ে খাঁচার পুরোটাই বেরিয়ে আসে। দেখা যায়, খাঁচার হুকের সঙ্গে নাইলনের জড়ানো-প্যাঁচানো চিকন দড়ি আটকে আছে। আরও তিন-চার ফুট টেনে তোলার পর জিহাদের দেহ বেরিয়ে আসে। দড়ির সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল জিহাদের দেহ।’
কী আছে খাঁচায়: লোহার রড দিয়ে তৈরি খাঁচাটির উচ্চতা পাঁচ ফুটের চেয়ে কিছু কম হবে। তিনটি খাড়া লোহার রডের ওপরের অংশে একটা বৃত্তাকার রড দিয়ে আটকানো হয়। এর সঙ্গে টানা দেওয়া হয় আরও দুটি আড়াআড়ি রড। ঠিক মাঝখানে বাঁধা হয় মোটা রশি।
খাঁচাটির একেবারে নিচে রড ঝালাই করে ৪৫ ডিগ্রি কোনাকৃতির আংটা তৈরি করা হয়। এই আংটায় আটকে যায় জিহাদের দেহের সঙ্গে প্যাঁচানো নাইলনের চিকন রশি।
পেশায় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, খাঁচাটি তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যে এটি পাইপের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আংটাগুলো কোথাও বাধা পাবে না। কিন্তু ফেরার সময় কোনো বস্তু পেলে তা আটকে দিয়ে টেনে নিয়ে আসবে।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রথমে আরেকজন খাঁচা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ওটাতে কাজ হয়নি। পরে ফারুকসহ অন্যদের পরামর্শে আগের খাঁচাটার আদলেই নতুন খাঁচা তৈরি করা হয়। আইকন ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঝালাইকাজে সহায়তা করেন।
মুরাদ নামের এক যুবক বলেন, ‘আমরা ক্যামেরা নামানোর আগে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা নামানো হয়। রাত তিনটার পরে আনোয়ার তাঁর ক্যামেরা নামানোর উদ্যোগ নিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়, ক্যামেরা অনেক হয়েছে। এই চ্যাপ্টার ক্লোজড। আর দরকার নেই।’
আনোয়ার জানান, ক্যামেরা নিয়ে শুক্রবার রাত নয়টায় তিনি ঘটনাস্থলে যান। অনেক চেষ্টা করেও নামানোর সুযোগ পাননি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা দামি দামি ক্যামেরা পাঠিয়ে সফটওয়্যার দিয়ে প্রোগ্রাম সেট করে চেষ্টা করে।
আনোয়ার আরও জানান, তাঁর ক্যামেরার তারটি ৩০০ মিটার লম্বা। এই তারের ৭৮ মিটার পর্যন্ত পাইপের ভেতর প্রবেশ করানো হয়। এর অর্থ হচ্ছে, জিহাদের দেহটি পাইপের ভেতর ৭৮ মিটার নিচে অবস্থান করছিল।
আলাপ করে জানা গেছে, খিলগাঁও সিপাহীবাগে আনোয়ার হোসেনের সিসিটিভির ব্যবসা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি স্থাপন করাই এই প্রতিষ্ঠানের কাজ। এই দলের সদস্য আবু বকর সিদ্দিক আগোরা ও স্বপ্ন সুপার শপে মালামাল সরবরাহ করে থাকেন। তিনিই বিভিন্ন সময় খাঁচা নির্মাণ ও উন্নয়নে সহায়তা করেন। তাঁদের সহযোগী আবদুল মজিদ স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান। কবির মুরাদ আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর নূর মোহাম্মদ পড়ে মতিঝিল কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ে। শাজাহান আলী, রাকিব ও ইমরানও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ফারুক গাড়ির ব্যবসা করেন। এঁরা সবাই একে অপরের পূর্ব পরিচিত নন, উদ্ধার অভিযানে এসে তাঁদের পরস্পরের পরিচয় হয়।