• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

যুদ্ধ থামান-আলোচনায় সমাধান করুন- বিশ্বনেতাদের শেখ হাসিনা


প্রকাশিত: ৩:০৮ এএম, ২৬ অক্টোবর ২৩ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৬ বার

 

 

ব্রাসেলস থেকে আবুল হোসেন : বিশ্ব নেতাদের যুদ্ধ থামানোর আহবান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ না করে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সঙ্কটের সমাধান করা সম্ভব। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সকল বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি, দয়া করে এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না, আমি চাই যুদ্ধ থামুক। দয়া করে একসাথে বসুন, আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়। আমরা মানবিক কারণে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। তারপর সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশি মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করেছি। আমরা যুদ্ধ করিনি। আমরা যদি পারি, তাহলে আপনারা কেন পারবেন না? অস্ত্রের খেলা বন্ধ করুন।গাজা, ইউক্রেন এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা অবিলম্বে বন্ধের আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বুধবার গ্লোবাল গেটওয়ে সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় তিনি অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা অস্ত্র কিনে যত টাকা খরচ করেন, তা শিশুদের জন্য ব্যবহার করুন। নারীদের জন্য ব্যবহার করুন। শিশুদের শিক্ষার জন্য তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহার করেন।তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকারের কথা বলছি। আমার বাবার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমার ছিলো না। আইন করে বিচার চাইবার পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। আমরা ক্ষমতায় এসে সেই আইন বাতিল করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও অগ্রগতি মানুষে মানুষে সংযোগের জীবনরেখা। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাতে হবে।তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্কটের জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত হতে হবে। আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অব্যাহত বাণিজ্য অগ্রাধিকারও চেয়েছেন। ইইউকে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্য, উন্নয়ন ও মানবিক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের এলডিসি উত্তরণে ইইউ’র অব্যাহত বাণিজ্য অগ্রাধিকার চাই।

প্রধানমন্ত্রী ইইউভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিশেষ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশজুড়ে হাই-টেক পার্ক নির্মাণে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানান।বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় পরিবেশ নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সুতরাং, আমি ইইউ বিনিয়োগকারীদের আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কের সুবিধাগুলো অন্বেষণের আমন্ত্রণ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২০২৩-এর সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি সংযোগ হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।তিনি আরও বলেন, সবুজ হাইড্রোজেন উন্নয়নে বাংলাদেশ ইইউ’র সঙ্গে যোগ দিতে ইচ্ছুক।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষতা থেকে উপকৃত হতে পারি। আমাদের কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণের জন্য আমাদের কোল্ড চেইন নেটওয়ার্কগুলোতে বিনিয়োগের প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস ও চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্প উৎপাদন বহুমুখীকরণে ইইউ’র প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে পারে।তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের আগামী দিনের ইনস্টিটিউটগুলোর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে অংশীদার খুঁজছি।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গতিশীল তরুণ জনগোষ্ঠী ইইউ’র দক্ষতা ও প্রতিভা অংশীদারিত্ব কর্মসূচিতে যোগ দিতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি গ্লোবাল গেটওয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’র জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের গতিশীলতার ক্ষেত্রে তাদের ফলপ্রসূ সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও অঙ্গীকার ইইউ’র সাথে আমাদের সম্পৃক্ততার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তিতে আলোচনা শুরু করেছেন। আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের জন্য ৩৫০ মিলিয়ন-ইউরো ঋণের জন্য ইআইবি’র সাথে একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের এই ৫০তম বার্ষিকীতে তিনি বলেন, আমি আমাদের কৌশলগত সম্পৃক্ততা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি কারণ আমাদের ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ১৫ বছরেরও কম সময়ে ৪৬৫ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। আমরা আমাদের লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছি। চরম দারিদ্র্য ২০০৬ সালের ২৫.১% থেকে ৫.৬%-এ নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি মর্যাদা থেকে উন্নীত হতে চলেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার খাদ্য নিরাপত্তা, সার্বজনীন প্রথমিক শিক্ষায় ভর্তি, কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, বিনা খরচে আবাসন, গ্রামীণ যোগাযোগ, দুর্যোগ স্থিতিস্থাপকতা, জলবায়ু অভিযোজন, ১০০% বিদ্যুৎ কভারেজ, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ, শিল্প প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু ঝুঁকি সহনশীলতা ও সমৃদ্ধির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত এবং এটির এ অঞ্চলের ৩ বিলিয়ন গ্রাহকের একটি বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও বন্দর অবকাঠামো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছি।তিনি বলেন, আমরা নেপাল, ভুটান ও উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থল-সংযুক্ত অঞ্চলগুলোকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের বিমানবন্দরগুলো পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করতে পারে।তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবহন নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, সবুজ জ্বালানি, ডিজিটাল রূপান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর গ্লোবাল গেটওয়ের ফোকাসের প্রশংসা করি।’