• শুক্রবার , ১৭ মে ২০২৪

মালানে হেলে পড়ল সাকিবরা


প্রকাশিত: ১১:৩১ পিএম, ১ মার্চ ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৪ বার

স্পোর্টস রিপোর্টার : এক মালানই হারিয়ে দিল টাইগারদের। মালানের কাছে শিক্ষা নিক সাকিব তামিমরা। যদিও ৩৯ ওভার পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য যেন বাংলাদেশের দিকেই হেলে ছিল। কারণ, ১৬১ রানেই ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশে বোলাররা। কিন্তু ওই যে আফসোস! আর কটা রান যদি বেশী করতে পারতাম; তাহলে হয়তো জিততে পারতাম। বলা চলে রান ২৫০ হলে জিততে পারত টাইগাররা।

কিন্তু সাকিব তামিম আহমদুল্লাহ ও মুশফিকরা তাদের নিজের নামের মর্যাদা রাখেননি। ফলে মালনই হেলে দিল টাইগারদের। যাহোক, স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ডেভিড মালানই ক্রিজে ছিলেন। কিন্তু অষ্টম উইকেটে তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটি দারুণভাবে করেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার আদিল রশিদ। দুজনের ৫১ রানের জুটিতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ইংলিশরা।

ইংল্যান্ডের জয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মালানেরই। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে ওয়ানডাউনে নেমে মালান ম্যাচ জিতিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন। তুলে নেন ওয়ানডেতে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ১৪৫ বলে করেছেন অপরাজিত ১১৪ রান। তাঁকে সঙ্গ দিয়ে মঈন অপরাজিত থাকেন ১৭ রানে। তাতে বাংলাদেশের দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য ৪৮.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তাড়া করে সফরকারীরা।

২১০ রান, বেশ বড় লক্ষ্যও নয়, কিন্তু মিরপুরের উইকেট বলে কথা। এ লক্ষ্য তাড়া যেন রীতিমতো ইংলিশ ব্যাটারদের জন্য দুর্বোধ্য করে তোলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ৬৫ রানেই ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নেন সাকিব-তাইজুলরা। এতে কঠিন চাপে পড়েছে সফরকারীরা।
বাংলাদেশের বোলিং ইনিংস শুরু হয় একটু ভিন্নতা দিয়েই। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের বলে লফটেড ড্রাইভ খেলে সোজা (স্ট্রেইট) তামিম ইকবালের ক্যাচে আউট হন জেসন রয় (৪)। সাকিব-তামিমের মধ্যে ‘খারাপ’ সম্পর্ক নিয়ে কদিন ধরেই অনেক আলোচনা চলছে, এর মধ্যেই মাঠে সাকিবের বলে লং-অন থেকে দৌড়ে গিয়ে তামিমের ক্যাচ, তাতে প্রেসবক্স আর গ্যালারিতেও একটা আওয়াজ ওঠে।

ইনিংসের ৯ম ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিল সল্টকে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। ১৯ বলে ১২ রান করেন ইংলিশ ওপেনার। এরপরই ৬ রানে জেমস ভিন্সকে ফেরান তাইজুল। নিজের ৪র্থ ওভারের প্রথম বলে জস বাটলারকে ৯ রানে ফেরান তাসকিন আহমেদ। পঞ্চম উইকেটে ছয় নম্বরে নামা উইল জ্যাকসকে নিয়ে চাপ কাটিয়ে দলকে ম্যাচ ফেরানো চেষ্টা চালান ডেভিড মালান। তাঁদের দুজনেরই বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন দুজনেই। কিন্তু দুজনের জুটি বড় করতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। জ্যাকসকে ২৬ রানে ফিরিয়ে দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তিনি। ডিপ মিডউইকেটে জ্যাকসের অসাধারণ ক্যাচটি ধরেন আফিফ হোসেন।
ষষ্ঠ উইকেটে এবার মঈন আলীর সঙ্গে জুটি বড় করার চেষ্টা চালান মালান। মূলত মালান, মঈন ও জ্যাকসের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশে খেলার। ব্যাট হাতে সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরাই। মালান ইনিংস বড় করতে পারলেও বাকি দুজন পারেননি। মঈনের সঙ্গেও ৩৮ রানের জুটি গড়েন ওয়ানডাউনে নামা মালান। মঈনকে ১৪ রানে বোল্ড করে আবারও বাংলাদেশেকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ।

আটে ব্যাটিংয়ে নেমে থিতু হতে পারেননি ক্রিস ওকস। ৯ রান করে তাইজুলের বলে মিড-অনে তামিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকেরা। ম্যাচ জিতিয়ে ওঠেন মালান-রশিদ। বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ৩টি ও মিরাজ ২ উইকেট নিয়েছেন। এর আগে মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতায় আগে ব্যাটিং করে ২১০ রান করেছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি ছাড়া ৩০ এর ঘরে ফেরিয়েছেন কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪৭.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

আজ ২০২৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক খেলতে নামে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতেই মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটও ফিরেছে চেনা রূপে, সেই ধীর গতির টার্নিং উইকেটে। যেমনটা গত কয়দিন কথা হচ্ছিল, বাংলাদেশ নিজেদের মাঠের সব সুবিধাই নেবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ পেস ও স্পিন আক্রমণেরে সামনে উল্টো বাংলাদেশের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হলো। ৯ম উইকেটে তাসকিন ও তাইজুলের ২৬ রানের জুটিতে কোনোভাবে ২০০ পার হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৫০ ওভার ব্যাটিংও করতে পারেনি তারা। ৪৭.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও উইকেটে থিতু হতে পারেননি তামিম ও লিটন দাস। ৫১ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। ১৫ বলে ৭ রান করে ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন লিটন। ক্রিস ওকসকে গুড লেংথের ডেলিভারি লিটনের প্যাড ছুঁয়ে বাটলারের কাছে যায়। ওকস-বাটলারদের আবেদনের সাড়া দিয়ে আউটের সংকেত তথা আঙুল তুলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি এই ওপেনার।

দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি আরেক ওপেনার তামিমও। দলের ৫১ রানের মাথায় আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বোলিংয়ে এসেই তামিমকে বোল্ড করেন মার্ক উড। ইংলিশ পেসারের দ্রুত গতির বল তামিমের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে অফ-স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ৩২ বলে ২৩ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে।

৫১ রানে ২ উইকেট পড়ার পর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ৬২ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন তিনি। ২০ তম ওভারের চতুর্থ বলে আদিল রশিদকে সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে উডের ক্যাচে আউট হন মুশফিক। ৩৪ বলে ১৭ রান করেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। এরপর মঈন আলিকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব। ৮ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে।

১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো চপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দেওয়ার লড়াই চালিয়ে যান শান্ত। দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ব্যাটিং করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটিও তুলে নেন ৬৭ বলে। কিন্তু ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারেননি শান্ত। রশিদের বলে মিড-উইকেটে জেসন রয়ের অসাধারণ এক ক্যাচে ফেরেন তিনি। ওয়ানডেতে ৮২ বলে ৫৮ রানের নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে যান শান্ত। ইনিংসে ছিল ৬টি চারের বাউন্ডারি।

মাহমুদউল্লাহ-শান্তর ৫৩ রানের জুটিতে দলও ভালো স্কোরের সম্ভাবনা দেখে। তবে এরপরই আবার বিপর্যয় নেমে আসে ব্যাটিংয়ে। শান্তর পর পরই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৮ বলে ৩১ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। উডের বল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক জস বাটলারের তালুবন্দী হয়। আফিফ হোসেন ৯ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরেন ৭ রান করে। শেষ দিকে তাসকিন ১৪ ও তাইজুল ১০ রান করেছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে জফরা আর্চার, আদিল রশিদ, মঈন আলী ও মার্ক উড ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।