• বুধবার , ১ মে ২০২৪

দুর্নীতি ঘুষে বেহাল দশা! সিপিডি’র গবেষণায় ১৭ স্পট চিহ্নিত


প্রকাশিত: ১:০২ এএম, ১৮ জানুয়ারী ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪ বার


সিপিডি’র গবেষণায় ১৭ স্পট চিহ্নিত-

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : দুর্নীতি ঘুষে বেহাল দশা বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বর্তমানে এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। টাকা ছাড়া ফাইল নড়েনা একফোটাও। লাইসেন্সিং, আমদানি-রপ্তানি, ইউটিলিটি সংযোগসহ সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি ব্যবসায়ীদের ভোগাচ্ছে। এরপরের অবস্থানে আছে প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নতুন দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে, আমদানিকৃত কাঁচামালের দাম বেড়েছে, এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে, ব্যবসার মুনাফা কমেছে। আগামী ২ বছর জ্বালানি সরবরাহ এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিকে ঝুঁকি মনে করেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘ব্যবসা পরিবেশ ২০২৩’ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। সিপিডি ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) যৌথভাবে জরিপ চালায়। বুধবার সংবাদ মাধ্যমে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

গত বছরের মে-জুলাইয়ে ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারের ৭১টি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর জরিপ চালানো হয়। মোট ১০টি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- অবকাঠামো, নিরাপত্তা, আর্থিক খাত, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা, ব্যবসার পরিবেশ, সুশাসন, প্রতিষ্ঠান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শ্রমিকের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি, অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও পুনরুদ্ধার।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যবসায়ীরা এখনো দুর্নীতিকে ব্যবসার বড় প্রতিবন্ধকতা মনে করেন। লাইসেন্সিং, আমদানি-রপ্তানি, ইউটিলিটি সংযোগ, পাবলিক কন্ট্রাক্টে দুর্নীতি তাদের বড় ভোগাচ্ছে। তারপরে আছে প্রাতিষ্ঠানিক বা আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা। সরকারি প্রশাসনগুলোর ব্যবসার কল্যাণে যে ধরনের দক্ষতা থাকা দরকার সে ধরনের কাঠামো অর্জন করা যায়নি। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে- বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। গত ৫ বছর আগেও এ বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কাছে বড় সমস্যা ছিল না। চতুর্থত সমস্যা হচ্ছে; অবকাঠামো। যদিও অবকাঠামো সমস্যা অনেকটা কমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি ও অর্থায়ন সমস্যা আছে। অবশ্য নীতির ভারসাম্যহীনতা কমেছে, যেটিকে ব্যবসায়ীরা আশার বিষয় বলে মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২ বছরের জন্য ব্যবসায়ীরা জ্বালানি সরবরাহকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন। সেই চ্যালেঞ্জ এখন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এখন সরকার গুরুত্ব বিবেচনায় রপ্তানিমুখী শিল্পে, বেশি শিল্প কারখানায় গ্যাস দিচ্ছে। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আরও আগে গ্যাস উত্তোলনকে গুরুত্ব দেয়া হলে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা হলেও স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখা যেত। তা না করে আমদানিনির্ভর এলএনজি দিয়ে চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেশ আরও বিপাকে পড়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি আরেকটি চ্যালেঞ্জ। তৃতীয় ঝুঁকি হচ্ছে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বা অর্থনীতির শ্লথাবস্থা। তাই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম হলেও ভ‚রাজনৈতিক ঝুঁকিকে ব্যবসায়ীরা উপেক্ষা করছেন না। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, বর্ধিত শুল্ক আরোপ, বিনিয়োগ স্ক্রিনিং ভাবাচ্ছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ৬ বছরে সরকারি অফিসে ঘুস গ্রহণ কমেনি, বরং বেড়েছে। পাবলিক কন্ট্রাক্ট, কর প্রদান, ইউটিলিটি সংযোগ, আমদানি-রপ্তানি, এমনকি জুডিয়াশিয়াল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এ সমস্যা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে, আমদানিকৃত কাঁচামালের দাম বেড়েছে, এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে, মুনাফা কমেছে, বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে এবার কেন প্রতিযোগী সক্ষমতা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি- তার যৌক্তিকতায় খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার পরিবেশ নেই। করোনাপরবর্তী যুদ্ধের কারণে প্রতিযোগিতার পরিবেশের ক্ষেত্রে যে ধরনের আবশ্যিক কাঠামো থাকা দরকার তা অনুপস্থিত। কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যাবে, বৈষম্য কমানো যাবে, সাধারণ মানুষের হাতে সম্পদ, অর্থ পৌঁছানো যাবে সব দেশই সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিযোগী সক্ষমতা রিপোর্টের পরিবর্তে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে।

সিপিডির ১০ সুপারিশ : নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০০ দিনের, এক বছরের, ৩ বছর এবং ৫ বছরের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করে সিপিডি। এই কর্মপরিকল্পনা ওয়েবসাইটে আপলোড দেয়া থাকে। এক্ষেত্রে যেনতেন কর্মসূচি হলে চলবে না। সময় নির্দিষ্ট, ফলপ্রসূ কর্মসূচি প্রণয়ন করে সেগুলো ধারাবাহিক মনিটরিং করা দরকার।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতি রোধে স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এজন্য যেই আইনগত ভিত্তি রয়েছে, সেটিকে ব্যবহার করে আইনি, প্রশাসনিক এবং কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা দিতে হবে। এর আলোকে সব সরকারি অফিসে বা খাতভিত্তিক যেমন ব্যাংকভিত্তিক, করভিত্তিক পুঁজিবাজারভিত্তিক একজন করে ন্যায়পাল নিয়োগ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন কাঠামো প্রণয়ন করা যেতে পারে। লেনদেন কাঠামো পৃথক থাকায় অনেকে অনিয়ম-দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। ভারতের আধার কার্ডের মতো করা যেতে পারে। এছাড়া সরকারি কেনাকাটায় আমূল সংস্কার করা দরকার আছে। ই-প্রকিউরমেন্টের মধ্যেও এক ধরনের ভূত রয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়, দপ্তর বা অফিসে একটি গোষ্ঠী তা নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ ই-প্রকিউরমেন্ট হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বল্প মেয়াদে সীমিত সময়ের জন্য হলেও কিছু কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক কমিশন এবং একই ধরনের কমিশন করা যেতে পারে আইনি ও নীতিগত সংস্কারে। প্রতিযোগিতা কমিশন, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কমিশন, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে শক্তিশালী করার দরকার আছে।