• বুধবার , ৮ মে ২০২৪

ত্রিপুরার নয়া মুখ্যমন্ত্রী’র পথে বিপ্লব


প্রকাশিত: ৩:০৭ পিএম, ৬ মার্চ ১৮ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৭ বার

 

ত্রিপুরা থেকে দিপ রায়:  অবশেষে ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বিপ্লব কুমার দেব। মঙ্গলবার (০৬ মার্চ) কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এ ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার (০৬ মার্চ) আগরতলার রাজ্য অতিথিশালায় আয়োজিত বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গাধকারি এ ঘোষণা দেন।এ সময় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিষয়েও আলোচbjp Biplob-www.jatirkhantha.com.bdনা হয়। বৈঠক শেষে রাজ্য অতিথিশালা থেকে নব নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাজভবনে যান। আগামী শুক্রবার (০৯ মার্চ) রাজভবনে তাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার কচুয়ার ছেলে বিপ্লব দেবের ওই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এ সময় দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে নির্বাচিত বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজ্যের বনমালীপুর আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন বিপ্লব।বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে বিজেপি বিধানসভার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে জয় পেয়েছে। আর ভরাডুবি হয়েছে মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন সিপিএম-এর।

কিন্তু কে এই বিপ্লব দেব? কি তাঁর সম্মোহনী ক্ষমতা? তা সরেজমিনে না দেখলে বোঝা দায়। সম্প্রতি বিপ্লব দেব একটি প্রশংসনীয় দৃশ্যের জন্ম দিয়েছেন। সুদীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরায় সদ্য বিপুল জয় পেয়েছে বিপ্লব দেবের দল। ধরাশায়ী প্রতিপক্ষের দিকে এখন আর কটাক্ষ বা শ্লেষ নিক্ষেপ করা যে চলে না, ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে সৌজন্যের বাতাবরণ প্রস্তুত করাই যে শ্রেয়, সে কথা বিপ্লব দেব বুঝলেন। তাই তিনি সিপিএম দফতরে হাজির হলেন, প্রয়াত খগেন্দ্র জামাতিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন, বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আশীর্বাদও চেয়ে নিলেন। সৌজন্যমূলক পদক্ষেপ, সন্দেহ নেই। এমন একটা ছবি তৈরি করতে পারা যে অভিনন্দনযোগ্য, তা নিয়েও সংশয় নেই।

bjp-biplob-www.jatirkhantha.com.bdপারস্পরিক সৌজন্য কিন্তু আসলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটাই গণতন্ত্রের দস্তুর। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু রাজনীতিতে হিমন্তবিশ্ব শর্মারাও রয়েছেন, বস্তুত তাঁর মতো আরও অনেকেই রয়েছেন। অতএব দস্তুর অনুসৃত হয় না, সৌজন্যের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা খেয়াল থাকে না।ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের পরাজয়ের পর মানিক সরকারকে ত্রিপুরা ছাড়তে বলেছেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তার আগে গণনাকেন্দ্রেও মানিক সরকারের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে। সে সব নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছিল স্বাভাবিক কারণেই। বিপ্লব দেবের সহজ-সাধারণ একটা পদক্ষেপ কিন্তু সেই সব অস্বস্তির উপরে একটা প্রলেপ দিয়ে দিল। সৌজন্যের রাজনীতি কতটা শক্তিশালী, অনেকেই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে লড়াইটা নীতির সঙ্গে নীতির, মতাদর্শের সঙ্গে মতাদর্শের, পন্থার সঙ্গে পন্থার। লড়াইটা সেখানেই সীমাবদ্ধ। জনসাধারণ যে মত বা যে পন্থায় আস্থা রাখবেন, সেই মত বা সেই পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, সকলকে নিয়ে এবং সকলের জন্যই পরিচালিত হবে। রাষ্ট্র শুধুমাত্র শাসকের মত বা পন্থায় আস্থাশীলদের জন্য চলবে, বাকিরা ব্রাত্য হবেন, গণতন্ত্রের ধারণাটা মোটেই সে রকম নয়।

উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু সম্প্রতি সাংসদ জয়া বচ্চনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন সে কথা। কোনও এক তর্কে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের মত বা নির্দেশের সঙ্গে সহমত ছিলেন না জয়া। তিনি যে সহমত নন, সে কথা তিনি একাধিক বার জোর দিয়ে জানাচ্ছিলেনও। বেঙ্কাইয়া নায়ডু মনে করিয়ে দিলেন— আপনি সহমত হতেও পারেন, না-ও হতে পারেন, কিন্তু আপনাকে বিধি মেনে চলতে হবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বেঙ্কাইয়া নায়ডুর এই কথা আসলে গণতন্ত্রের মোদ্দা কথা। এ কথা শাসিতের জন্য যতখানি প্রযোজ্য, শাসকের জন্যও ততখানিই। এ কথা পরাজিতের জন্য যতখানি প্রযোজ্য, বিজয়ীর জন্যও ততখানি। হিমন্তবিশ্ব শর্মারা সে কথা ভুলে যান অথবা জানেন না সম্ভবত।

ত্রিপুরায় বিজয়ী বিপ্লব দেব পরাজিত মানিক সরকারের প্রতি যে সৌজন্য দেখিয়েছেন, স্বাভাবিক গণতন্ত্রের ছবিটা সে রকমই হওয়া উচিত। পরিণত বা সুস্থ গণতন্ত্রে এই ছবি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। কিন্তু প্রত্যাশিত সৌজন্য এত অমিল হয়ে উঠেছে সম্প্রতি যে, কোনও রাজনীতিক সৌজন্য দেখালে তা আশাতীত ঠেকে। বিপ্লব দেব অসামান্য বা অbjp-biplob-www.jatirkhantha.com.bd.1ভাবনীয় কোনও নজির সৃষ্টি করেননি। কিন্তু সৌজন্যের খরায় ক্লিষ্ট আজকের রাজনীতিতে বিপ্লব দেবদের এটুকু ইতিবাচকতাই প্রশংসনীয় এবং অভিনন্দনযোগ্য হয়ে ধরা দেয়।

শুধু ভারতে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও রাজনৈতিক প্রবণতা এ যুগে অবক্ষীয়মান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজত্বেও বিরোধী কণ্ঠস্বরের প্রতি তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ, শ্লেষ, কটাক্ষ, তাচ্ছিল্য বর্ষণের প্রবণতা উদ্বেগজনক চেহারা নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা তাঁর অনুগামীরা অবশ্য উদ্বিগ্ন নন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সৌজন্য ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যাঁরা ভাবিত, উদ্বিগ্ন কেবল তাঁরাই।

আমাদের পরম্পরা এবং ঐতিহ্য কিন্তু এমন অসৌজন্যের ইতিহাসে সওয়ার নয়। যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে— এই আপ্তবাক্য মহাভারত প্রসঙ্গে কথিত। ভারতীয় ঐতিহ্য ও পরম্পরার শিকড়ে পৌঁছতে অতএব মহাভারতের শরণ নেওয়া যেতেই পারে। রাজনৈতিক অসৌজন্য, অভব্যতা, তঞ্চকতার নজির মহাভারতেও মেলে। আবার অটল মূল্যবোধ, অবিমিশ্র মানবতার নজিরও মহাভারতেই অস্তিত্বশীল। ফারাক শুধু উৎসে। অসৌজন্য, অভব্যতা, তঞ্চকতাকে উৎসারিত হতে দেখা গিয়েছে বার বার খল শিবির থেকে। আর শিষ্ট তথা সত্যের অনুসারী শিবির বার বার মূল্যবোধ ও মানবতার স্বাক্ষর রেখেছে। অনুসৃতব্য কোন পথ, বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় এর পরেও।