• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

ঢাকা-১৭ ভোটে জিতল নৌকা-হেরেও হিরো আলমকে মারধর


প্রকাশিত: ১২:৪২ এএম, ১৮ জুলাই ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের পর এই আসনটির নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকে মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম যিনি হিরো আলম নামে পরিচিত তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ১১.৫১ শতাংশের মতো। এই নির্বাচনে সর্বমোট ভোট পড়েছে ৩৭ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে ৩৮৩টি ভোট বাতিল বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

আগামীকাল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন।
সোমবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৮টা পর্যন্ত চলে এই উপনির্বাচনের ভোটগ্রহন। ভোটার উপস্থিতি একেবারের কম থাকার কারণে ভোটগ্রহণ অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়নি। ফলে চারটার পরপরই শুরু হয় ভোট গণনা। এবার এই আসনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যালটে।

গত ১৪ই মে ঢাকা-১৭ আসনের সাবেক সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুর পর এই আসনটি শূন্য হয়েছিল।পরে গত পহেলা জুন নির্বাচন কমিশন এই আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সোমবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো।
ঢাকা-১৭ আসনে সংসদ সদস্য পদে লড়েছেন মোট আট জন প্রার্থী। তবে এই উপনির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিরোধীদল বিএনপি।গুলশান, বনানী, বারিধারা এবং ঢাকা সেনানিবাসের একাংশ নিয়ে এই আসনটি গঠিত।আসনটির ভোটার সংখ্যা সোয়া তিন লাখের কিছু বেশি। মোট ভোট কেন্দ্র ছিল ১২৫টি।

হিরো আলমের উপর হামলা

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রায় শেষের দিকে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম। এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, একটি ভোট কেন্দ্রের মাঠে তার উপর মারমুখী হয়ে উঠেছেন একদল মানুষ। তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসলেও তাকে ধাওয়া করে হামলাকারীরা।সেসময় মি. আলমের উপর এলোপাতারিভাবে মারধরও চলতে থাকে। ভিডিওতে জয় বাংলা স্লোগান দিতে শোনা যায়। জানা যায়, সোমবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকার বনানী এলাকার একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হিরো আলমের ওপর এ হামলা হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, মি. আলম ভোটকেন্দ্র থেকে রাস্তায় বের হয়ে আসার পর অজ্ঞাত লোকজন তাকে মারতে আসলে ফেরানোর চেষ্টা করেন কেউ কেউ। তবে তাদের উপেক্ষা করে ওই ব্যক্তিরা মি. আলমকে মারধর করতে থাকেন। তাকে ডান হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাস্তায় দ্রুততার সাথে হাটতে দেখা যায়। পরে তার পিছু নেয় হামলাকারীরা। একসময় মি. আলম পড়ে গেলে সেখানেও তাকে মারধর করা হয়। পরে ওই স্থান থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে যান তিনি।

স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে যে, মি. আলমের উপর হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের ব্যাজধারী ছিলেন।
এদিকে মি. আলমকে রামপুরার একটি হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালের বাইরে মি. আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. ইলিয়াস সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মি. আলমের সাথে সাথে আরো কয়েক জন আহত হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিকেল তিনটার দিকে বনানীর বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে তারা গিয়েছেন। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের উপর হামলা করে।সেখানে আলমের উপর বর্বোরোচিত একটা হামলা হয়। সেখানে তাকে রাস্তার উপর দৌঁড়ায়ে যেয়ে ফুটবলের মতো তাকে লাত্থি দেয়া হয়, তাকে শারীরিকভাবে যেভাবে নির্যাতন করা হয় সেটা ইতিহাস বিরল একটা নির্বাচন।

এই নির্বাচনে যদি আমরা জিতিও এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। আমরা জিতলেও এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করলাম। নির্বাচন কমিশনের উইদাউট হেল্পে আমরা নির্বাচন করতে নেমেছি আপনাদেরকে দেখানোর জন্য, জাতিকে দেখানোর জন্য। একটা তামাশার নির্বাচন হয়েছে। মি. ইলিয়াস অভিযোগ করেন যে, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য থাকলেও তারা কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা পাননি।

সে একজন প্রার্থী। তাকে সেভ করতে পারতো। কিন্তু তাকে যেভাবে রাস্তায় দৌঁড়ায় দৌঁড়ায় মারা হইছে সেটা ইতিহাস বিরল ভাই। এভাবে কোন নির্বাচন হতে পারে না। হামলার ঘটনা মি. আলমের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। হামলার সময় ঘটনাস্থলে মি. আলম. তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টসহ আরো তিন চার জন সমর্থক ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

হামলার কিছু পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, হিরো আলম নামে একজন প্রার্থী প্রায় ৬০-৭০ জন লোক নিয়ে কেন্দ্রে এসেছিলেন। কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য পুলিশ তাকে বাধা দিয়েছে। পরে তাকে সুরক্ষা দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে বের করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রের ভিতরে মারধর হয় নাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা দেখছি। এরকম ঘটলো কেন আমরা দেখছি। ঘটনা ঘটে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হিরো আলমও এখনো অভিযোগ করেনি। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এর আগে মি. আলম অভিযোগ করেছিলেন যে, তার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যখনি বলছে একতারার লোক, হিরো আলমের লোক তখনই বের করে দিতেছে। তার মানে তারা এক তরফা তাদের এজেন্টদের দিয়ে তারা একতরফা সিল মারার চিন্তা-ভাবনা করতেছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা আমরা জানি না।

এর আগে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই অনিয়ম এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছেন তারেকুল ইসলাম নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তিনি।

এদিকে বিকেল চারটার দিকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এ নিয়ে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, অল্পদিনের নির্বাচন বলে একটা অনাগ্রহ থাকতে পারে। নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো কোন নির্বাচন ব্যালটে অনুষ্ঠিত হলো।