• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

কোটিপতিদের ক্লাব সংসদ!


প্রকাশিত: ১১:০৯ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩ বার


এক মন্ত্রির বিদেশে ব্যবসা ২ হাজার ৩১২ কোটি-
এক মন্ত্রির বিদেশে ব্যবসা ২ হাজার ৩১২ কোটি -নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ১৮ জনের ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে) আছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত। ৮ জন স্বতন্ত্র। এই ১৮ জনের মধ্যে সবার ওপরে আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। টিআইবি-

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হচ্ছে জাতীয় সংসদ বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পরিসংখ্যান দেখিয়ে তারা আরো বলেছে, গত ১৫ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি। সরকারের মন্ত্রিসভার এক সদস্যের বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। তবে তিনি নির্বাচনি হলফনামায় এ তথ্য দেননি। এছাড়া হলফনামা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১৮ প্রার্থীর রয়েছে এক শ কোটি টাকার বেশি সম্পদ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে। বিদেশে ব্যবসায় আলোচিত ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি টিআইবি। তবে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ চাইলে তথ্যপ্রমাণসহ সবকিছু সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন টিআইবির কর্মকর্তারা।

টিআইবি জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ১৮ জনের ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে) আছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত। ৮ জন স্বতন্ত্র। এই ১৮ জনের মধ্যে সবার ওপরে আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার সম্পদের (অস্থাবর সম্পদের বর্ণিত মূল্যের ভিত্তিতে) মূল্য ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার বেশি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা আওয়ামী লীগ দলীয়। যারা এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

ভোটারদের জন্য প্রার্থীদের তথ্য জানতে ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ শীর্ষক একটি ড্যাশবোর্ড তৈরি করেছে টিআইবি। এই ড্যাশবোর্ডে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় হাজার হলফনামার আটটি তথ্যের বহুমাত্রিক-তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড থেকে ঘরে বসেই ভোটাররা নিজ এলাকার প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

এই তথ্যচিত্র বলছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ২৭ শতাংশের কিছু বেশি। ১৫ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশ।অন্যদিকে ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির ভূমির মালিকানায় কৃষি-অকৃষি মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমি থাকতে পারবে। কিন্তু হলফনামা অনুযায়ী, অনেক প্রার্থীর নামেই নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বড় আকারের ভূমির মালিকানা রয়েছে।

এদিন সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘নির্বাচনি হলফনামার তথ্যচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শিরোনামে টিআইবির এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্য জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, তাদের কাছে প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে। হলফনামায় তা দেখা যাচ্ছে না।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ওই মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনো বিদেশে সক্রিয়ভাবে আবাসন নির্মাণ (রিয়েল স্টেট) ব্যবসা পরিচালনা করছে। সেগুলোর মূল্য ১৬ দশমিক ৬৪ কোটি পাউন্ড বা ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। কিন্তু আলোচিত ওই মন্ত্রী তার হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের ব্যাপারে তথ্য দেননি।

ওই মন্ত্রী ২০১০ সালে প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ১ দশমিক ৭৩ কোটি পাউন্ড। এরপর ২০১৬ সালে আরেকটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ৭ দশমিক ৩১ কোটি পাউন্ড। ২০১৯ সালে তৃতীয় কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ২ দশমিক ৭৯ কোটি পাউন্ড। তিনি ২০২০ সালে চতুর্থ কোম্পানি চালু করেন, যার সম্পদ মূল্য ২ দশমিক ১৫ কোটি পাউন্ড এবং ২০২১ সালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি খোলেন, যেগুলোর বর্তমান সম্পদ মূল্য ৩ দশমিক ২২ কোটি পাউন্ড।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নাম জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু তথ্য গোপনের ব্যাপার রয়েছে এবং তিনি (মন্ত্রী) নিজে তা প্রকাশ করেননি সে কারণে তার নাম প্রকাশ করা টিআইবির এখতিয়ারবহির্ভূত। তবে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ যদি টিআইবির কাছে তথ্যসূত্র জানতে চায়, তাহলে তারা তথ্যপ্রমাণসহ তা দেবেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন কাজটি করতে পারে। কিন্তু কেউই তা করে না। এখানে দায়সারাভাবে তথ্য দেওয়ার জন্যই দেওয়া হয়।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, হলফনামার তথ্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও উদ্বেগজনক। প্রার্থীদের হলফনামা দেখে ভোটার যদি মনে করেন, তিনি এই প্রার্থীকে ভোট দেবেন না, কিন্তু এই যে ভোট দেবেন না, অন্য কাউকে দেবেন, সেই বিকল্প প্রার্থী তার সামনে নেই। জনগণের যে বিচারের ক্ষমতা ছিল, সেই বিচারের ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, সমাজে দুটি শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। এক শ্রেণি অতি সম্পদশালী, আরেক শ্রেণি দিন আনে দিন খায়। অল্প কিছু লোকের আগ্রাসী সংস্কৃতির মধ্যে চলে গেছে দেশ। এটা বিপজ্জনক।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম প্রমুখ।