• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

এবার জঙ্গি মারজান নিয়ে তোলপাড়


প্রকাশিত: ৬:৪৫ এএম, ১৩ আগস্ট ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  এবার জঙ্গি মারজান নিয়ে তোলপাড় চলছে। মারজান, তামিম চৌধুরী, জিয়াউল হকের পর গুলশান 55হামলার আরও এক সমন্বয়কারীর নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। তাঁর সাংগঠনিক নাম মারজান। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর জঙ্গিরা ভেতর থেকে হত্যাযজ্ঞের ছবি যাঁদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের একজন এই মারজান। ওই রাতে এসব ছবি আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক-এ প্রকাশ করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে জঙ্গি দমনে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ বিভাগ কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই মারজান সাংগঠনিক নাম। তাঁর ছবি পাওয়া গেলেও প্রকৃত নাম-ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বাংলাদেশি। সম্ভবত ঢাকা শহরেরই কোথাও তিনি থাকতে পারেন এবং তাঁকে ঢাকা শহরেরই কেউ বলে মনে হচ্ছে।

4সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার থাকা জঙ্গিদের কয়েকজন ছবি দেখে মারজানকে শনাক্ত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের পরপর তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশের অ্যাপ ‘হ্যালো সিটি’তে মারজানের ছবি প্রকাশ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

বিস্ফোরকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানাতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এই পাঁচজন ‘নব্য জেএমবির’ আত্মঘাতী দলের সদস্য। ঢাকায় হামলার জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে তাঁদের আনা হয়েছিল।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ জুলাই গুলশান হামলায় নিহত পাঁচ জঙ্গি দুভাগে ভাগ হয়ে পায়ে হেঁটে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জঙ্গিদের ভাড়া করা বাসা থেকে আসে। একটা পর্যায় পর্যন্ত মূল পরিকল্পনাকারী (নাম উল্লেখ করেননি) তাদের সঙ্গে আসে শুধু অনুপ্রাণিত করার জন্য।’

তিনি বলেন, পরে পরিকল্পনাকারীর পক্ষে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন মারজান। তিনি গুলশান হামলার ‘ইনচার্জ’। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত তাঁর একটি ছবি পাওয়া গেছে। ছবির সূত্র ধরে তাঁকে খোঁজার চেষ্টা চলছে।মনিরুল বলেন, ‘মারজান পড়াশোনা কোথায় করেছে, তা আমরা বুঝতে পারিনি। এদের সঙ্গে (বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার পাঁচজন) কথা বলে এবং অন্যান্য সময় যারা ধরা পড়েছে,

তাদের রিমান্ডে এনে কথা বলেছি। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, সে (মারজান) মোটামুটি শিক্ষিত তরুণ।’
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের আরেক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার পর জেএমবির একটি দল ঢাকায় অবস্থান করছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রাজধানীর সন্দেহভাজন মেস ও বাসাবাড়িতে ব্লক রেইড শুরু করে। কয়েক দিন আগে ওই ব্লক রেইডে ধরা পড়া এক জঙ্গির কাছ থেকে মারজানের ছবি উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে গুলশান হামলার সময় সেখানে অবস্থানরত জঙ্গিদের সঙ্গে মারজানের যোগাযোগের তথ্য জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ এর আগে বলেছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী গুলশান হামলার অন্যতম সমন্বয়কারী। হামলার দুদিন আগে বসুন্ধরার বাসায় আক্রমণকারী ও পরে নিহত পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে তামিম সর্বশেষ বৈঠক করেছিলেন।

তামিম চৌধুরী ও ব্লগার হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে ২ আগস্ট ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। তাঁদের ধরতে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ চলছে বলেও জানায় পুলিশ। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, তামিম ও মেজর জিয়া এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে তাঁদের ধারণা।

তামিম ও জিয়া কোন সংস্থার হাতে আটক আছেন, খবর কোন কোন গণমাধ্যমে এসেছে, বিষয়টি ‘ডিসমিস’ করবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে তাদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। ঢাকা মহানগরে যেসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা বিভাগ বা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আমাদের মামলাতেই এই দুজন পলাতক আসামি। আমরাই পুরস্কার ঘোষণা করেছি।’

এর আগে ২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তামিম ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর দুবাই হয়ে ঢাকায় আসেন। এ দেশে তাঁর জঙ্গি-সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে গত বছর।

এরপর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছিল, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া তামিমের সহযোগীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তামিম বেশির ভাগ সময় রিকশায় চলাফেরা করেন। ধুলোবালি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার ছলে তিনি প্রায় সময় মুখে মাস্ক পরে থাকেন। খুব ঘন ঘন জায়গা বদলান। কিছুদিন আগে পর্যন্ত পুলিশের কাছে খবর ছিল, তামিম ঘুরেফিরে বনানী, বারিধারা ও গুলশান এলাকায় অবস্থান করছেন।