• বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপির পরাজয়ের কারণ-জামায়াত হাওয়া ভবন জঙ্গিবাদ দুর্নীতি


প্রকাশিত: ৮:১৪ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৯ বার

 

mmmmmmmmmmmmশফিক আজিজি,ঢাকা:
 বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ দাবি করেছেন, তাঁর নতুন বইয়ে দল-সম্পর্কিত অভিব্যক্তিগুলো ব্যক্তিগত। তিনি দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বই লেখেন না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে লেখেন।

নতুন বই নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সমালোচনার জবাবে আজ সোমবার দুপুরে হাইকোর্টের বর্ধিত ভবন প্রাঙ্গণে এসব কথা বলেন মওদুদ আহমদ।
গত শনিবার মওদুদ আহমদের ‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ শিরোনামে নতুন একটি বই প্রকাশ করা হয়।
কারাবন্দী থাকা অবস্থায় ইংরেজিতে লেখা বইটিতে মওদুদ আহমদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে সেনা কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনের অবস্থা, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, রাজনৈতিক সমঝোতা, সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভূমিকা এবং ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।
সাবেক এই আইনমন্ত্রী দাবি বলেন, ‘সমস্ত বইয়ে চেষ্টা করেছি, বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের ইতিহাস তুলে ধরতে। আমি তো এই বই বর্তমানের জন্য লিখিনি। এটা তো ভবিষ্যতের জন্য লিখেছি।’
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বিএনপি সম্পর্কে, আমাদের দলের সম্পর্কে বইয়ে যে অভিব্যক্তি, এটা আমার ব্যক্তিগত। এটার সঙ্গে আমাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং আমি যখন বই লিখি, আমি দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বই লিখি না। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে বই লিখি।’

পুরো বইটি পড়লে সে নিজেই অনুতপ্ত হবে————-
রিজভীর সমালোচনার জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি ভয় করেছিলাম, সরকার আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবে। সেখানে দেখছি, আমার একজন সহকর্মী আমার ওপর অসন্তুষ্ট হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম, সে আমাকে অভিনন্দন জানাবে। বিশ্বাস করি, পুরো বইটি পড়লে, সে নিজেই অনুতপ্ত হবে। বুঝবে, যে কথাগুলো বলেছিল, তা সঠিক নয়।’

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমার দল ও দলের নেতা-কর্মীরা এটাকে (বই) খুব প্রশংসা করবে। ভেবেছিলাম, অভিনন্দন জানাবে, এ ধরনের একটি বই লেখার জন্য। তবে ভয় করেছিলাম, বইটি বের হওয়ার পর সরকার আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবে। হয়তো-বা আবার আমাকে জেলখানায় যেতে হতে পারে।

 

আমি জানি না রিজভী বইটি পড়েছে কি না। পড়া হলে দেখা যাবে, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সময় কীভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিশেষ করে শেষপর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য কী করে খালেদা জিয়া, বিএনপি ও আমাদেরকে দুর্বল করার জন্য যত রকম ষড়যন্ত্র আছে, করা হয়েছে।’

সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সহায়তায় এই সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছে। এর বিস্তারিত বিবরণ বইয়ে আছে। এখন দেখছি ফল উল্টো। আমাদের দল সম্পর্কে বা আমাদের দলের ব্যর্থতা, পরাজিত হওয়ার অনেকগুলো কারণ বইটিতে দেওয়া আছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য দাবি করেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে, সেটা কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনে কীভাবে কারচুপি হয়েছে তার সব বৃত্তান্ত তাঁর বইয়ে আছে। একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি—এটিই তাঁর বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য।

 
মওদুদ আহমদ তাঁর নতুন বইয়ে লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে ওই সময় তাঁর দুই সন্তান তারেক ও কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে রাজি ছিলেন না খালেদা জিয়া। নানা রকম চাপেও অনড় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। সে সময়ে দেশের মানুষের নেত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন কিংবা একজন রাজনীতিবিদের চেয়েও একজন মা হিসেবে দুই সন্তানের মুক্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন খালেদা জিয়া।’

বিএনপি সরকারের অপশাসন——————-

২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বইয়ের একটি অধ্যায়ে নির্বাচনের ফলকে নীরব বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেন মওদুদ আহমদ। তাঁর মতে, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান, জঙ্গিবাদের বিপক্ষে অবস্থান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে পরিবর্তনের আহ্বান দেড় কোটি তরুণ ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাশাপাশি ১০ টাকায় চাল, বিনা মূল্যে সার, প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এসব ইতিবাচক ভোটের পাশাপাশি বিএনপির নেতিবাচক ভোটও বিজয়কে এগিয়ে নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

মওদুদ বলেন, বিএনপি সরকারের অপশাসন, বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপির সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি এবং ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিতর্কটি সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেওয়ায় বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ভোটাররা।

তবে ‘নীরব বিপ্লব’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মওদুদ আহমদ  বলেন, ‘আমি এখানে বুঝিয়েছি নির্বাচনে নিয়ে সুচতুর কারচুপির কথা, যা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। আওয়ামী লীগকে জেতাতে আগে থেকে ব্যালট বাক্স ভরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন সেনা কর্মকর্তারা।’

বইয়ের শেষ দিকে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যারা দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেখতে চায় এ দেশের মানুষ, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।’