• বৃহস্পতিবার , ১০ অক্টোবর ২০২৪

বিআইডব্লিউটিএর অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত


প্রকাশিত: ১১:১৫ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৭ বার

০০ কাউন্দিয়ায় বিক্ষোভ
০০ প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ দাবি
০০ ঘেরাওয়ের হুমকি বিআইডব্লিউটিএ

00 বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, এই ব্রিজটি ২০১৫ সালে ৭.৬২ মিটার উচ্চতা বিবেচনায় নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স প্রদান করা হয়েছিল। তখন ওনারা কাজ শুরু করেননি। এখন আমরা উচ্চতা বাড়িয়েছি। এখন এর সমাধান উপদেষ্টাদের কাছে। আমার কিছু করার নেই।

 

 

লাবণ্য চৌধুরী : বিআইডব্লিউটি এর অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে থমকে গেছে কাউন্দিয়া বাসীর শত বছরের স্বপ্ন। ব্রিজ নির্মাণের অযৌক্তিক নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্সে আটকে গেছে রাজধানী ঢাকা তথা সারা বাংলাদেশ থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কাউন্দিয়া ইউনিয়ন। এর ফলে নির্মাণকারী প্রতিষ্টান কোটি কোটি টাকার অবকাঠামোগত মেশিনারীজ নির্মাণস্থলে নিয়েও কাজ করতে পারছে না।

এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার কাউন্দিয়া এলাকাবাসী ‘কাউন্দিয়া ব্রিজের’ নির্মাণস্থল মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার নবাবের বাগ মোড় সংলগ্ন নদী তীরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানব বন্ধন করেছে। বিক্ষোভকারীরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে কাউন্দিয়া ব্রিজ নির্মাণে বিআইডব্লিউটিএর বাঁধা অপসারণে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ঠ উপদেষ্টাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত অভিযোগ দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রিজ নির্মাণ শুরুর আলটিমেটাম দিয়েছে। এর অন্যথা হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ ঘেরাও করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ীর পাশে আধুনিকতার সবকিছু, শিক্ষা-দিক্ষা, উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছে না কাউন্দিয়াবাসী। এর কারণ একটি মাত্র ব্রিজ। কাউন্দিয়াবাসীর দীর্ঘদিন প্রতিক্ষার পর এলজিইডির মাধ্যমে কাউন্দিয়া ব্রিজ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু বিআইডব্লিউটি এর নতুন সিদ্ধান্ত নির্মিতব্য এলজিইডির কাউন্দিয়া ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পটি বাঁধাগ্রস্থ করছে। বিআইডব্লিউটিএ যে অজুহাত দিয়ে ব্রিজ নির্মাণে বাঁধাগ্রস্থ করছে তাতে বর্তমানে বিদ্যমান পাঁচটি ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলতে হবে। যা আদৌ বর্তমান বা কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা জেনেও বিআইডব্লিউটিএ খোঁড়া সরকারি অজুহাত দাড় করাচ্ছে। তারা বলছে, ৭.৬২ মিটার ব্রিজ এখানে দেয়া যাবেনা। এখানে ১২.২ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

কিন্তু এ ব্রিজের প্রবেশমুখের অদূরে তুরাগ নদীর উপরে অল্প কিছুদিন পূর্বে গাবতলী-আমিনবাজারের ১২ লেন ব্রিজের নির্মাণ এর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭.৬২ মিটার। একইভাবে টঙ্গী-আশুলিয়া প্রত্যাশা ব্রিজ ৭.৬২ মিটার, বিআরটিএ টঙ্গী ব্রিজ ৭.৬২ মিটার, ও কামারপাড়া ব্রিজ, টঙ্গী রেলওয়ে ব্রিজ ৫.৫ মিটার নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ উপরোক্ত ব্রিজগুলোর মাঝে এই কাউন্দিয়া ব্রিজটির উচ্চতা ধরা হয়েছে ১২.২ মিটার। এলাকাবাসীর প্রশ্ন তাহলে কি বিআইডব্লিউটিএ অন্য ব্রিজগুলো ভেঙ্গে ফেলবে? যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবান্তর এবং অবাস্তব।

ব্রিজের কাজ বন্ধের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কাউন্দিয়া এলাকাবাসী ‘কাউন্দিয়া ব্রিজের’ নির্মাণস্থল মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার নবাবের বাগ মোড় সংলগ্ন নদী তীরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ।

রাজধানীর মিরপুরের পাশেই কাউন্দিয়া। দেখা গেছে, সরকারি সংস্থাগুলোর রশি টানাটানির কারণে নাগরিকরা রাস্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। বাবু বাজার ব্রিজ এবং চীন মৈত্রী সেতু স্থাপনের ফলে দুই পাড়ে ব্যাপক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে মানুষের জীবনমানে রাতারাতি পরিবর্তন আসে। অন্যদিকে আমিন বাজার ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ, আশুলিয়া ব্রিজ এবং বিরুলিয়া সেতু নির্মাণের ফলে পাল্টে গেছে ঐসব এলাকার চিত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছােট খাটো কল কারখানা, কুটির শিল্প স্থাপন এবং বড় বড় ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে উঠেছে ঐ পাড়ে। কিন্তু পিছিয়ে পড়েছে কাউন্দিয়াবাসী।

তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। একটি আধুনিক ব্রিজের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুরাগ নদী পার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নদী পারাপারে তাদের কর্মঘন্টার ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। আবার মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। সেতুর অভাবেই ঐ এলাকার মানুষের জীবনে এখনও আলোর ছোঁয়া লাগেনি।

কাউন্দিয়াবাসীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত ৫ বছরে ১৫০টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মা ও শিশুসহ অন্তত ৮৬ জন মারা গেছে। এছাড়া ঐ ২২ গ্রামের মানুষকে তুরাগ নদী পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন যেতে হয় রাজধানীতে। হাট বাজার, অফিস আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতেও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেতুর অভাবে। সূত্র জানায়, কয়েক লাখ মানুষের জীবনমান থমকে আছে এই সেতুর অভাবে। আবার কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয় না। যে কারণে সরকারের সদয় বিবেচনায় বেশ কিছুদিন পূর্বে কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ২২ গ্রামের শত বছরের স্বপ্ন কাউন্দিয়া ব্রিজ অনুমোদিত হয় একনেক সভায়।

এ খবরে কাউন্দিয়াবাসী বেশ উচ্ছ্বাসিত এবং উদ্বেলিত হয়। এ খবরে তারা শুকরিয়াও আদায় করেন। কিন্তু বাধ সাধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর ব্রিজের উচ্চতা জটিলতায় কাজ বন্ধ রাখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বর্তমান ব্রিজটি ৭.৬২ নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স উচ্চতা বিবেচনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে তুরাগ নদীকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নিতকরণের প্রস্তাবনা হওয়ায় ব্রীজের উচ্চতা (নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স) বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৬২ এর স্থলে ১২.২ মিটার করা জন্য নির্দেশনা দিলে ব্রিজের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু এ ব্রিজের প্রবেশমুখের অদূরে তুরাগ নদীর উপরে কিছুদিন পূর্বে গাবতলী-আমিনবাজারের ১২ লেন ব্রিজের নির্মাণ (নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স) ৭.৬২ মিটার, টঙ্গী-আশুলিয়া প্রত্যাশা ব্রিজ ৭.৬২ মিটার এবং বিআরটিএ টঙ্গী ব্রিজ ৭.৬২ মিটার ও কামারপাড়া ব্রিজ, টঙ্গী রেলওয়ে ব্রিজ ৫.৫ মিটার নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‌’উপরোক্ত ব্রিজগুলোর মাঝে এই কাউন্দিয়া ব্রিজটির উচ্চতা ১২.২ মিটার ধরে নির্মাণ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবান্তর এবং অবাস্তব।

যা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হবে না’। এই উচ্চতা বিবেচনায় ব্রিজ নির্মাণ করলে প্রকল্প ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ অকারণে ব্যয় হবে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অহেতুক অর্থ অপচয় অত্যন্ত দুঃখজনক। দুই সংস্থার রশি টানাটানিতে কাউন্দিয়াবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে’। সুতরাং কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ২২ গ্রামের ৩ লাখ মানুষের প্রাণের ব্রিজটি নির্মাণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এগিয়ে আসবে বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আলম তালুকদার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘ব্রিজটির কাজ অবিলম্বে শুরু হওয়া দরকার। কাউন্দিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন ব্রিজের উচ্চতা জটিলতায় আটকে গেছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দিবেন’।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, এই ব্রিজটি ২০১৫ সালে ৭.৬২ মিটার উচ্চতা বিবেচনায় নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স প্রদান করা হয়েছিল। তখন ওনারা কাজ শুরু করেননি। এখন আমরা উচ্চতা বাড়িয়েছি। এখন এর সমাধান উপদেষ্টাদের কাছে। আমার কিছু করার নেই।