• শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের নিয়ন্ত্রণে- জাপা


প্রকাশিত: ২:৩৯ এএম, ১২ এপ্রিল ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৮ বার

জাপা সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে-|সূত্র বলছে, যে কারণেই মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা হোক না কেন, এতে সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক আরও জোরদার হবে ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে, ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক হয়

  দফার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলে থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়েছে

সরকারকে খুশি করতেই জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে এই পদে বসানোয় এখন জাপা কার্যত সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে আর সরকারকেতুষ্টকরার এই কাজটি করেছেন স্বয়ং জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদজাপার সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য এমন অভিমত দিয়েছেন

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদধারী একজন সাংসদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, চেয়ারম্যানকে বোঝানো হয়েছে, সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর এই সময়ে মামলামোকদ্দমাজেল থেকে দূরে থাকতে সরকারকেসমঝেচলতে হবে যেহেতু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জিয়াউদ্দিন বাবলুর যোগাযোগ ভালো, সে কারণে এইসমঝেচলার জন্য তাঁকেই বেছে নিয়েছেন এরশাদ

তবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেছেন, ‘সরকারকে খুশি করতে দলের মহাসচিব পরিবর্তন করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয় চেয়ারম্যান দল ঠিক রাখতে যাঁকে প্রয়োজন মনে করবেন, তাঁকে মহাসচিব পদ দিতে পারেন

মহাসচিব পরিবর্তনের আগে সভাপতিমণ্ডলীর সঙ্গে এরশাদ আলোচনা করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান যাঁকে খুশি মহাসচিব করতে পারেন যাঁকে খুশি সরিয়ে দিতে পারেন গঠনতন্ত্রে তাঁকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে

দলের প্রভাবশালী সূত্রগুলো বলছে, যে কারণেই মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা হোক না কেন, এতে সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক আরও জোরদার হবে ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে, ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক হয় দফার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলে থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়েছে মহাসচিব পরিবর্তনের মাধ্যমেভাবআরও বাড়বে

এর আগে গত বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় অভিযোগে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় রুহুল আমিন হাওলাদারের উল্লিখিত সম্পদের বাইরেও বিপুল সম্পদ রয়েছে

ছাড়া জাতীয় সংসদে রুহুল আমিন হাওলাদারের সরকারবিরোধী উক্তির রেকর্ড সরকারের হাতে পৌঁছানোয় তাঁর বিদায় ত্বরান্বিত হয়েছে বলেও আলোচনা আছে

আজ শুক্রবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সংসদ থেকে ওয়াকআউটের সময় সে (রুহুল আমিন হাওলাদার) কী বলেছে সম্পর্কে আমার জানা নেইসূত্রগুলো বলছে, সরকারি দলের পরামর্শে ওয়াকআউট করার বিরোধিতা করেছিলেন হাওলাদার তাঁর সরকারবিরোধী কথাগুলো তাঁরই দলের নেতারা রেকর্ড করে সরকারের প্রভাবশালী অংশকে শুনিয়েছেন

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রুহুল আমিন হাওলাদার এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন দলের মহাসচিব পদটি তাঁকে অনেক কিছু থেকে নিরাপত্তা দিতে পারত

দলের ভেতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া: রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দেওয়ায় দলের ভেতর রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই হতাশ তাঁরা বলছেন, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে নিয়ে দলে নানা বিতর্ক রয়েছে জাতীয় পার্টির একাধিক অনুষ্ঠানে বাবলু ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধানবলে স্ল্লোগান দিতে শোনা গেছে তিনি এখন দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে কতটা কী করতে পারেন, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা

দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, এরশাদ এমন একজন নেতা যিনি কখনো দলের নেতাকর্মীদের কথা ভাবেননি কখনো কোনো বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনাও করেননি নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে তিনি নানা নাটক করেছেন শেষ পর্যন্ত তিনি সাংসদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব নিয়েছেন যাঁরা তাঁর নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেই এরশাদ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছেন এরই ধারাবাহিকতায় জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব করা হয়েছে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য ঢাকার একটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন, পরে প্রত্যাহার করে নেন

সভাপতিমণ্ডলীর অপর এক সদস্য সাংসদ বলেন, সরকার স্ত্রী রওশন এরশাদের অনুকম্পানির্ভর এরশাদের জন্য অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না রওশন এরশাদ বরাবরই রুহুল আমিন হাওলাদারকে অপছন্দ করতেন যদিও ওই সাংসদ বলেন, যখন মহাসচিব পদে রদবদলের কথা তাঁরা শুনতে পান, তখন রুহুল আমিন হাওলাদার জিয়াউদ্দিন বাবলু দুজনেই সংসদে ছিলেন রওশন এরশাদ তাঁদের বলেছেন, পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বেলা আড়াইটা পর্যন্ত রুহুল আমিন হাওলাদার বনানীর পার্টি অফিসে এরশাদের সঙ্গেই ছিলেন পরে সেখান থেকে তিনি সংসদে আসেন

দিকে রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরোধী অংশটি বলছে, হাওলাদার দুই নৌকায় পা দিয়েছিলেন তিনি সকালে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গেছেন বিকেলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে গিয়ে এরশাদকে বুঝিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না দুই নৌকায় পা দিয়ে হাওলাদার নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন

রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, এমন কানাঘুষা ছিল নির্বাচন নিয়ে আলোচনার শুরু থেকেই তাঁর জায়গায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আসতে পারেন বলেও জোর প্রচার ছিল