• শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ রিজার্ভ চোর এখনও বহাল তবিয়তে


প্রকাশিত: ১:০৮ এএম, ১১ ডিসেম্বর ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৯ বার

এস রহমান  :  বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ রিজার্ভ চোর এখনও বহাল তবিয়তে। এদের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই ডজন বিদেশী। এরা বাংলাদেশ r-1ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ অপকর্মের ঘটনা ঘটে।  রিজার্ভ লুটের তদন্তে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভারের সঙ্গে কোনো ইন্টারনেট যোগাযোগ ছিল না। হ্যাকারদের সহযোগিতা করতেই  বিদেশি নাগরিক সার্ভারে ইন্টারনেট সংযোগ দেন। এরপর সুবিধামতো হ্যাকিংয়ে রিজার্ভ সরিয়ে নিতে মাঠে নামেন। রিজার্ভ চুরি করতে তারা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংককে বেছে নেন।rrr

রিজাল ব্যাংকের রিজার্ভ যেখানে ১ মিলিয়ন ডলারেরও কম, ঐ ব্যাংকের মাধ্যমে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেন। এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা জেনেশুনে এবং পরিকল্পিতভাবে রিজার্ভ চুরিতে সহযোগিতা করেছেন।

সিআইডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) মো. শাহ আলম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা বিদেশি এজেন্ট ও ভেন্ডারদের সহযোগিতায় সুরক্ষিত সার্ভার সিস্টেমকে অরক্ষিত করেছেন। দেশি-বিদেশি লোক এই ব্যাংকে ঢুকেছেন। বিদেশি এজেন্টদের এক্টিভিটিসের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এক্টিভিটিস এক হওয়ার পরই রিজার্ভ চুরি করা সম্ভব হয়েছে। তারা ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভার সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করতে প্রথমে যোগাযোগ করা হয় এই ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তাদের সহযোগিতায় সুরক্ষার পদ্ধতিকে ধাপে ধাপে অরক্ষিত করা হয়েছে। রিজার্ভ সার্ভারে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাই এই কাজটি rrrrকরেছেন। রিজার্ভ সার্ভার নিয়ন্ত্রণের প্রধান কম্পিউটারে তারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছেন জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। ৩১ জানুয়ারি রিজার্ভ সার্ভার তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়ন্ত্রণের খবরটি হ্যাকাররা নিশ্চিত হওয়ার পর অর্থ সরানোর কাজে নেমে পড়েন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা জড়িত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম ফিলিপাইনে গিয়ে ঐ দেশের অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। টিমটি রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন। ফিলিপাইনের এই তদন্ত রিপোর্টে সিআইডি উল্লেখ করেছে, রিজাল ব্যাংক জুপিটার শাখার ম্যানেজারের সম্মতি নিয়েই ১ ফেব্রুয়ারি ঐ ভূয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।

অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে শর্ত ছিল যে যা টাকা ডিজবার্সমেন্ট (প্রদান) হবে, তার ১৫ ভাগ টাকা পাবে ব্যাংক। বাকি ৮৫ ভাগ টাকা হ্যাকারদের কাছে চলে যাবে। রিজাল ব্যাংক থেকে টাকা ম্যানিলার একটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। ঘটনার দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাসিনোতে হ্যাকাররা জয়ী হয়ে সব টাকা নিয়ে যায়। হ্যাকারদের জয়ী হওয়ার বিষয়টিও ছিল পূর্বপরিকল্পিত।হ্যাকাররা টাকা চুরি করতে আগে থেকেই ক্যাসিনো ঠিক করে রেখেছিল।

সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) মো. শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এর দায় কখনোই ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক এড়াতে পারে না। কারণ চোর চুরি করবে। তাই বলে কি চুরি হওয়া জিনিস উদ্ধার হবে না?

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করে ফিলিপাইনে অর্থ পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়াও ২০ মিলিয়ন চুরি করে পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কায় যা ফেরত পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি চলতি বছরের মে মাসে প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে তা এখনো প্রকাশ করেনি সরকার।