• শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নারী সহিংসতা ঠেকাতে পৌরুষ ভাবনা


প্রকাশিত: ৭:৪২ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ১৭ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২১ বার

স্টাফ রিপোর্টার :  সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা রুখতে নারীর পাশাপাশি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে তাদের Nari-www.jatirkhantha.com.bdনিয়েও কাজ করার তাগিদ এসেছে ঢাকায় এক মতবিনিময় সভা থেকে। শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনজ বলেন, “আমরা নারীদের নিয়ে কাজ করলেও এটি এখন এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে যে গণআন্দোলন ছাড়া তা প্রতিরোধ করা সম্ভব না।এনজিওরা যারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করত, তাদের মধ্যে একটি উপলব্ধি হয়েছে যে, এখন পুরুষ ও ছেলেদের নিয়েও কাজ করতে হবে। অনেকে আবার কাজ করা শুরুও করে দিয়েছে।

সহিংসতার শিকার নারীরা আইনি সুরক্ষা পাচ্ছে না বলেও ব্র্যাকের এই কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণ।নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো ২০ শতাংশ আইনি প্রক্রিয়ায় যায়, বাকিরা প্রমাণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় না। সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করে ফেলে। আর রায় পর্যন্ত গড়ায় মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ ঘটনা।

আন্না মিনজ বলেন, ইন্টারনেট সহজে ব্যবহারের সুবিধা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে।ব্র্যাক আয়োজিত ‘পৌরুষ: নতুন ভাবনা- গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার মিডিয়া পার্টনার ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সভায় একাত্তর টেলিভিশনের হেড অফ অপারেশন্স সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “বাংলাদেশের পৌরুষ আজ বিপন্ন বলেই সে এখন ধর্ষণ করে।

যৌন সহিংসতার বিচারে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার গণমাধ্যমগুলোর রিপোর্টিংয়ের ভিত্তিতে তাদের জুডিশিয়ারি সিস্টেমে যে নতুন ভাবনার জায়গা এসেছে, তা শেয়ার করাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনাগুলোতে দ্রুত বিচারের কথা বলা হলেও তা হয় না বলে নতুন করে ভাবনা করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

নারী বিচারপতি, আইনজীবী বাড়ানোর পাশাপাশি নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের মামলাগুলোর তদন্তের ভার পুলিশের নারী কর্মকর্তাদের উপর দেওয়ার পক্ষে পত জানান এই সাংবাদিক। বিচার প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “আমাদের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্ষিতাকে শাস্তি দেওয়ার রেওয়াজও কিন্তু এখনও আছে।

একটি মেয়ে থানায় গেলে প্রথম থেকে যে প্রশ্নটা করা হয়, তাতে তার কেস করার আকাঙ্ক্ষাই চলে যায়। গারো মেয়েটির ধর্ষণের ঘটনা হয়ত আপনাদের মনে আছে। পাঁচটি থানা ঘুরে তার মামলাটি নেওয়া হয়েছে।থানাগুলো কেন পোস্ট অফিস হবে না? যে কোনো পোস্ট অফিসে পোস্ট করলেই তো চিঠি চলে যায়। তাহলে থানাগুলো এমন হবে না কেন? প্রশ্ন রাখেন ইশতিয়াক।

সমাজ ব্যবস্থার সমালোচনার পাশাপাশি গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের কথাও বলেন তিনি।আমাদের গণমাধ্যমের নতুন জায়গাটা চিন্তা করতে হবে। আমাদের রিপোর্টিংয়ের ধরন বদলাতে হবে, কথার ধরন বদলাতে হবে।ব্লগার আরিফ জেবতিক ‘গ্যাং রেপের কালচার বন্ধে’ কঠোর শাস্তির সুপারিশ করেন।

“বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিপরীতে ‍কীভাবে বিচার করতে হবে সেদিকে ফোকাস করে বিচারের জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। যখন বিচার হয় না তখনই ধর্ষণে উৎসাহিত হয় পুরুষ। সে কারণেই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষা কার্যক্রমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও অভিনেত্রী রিফাত রশিদ মিথিলা বলেন, “সমাজের সমস্যাগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা কী শিখছি, কী শেখাচ্ছি, তা দেখতে হবে।গণমাধ্যমকর্মীদের এই ইস্যুটাকে ফোকাস করতে হবে। ‘জেন্ডার’কে মূলস্রোতে আনতে হবে।

এ বিষয়ে ‘নলেজ ও প্র্যাকটিস লেভেলে’ কাজ করার ওপর জোর দেন মিথিলা। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে একটি ‘প্যাকেজ’ হিসেবে ব্যবহারের পক্ষপাতী এই অভিনেত্রী। ‘উইমেন চ্যাপ্টারের’ সম্পাদক সুপ্রীতি ধর বলেন এই অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালাতে গিয়ে গত দুই বছর কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন তারা।

একে ‘মানসিকভাবে ধর্ষণ’র সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “প্রতিদিনই মনে হয়, আমি এটা ছেড়ে দেব। এসব আর নিতে পারব না। আমরা যা লিখি, তা অপ্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরে পুরো মেয়েদেরই ভিকটিমাইজ করা হয়। অনেক মেয়েরা লেখা ছেড়ে দিয়েছে, কেননা তাদের ‘বেশ্যা’ বলা হচ্ছে। তাদের পরিবার তাদের লিখতে দিচ্ছে না।” সুপ্রীতি বলেন, “গত দুই দশক ধরে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি আমরা, কিন্তু এখন পুরুষদের নিয়ে কাজ করা দরকার; কেননা আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

টেলিভিশন স্টেশন ডিবিসি’র সম্পাদক নবনীতা চৌধুরীও নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলানোটা ‘সবচেয়ে জরুরি’ মনে করেন।“সেজন্য এনজিও, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পুরুষের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। এনজিওর মতো সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। আর এখানে অর্থের বিনিয়োগও করতে হবে, যাতে ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়।”

ব্র্যাকের উর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, অভিনেতা ইরেশ যাকের, একাত্তর টেলিভিশনের প্রোগ্রাম প্রধান নূর সাফা জুলহাজ, ডেইলি স্টারের স্টার উইকেন্ডের সম্পাদক সাবরিনা পৃথা, প্রথম আলোর সাংবাদিক তৌহিদা শিরোপা প্রমুখ।