• শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জমি অধিগ্রহণ বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায়,


প্রকাশিত: ৪:০১ এএম, ১২ এপ্রিল ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩৬ বার

 

ঢাকাটাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান বাইপাস এলাকায় নতুন নির্মাণ করা টিনের ঘরের সারি সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে বাড়তি ক্ষতিপূরণ পেতে রাতারাতি এই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়

খাড়াজোড় তুরাগ সিএনজি স্টেশনের পাশের জমিতে সামনে ইট এবং পেছনে ভেতরে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্রায় ২৮টি টিনের চালা তৈরি করেছেন জমির মালিক রেলসেতুুর পশ্চিম পাশে লাবিব উদ্দিনের বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমির মধ্যে টিনের চাল দিয়ে ১০টি ঘরের মতো তৈরি করা হয়েছে তাঁর পাশে বংশী নদীর পূর্বে নাসিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি রডের সঙ্গে বাঁশ দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করছেন তাঁর দাবি, এতেই তাঁর ব্যয় হয়ে গেছে প্রায় ১০ লাখ টাকা

বংশী নদীর পশ্চিম পাশে জমি আছে আশরাফ করিমের সেখানে তাঁদের সঙ্গে আবদুর রহমানসহ তিনজন মিলে ৩৫টি টিনের চাল তৈরি করেছেনগাজীপুরের কালিয়াকৈরে রাস্তার দুই পাশের উঁচু, নিচু এমনকি ধানি জমিতে কাঁচাপাকা ঘর তৈরির হিড়িক পড়েছে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকেরা চন্দ্রা থেকে সাহেববাজার পর্যন্ত ১১০টি কাঁচাপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন

ঢাকাটাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের জন্য এসব জমি অধিগ্রহণ করা হবে সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে জমির পাশাপাশি বসতবাড়ি প্রতিটি ঘরের জন্য আলাদা দাম ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে

একইভাবে রেলওয়ের জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী দ্বৈত (ডাবল) রেললাইন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য যেসব জমি অধিগ্রহণ হতে পারে, সেগুলোতেও বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায় ঘর তৈরি শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রেললাইনের পাশের জমির মালিকেরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘর নির্মাণ করছেন

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেনতেন এই স্থাপনা নির্মাণে উভয় প্রকল্পের জরিপসহ অধিগ্রহণ কাজে নিয়োজিতদের যোগসাজশ আছে ক্ষতিপূরণের তালিকাভুক্ত হওয়া নাহওয়াও এই যোগসাজশের মধ্যে থাকে

ঢাকাটাঙ্গাইল চার লেন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে সরকার ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে শিগগিরই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে আর জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে

চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর আর রেললাইন তৈরির প্রকল্প বাংলাদেশ রেলওয়ের

এই দুটি সংস্থার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সব বড় প্রকল্পেই জমি অধিগ্রহণের কথা চাউর হওয়ার পর একটি চক্র নতুন ঘর তৈরির তোড়জোড় শুরু করে এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায় এই ঝামেলা এড়াতে অনেক বড় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের আগেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার ছবি সংগ্রহ করা হয়

ধানখেতে পাকা বাড়ির ছাদ: ঢাকাটাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন করতে গাজীপুর টাঙ্গাইল জেলায় প্রায় ৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এর মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় হবে প্রায় সাড়ে ১০ একর ইতিমধ্যে চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর সূত্রাপুর বোর্ডঘর পর্যন্ত চারটি পাকা বাড়ি ১০৬টি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে

কালিয়াকৈরের কৌচাকুড়ি, সফিপুর, চান্দরা, কালামপুর, ডাইনকিনি, হরতকীতলা উত্তর বক্তারপুর মৌজায় এভাবে ঘর তোলা হচ্ছে

এলাকাবাসী জানান, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কিছু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় দালাল আবদুর রহমানের মাধ্যমে ওই সব মৌজার জমির মালিকেরা অধিগ্রহণের বিষয়টি জানতে পারেন গোয়ালবাথান এলাকার আবদুর রহমানের সঙ্গে কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে

কয়েকটি স্থাপনায় গিয়ে দেখা যায়, পাকা ঘর নির্মাণ করতে ছাদ ঢালাইকাজে রডের সঙ্গে বাঁশও দেওয়া হচ্ছে মহাসড়কের পাশে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় টাওয়েল কারখানার পূর্ব পাশে বাঁশের খুঁটির ওপর ১০১২টি টিনের চাল তৈরি করা হয়েছে এর কিছু দূরেই সীমান্ত সিএনজি স্টেশনের সামনে খেতের ধান কেটে ইটের ঘর করা হচ্ছে

খাড়াজোড় তুরাগ সিএনজি স্টেশনের পাশের জমিতে সামনে ইট এবং পেছনে ভেতরে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্রায় ২৮টি টিনের চালা তৈরি করেছেন জমির মালিক  পশ্চিম পাশে লাবিব উদ্দিনের বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমির মধ্যে টিনের চাল দিয়ে ১০টি ঘরের মতো তৈরি করা হয়েছে তাঁর পাশে বংশী নদীর পূর্বে নাসিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি রডের সঙ্গে বাঁশ দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করছেন তাঁর দাবি, এতেই তাঁর ব্যয় হয়ে গেছে প্রায় ১০ লাখ টাকা

গোয়ালবাথান এলাকার বাসিন্দা মো. লাবিব উদ্দিন (৬৫) বাঁশের খুঁটির ওপর টিন দিয়ে লম্বা করে ১০টি দুই চালের ঘর করেছেন তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে বাইপাস সড়ক করার সময় আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তখন জমির জন্য সামান্য টাকা পেয়েছিলাম এবার ১৫ শতাংশ জমিতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে ঘর করেছি এতে একটু বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেতে পারে দিনে দিনে জমির দাম বাড়ছে কিন্তু আমরা তো আর জমি ফিরে পাব না

একটি সূত্র জানায়, কয়েকজন দালাল জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তৈরি করছেন জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি হলোঘর বাবদ যা লাভ হবে, তা দুই পক্ষ ভাগ করে নেবে

আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি ঝুট ব্যবসা করি তাই ঝুট রাখার জন্য গোডাউন করা হয়েছে অনেকেই জমি অধিগ্রহণের সময় অধিক টাকা পাওয়ার জন্য কোনোরকমে ঘর করেছে কিন্তু আমি সে জন্য করিনি

গাজীপুর সড়ক জনপথের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘ঢাকাটাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনের কাজটি হচ্ছে প্রকল্পের মাধ্যমে তাই সেখানে আমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই এটি প্রকল্পের কর্মকর্তা ভূমি অধিগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা দেখছেন

গাজীপুর ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ফকির বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে জমির চাহিদা দিয়ে পত্র পাঠিয়েছে সেই মোতাবেক জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির মাধ্যমে জমির মালিকদের নোটিশ করে আবেদন নেওয়া হবে আবেদনের পর সরেজমিনে গিয়ে জমির অবস্থান দেখা হবে ঘর ওঠানোর সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন নিজের জমিতে যদি কেউ ঘর তৈরি করেন, সেখানে বাধা দেওয়ার কিছু নেই তবে এটা পরিষ্কার, তাঁরা বেশি বিল পাওয়ার আশায় এটি করছেন

মির্জাপুরে রেললাইনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন: রেলওয়ে কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের পাশে আরেকটি লাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে এর অংশ হিসেবে অ্যাসিস্ট্যান্স ফর সোশ্যাল অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএসওডি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থাকে ভূমি জরিপের কাজ দেওয়া হয়েছে সংস্থাটি গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে কাজ শুরু করে

এর পর থেকে মির্জাপুর উপজেলার ভানুয়াবহ, রশিদ দেওহাটা, কুমারজানী এবং গোড়াইল দক্ষিণপাড়া গ্রামে রেললাইনের দুই পাশে বেশ কয়েকটি পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে

রশিদ দেওহাটা গ্রামের মো. মাহাবুব রেললাইনের পাশে তাঁর জমিতে পাকা একতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন বাড়িটির নকশা আরও প্রায় ছয় মাস আগেই অনুমোদন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘জরিপের কাজ চলাকালীন আমি বাড়িটির কাজ শেষ করেছি মাত্র

ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জরিপের কাজে নিয়োজিত এএসওডির সুপারভাইজার মো. ওসমান স্থাপনা তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটির কর্মকর্তাকর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি বলেন, ‘আমরা জরিপকাজের মাধ্যম নির্ধারিত এলাকায় কতগুলো ঘরবাড়ি স্থাপনা পড়েছে, তা নির্ণয় করছি কেউ যদি জরিপ চলাকালীন ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হবে