• রোববার , ১২ মে ২০২৪

ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে এসে পদদলিত হয়ে শিশু-মহিলাসহ ২৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু


প্রকাশিত: ৬:০৫ পিএম, ১০ জুলাই ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

moymonshing-www.jatirkhantha.com.bdবিশেষ প্রতিবেদক. ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে এসে পদদলিত হয়ে শিশু ও মহিলাসহ কমপক্ষে ২৫ জন মারা গেছে। শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহ পৌরসভার সামনে অতুল চক্রবর্তী রোডে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও জাকাতের কাপড় নেয়ার জন্য  শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই ময়মনসিংহ পৌরসভার সামনে অতুল চক্রবর্তী রোডে নুরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরির মালিক মোহাম্মদ শামীমের বাসার সামেন শহর ও বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক শিশু, নারী ও পুরুষ ভিড় করে। ফজরের নামাজের পর বাসার ছোট গেইটটি খোলার সাথে সাথেই উপস্থিত জাকাত প্রত্যাশীরা একযোগে বাসার ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করে এবং হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এসময় তাদেরকে নিবৃত্ত করতে বাসার ভেতরে ফ্যাক্টরির কর্মচারিরা ব্যাপক লাঠিপেটা করে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্বল্প জায়গায় একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং ধাক্কা সামলাতে না পেরে শিশু ও বয়স্ক নারীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পদদলিত হতে থাকে। এদেরকে উদ্ধার করতে গিয়ে অনেকের স্বজনরাও পদদলিত হন। এভাবেই ঘটনাস্থলে কয়েকজনের মৃত্যু ও অর্ধশত নারী আহত হন। আহতদের মধ্যে শহরের চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলে আকুয়া দক্ষিণপাড়ার হেনা (৫৫), আকুয়া মোড়লপাড়ার ময়না (৭০), পাটগোদামের রাজ (২০) ও চরখরিচার রাসেল (২৫)।

কোতোয়ালি মডেল থানার সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ জানান, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ১৮ জনের লাশ রয়েছে। এরা হলেন, ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়ার হায়দার আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৫), আকুয়া মোড়লপাড়ার জালাল উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা বেগম (৫০), মৃত আব্দুস সালামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৫) ও ইসমাইলের স্ত্রী জোহরা খাতুন (৪০), কাঠগোলা বাজারের আব্দুল মজিদের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার (৪০), আকুয়া দক্ষিণপাড়ার রবি হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪২), চরঈশ্বরদিয়ার লাল মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০), থানাঘাটের আব্দুস সালেকের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৫০), ব্রহ্মপুত্র বাস্তুহারা বিহারি ক্যাম্পের সিরাজুল ইসলামের শিশু পুত্র সিদ্দিক (১২), কৃষ্ণ মিয়ার স্ত্রী সখিনা বেগম (৪০), মেয়ে লামিয়া (৫), আব্দুল বারেকের স্ত্রী সামু বেহম (৬০), কাচারিঘাটের মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী ফজিলঅ বেগম (৭৫), পাটগোদাম বিহারি ক্যাম্পের লালু মিয়ার স্ত্রী হাজেরা বেগম (৭০), শহরের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলরোড বসাকপট্টির গোবিন্দ বসাকের স্ত্রী মেঘনা বসাক (৩৫), তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মোসলেমের স্ত্রী মরিয়ম (৫০), শহরের ধোপাখলার মৃত সুলতানের স্ত্রী জামিনা খাতুন (৬৫), গরেন্দ্রের স্ত্রী রিনা (৬০) ও নারায়ন চন্দ্র সরকারের স্ত্রী সুধা রানী সরকার। এছাড়া আরও ৫ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী ও পুলিশ সুপার মঈনুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক জানান, ১৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। পুলিশ সুপার ২০জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহাম্মদ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।  কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

সকাল ১১টায় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম ২৩জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। এঘটনায় জেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

ধর্মমন্ত্রীর শোক: ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে এসে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।  শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুর চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেলিফোনে শোক জানান মন্ত্রী।

এছাড়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।