• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ইতিহাস বদলে দিলেন ধানমন্ডী বয়েজের জাহিদ


প্রকাশিত: ৮:৪২ পিএম, ২১ জুলাই ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫৮ বার

jahid kona-www.jatirkhantha.com.bdএম জাহিদ হাসান :  ঢাকার ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুলে পড়েছেনজাহিদ হাসান। ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। ভালো ছাত্র। স্ট্যান্ড করা। এরপর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর আইনস্টাইনের স্মৃতিধন্য প্রিন্সটনে গবেষণা আর শিক্ষকতা। পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস বদলে যাবে তাঁর নেতৃত্বাধীন গবেষকদলের আবিষ্কারের পর। ১৯২৯ সালে হারম্যান ভাইল নামের এক বিজ্ঞানী প্রথম জানিয়েছিলেন এ রকম একটা কণার অস্তিত্বের কথা।

৮৫ বছর পর আমাদের জাহিদ হাসান, ঢাকার, বাংলার, আমেরিকার এবং পৃথিবীর জাহিদ হাসান সেই কণাকে বাস্তবে পরীক্ষাগারে শনাক্ত করে দিয়েছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন যে সত্যেন বসু (১৮৯৪-১৯৭৪), যাঁর নামে একদিন একটা কণার নাম হয়েছিল বোসন কণা, তাঁর আবিষ্কারের ৯১ বছর পর আরেক বাঙালি/বাংলাদেশির নেতৃত্বে আবিষ্কৃত হলো আরেকটা কণা।

যা আবিষ্কারের পর কেবল তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান পাল্টে যাবে না, বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে ইলেকট্রনিক ও কম্পিউটারের বাস্তব জগতে। ইলেকট্রনিক আর কম্পিউটারের জগৎটা এমনিতেই বদলে যাচ্ছে দ্রুত, প্রতিনিয়ত উন্নতি হচ্ছে এ ক্ষেত্রে, কিন্তু এম জাহিদ হাসানদের আবিষ্কার এটাকে কী যে গতি দেবে, মসৃণতা দেবে, তা কল্পনা করতে গিয়ে হইচই পড়ে গেছে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে।
জাহিদ হাসানদের এই বৈজ্ঞানিক সাফল্য নিয়ে গর্ব করতে পারে পুরো পৃথিবী, উপকার ভোগ করবে সমগ্র মানবসভ্যতা, আর তিনি যে ঢাকার ছেলে, তা নিয়ে আমরাও তো গর্ব করব উজ্জ্বল মুখে, তিনি যে দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অভিনন্দন জাহিদ হাসান আর তাঁর দলকে।
আজকের এই আনন্দের দিনে সেই পুরোনো কথাটাই আবার বলতে হবে, আবার তাতে নতুন করে আস্থা রাখতে হবে—আমরাও পারি। বাংলাদেশের মানুষ মেধায়, সম্ভাবনায়, কৃতিতে কারও চেয়ে কম নয়। সুযোগ পেলে আমাদের ছেলেমেয়েরাও পারে।
ঢাকার ছেলে, আরমানিটোলা স্কুলের ফজলুর রহমান খানকে (১৯২৯-১৯৮২) বলা হয় স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন। টিউবলার ডিজাইনের জনক তিনি, যার ফলে গগনচুম্বী ভবন নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের আরেক বিজ্ঞানী এম আতাউল করিম, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস ডারটমাউথের নির্বাহী উপাচার্য, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বড় হয়েছেন, গ্রামের স্কুলে থেকে লেখাপড়া করেছেন। গণিত অলিম্পিয়াড করতে তাঁর সঙ্গে একবার কুমিল্লা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, তিনি ছাত্রদের বলছিলেন, যে স্কুলে তিনি পড়েছেন, সেখানে বসার জন্য বেঞ্চ ছিল না, ক্লাসে তারা পিঁড়িতে বসতেন, মাদুরে বসতেন। কিন্তু তাঁর ছিল নানা রকমের বই পড়ার নেশা। তার বইপড়ার ক্ষুধা মেটাতে ওই ভাঙা স্কুলে একটা লাইব্রেরি বানাতে হয়েছিল। আর প্রকৌশলী এফ আর খানের একটা উক্তি তো শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের (এখন উইলিস টাওয়ার) নিচে তাঁর নামের সড়কটিতে খোদাই করেই লেখা আছে, এফ আর খান বলেছেন, ‘একজন প্রযুক্তিবিদের আপন প্রযুক্তিতে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয় একেবারেই, তাকে অবশ্যই জীবনকে তারিফ করতে পারতে হবে, আর জীবন হলো, শিল্প, সংগীত, নাটক এবং সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ।’
আসলে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে সম্ভাবনা। শিক্ষা হলো একটা পরশমণি। তার ছোঁয়ায় পাথর হোক, কাঠ হোক সোনা হতে পারে। চাই প্রতিভার যথাযথ পরিচর্যা। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বলতে গিয়ে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ লিখেছে, বাংলাদেশে প্রতিভার কোহিনূরের ছড়াছড়ি। শুধু ক্রিকেটে নয়, বিভিন্ন মাধ্যমেই বাংলাদেশিরা, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভালো করছেন। একেবারে শীর্ষছোঁয়া সাফল্য অর্জন করছেন তাঁরা।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এম জাহিদ হাসানের সাফল্যকে শুধু বাংলাদেশের সাফল্য বলে আমরা কুক্ষিগত করতে চাই না; তা সংগত নয়, যথাযথও নয়। কিন্তু বাংলাদেশের যে ৬০ ভাগ মানুষ এখনো তারুণ্যের ঘরে, তাদের কাছে এই বার্তা নিশ্চয়ই পৌঁছে যাচ্ছে একটার পর একটা সাফল্যের সংবাদে যে, আমাদের হারানোর আর কিছু নাই, আমাদের জয় করার জন্য সামনে পড়ে আছে সমস্ত পৃথিবী। আমাদের সাফল্যগুলো এখন আর উইয়ের ঢিবির সমান হবে না, হবে এভারেস্টের চেয়েও বড়, সমগ্র বিশ্ব এখন আমাদের কর্মক্ষেত্রে, আকাশ হলো আমাদের সীমারেখা। যে কোটি কোটি ছেলেমেয়ে যাচ্ছে স্কুলে-কলেজে, যাদের হৃদয় একবারের জন্য হলেও স্পর্শ পাচ্ছে শিক্ষা নামের পরশমণির, তাদের ব্যক্তিগত এবং সম্মিলিত আলোয় এই বাংলাদেশ আলোকিত হয়ে উঠবেই।
আমাদের পড়তে হবে, সব ধরনের বই, আমাদের প্রিয় বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে হবে খুব মন দিয়ে, প্রতিভা আর কিছুই নয়, সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে, সবচেয়ে বেশি একাগ্রতা দিয়ে, ঐকান্তিকতা নিয়ে কোনো কাজ করার ক্ষমতা, তাকেই বলে সাধনা, আর সাধনাই সিদ্ধি দেবে যেকোনো ক্ষেত্রে। সেটা হতে পারে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, সেটা হতে পারে দারিদ্র্য কমাতে, সেটা হতে পারে ক্রিকেটের মাঠে।
চারদিকে এক নতুন বাংলাদেশের জয়ধ্বনি, যে বাংলাদেশ অজেয়, যে বাংলাদেশ দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই, বাংলাদেশের কোটি কোটি হৃদয়ে আলোর কণা জ্বলছে, দূর থেকে বাংলাদেশকে দেখে মনে হচ্ছে একটা আলোর হাট।