• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

টেকনাফে ৭রোহিঙ্গা ডাকাত ক্রসফায়ার


প্রকাশিত: ৭:৪১ পিএম, ২ মার্চ ২০ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩৭ বার

টেকনাফ প্রতিনিধি : কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব ১৫) এর সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় সাতজন শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুর হোসেন ওরফে নুরাইয়া, মো. ফারুক ওরফে ডাকাত ফারুক, শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. ইমরান ও মোহাম্মদ আলী। নিহতদের মধ্যে বাকি তিনজনের নামপরিচয় জানা যায়নি।

আজ সোমবার ভোররাত ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে অভিযানটি পরিচালনা করে র‌্যাব ১৫ এর একটি চৌকস দল।কক্সবাজার র‌্যাব ১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ জাতিরকন্ঠ কে বলেন, টেকনাফের শালবাগান ও জাদিমুরাসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রুপের উপস্থিতির গোপন সংবাদ পেয়ে র‌্যাবের একটি চৌকস দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে।

এ সময় র‌্যাব সদস্যরা রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রুপের আস্তানার কাছাকাছি পৌঁছালে সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাতরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে অতর্কিতে গুলি ছোড়ে। এতে চারজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়। পরে র‌্যাব আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ের পর ডাকাত গ্রুপের কয়েকজন সদস্য পিছু হটে। পরে র‌্যাব ঘটনাস্থল তল্লাশি করে সেখানে সাতজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিকৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো বলেন, অভিযানে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে তিনটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি ওয়ান শুটার গান, ১২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ১৩ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত সদস্যদের মরদেহ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পৃথক তিনটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাত রোহিঙ্গা ডাকাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র ডাকাতদের আস্তানায় পুলিশের বড়ধরনের অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। শিগগির সেখানে রোহিঙ্গা অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালানো হবে।

এদিকে র‌্যাবের অভিযানে সাতজন রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হওয়ার খবরে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেন। তারা শীর্ষ ডাকাত জকির গ্রুপসহ অন্য সশস্ত্র ডাকাত গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো কঠোর অবস্থানের দাবি জানান।শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক বেশ কয়েকটি ডাকাতদল ক্যাম্পের আশপাশের পাহাড়ে সক্রিয় রয়েছে। তারা দিনদুপুরে ক্যাম্পের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রবাজি করে থাকে। ক্যাম্পে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। তারা গহীন পাহাড়ে অবস্থান করায় বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তবে এবার র‌্যাবের অভিযানে একসাথে সাতজন ডাকাত মারা যাওয়ায় আমরা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করছি।

জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গা হোছন আলী বলেন, ক্যাম্পের উঠতি বয়সের রোহিঙ্গা তরুণরা রোহিঙ্গা ডাকাতদলের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছিল। অনেক পরিবারের রোহিঙ্গা যুবকরা ডাকাতদলের সদস্য হতে পারাকে অনেকটা গৌরবের বিষয় হিসেবে দেখে। তাদের অনেকে নিজেদের ডাকাতদলের সদস্য পরিচয় দিতে পর্যন্ত দ্বিধা করে না। জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নুর আলম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র ডাকাতদের ধরতে র‌্যাবের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখা দরকার।

র‌্যাব ১৫ এর টেকনাফ সিপিসি ১ এর কম্পানি কমান্ডার লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, টেকনাফের জাদিমুরা, শালবাগান ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন গহীন পাহাড়ে একাধিক সশস্ত্র ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় ছিল। এসব ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে খুন, অপহরণ, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড জড়িত ছিল। ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের কাছে জিম্মি ছিল। তাদের ধরতেই র‌্যাব অভিযানটি পরিচালনা করে।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে ডাকাতের আস্তানা শনাক্ত করতে ও স্বশস্ত্র ডাকাতদের ধরতে র‌্যাব এর আগে ড্রোন এবং হেলিকপ্টার দিয়েও অভিযান পরিচালনা করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাত আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাত বাহিনী ছাড়াও ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তারা অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ ও মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৃথক অভিযানে এর আগে ৬২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল। তবে এখনো ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ অধরা রয়ে গেছে।

বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’-
কক্সবাজারের টেকনাফে বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানায় বিজিবি। আজ সোমবার ভোররাতে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা খালসংলগ্ন এলাকায় ইয়াবা উদ্ধার করতে গেলে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে জানান ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সাল হাসান খান। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে দেড় লাখ পিস ইয়াবা, একটি দেশে তৈরি অস্ত্র ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।