• বুধবার , ৮ মে ২০২৪

খুন, গুম অপহরণে জড়িত র‌্যাব কলঙ্কিত : খালেদা জিয়া


প্রকাশিত: ১১:৪৫ পিএম, ২২ মে ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬১ বার

স্টাফ রিপোর্টার: ২২ মে ২০১৪:

 

  
বিএনপির পূর্বঘোষিত সভা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের বাধায় স্থগিত হয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানে তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার কয়েকজন নেতা-কর্মীর স্বজনের কথা শুনেন। ছবি: ফোকাস বাংলাবেআইনি পন্থায় বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও বলপূর্বক নিখোঁজ করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, র‌্যাবকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করায় এই বাহিনীর অনেক সদস্য বিশৃঙ্খল ও বেপরোয়া হয়ে গেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন এ সরকারের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়; তাঁদের ওপরই সরকার ভর করে আছে। তাঁরা (র‌্যাব সদস্য) যাই করুক না কেন সরকার কিছুই করতে পারবে না। তাই একশ্রেণির র‌্যাব সদস্য বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

পুলিশের বাধার মুখে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থগিত হওয়া ঢাকা মহানগর বিএনপির আলোচনা সভা সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি এসব দাবি জানান।

ঢাকা মহানগর বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী নিখোঁজ হয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কয়েকজন এ সময় বক্তব্য দেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন দাবি করেছেন, খুন, গুম ও অপহরণে জড়িত হয়ে র‌্যাব কলঙ্কিত হওয়ার সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর দায় সরকারের। এর দায় মেনে সরকারকে র‌্যাব বিলুপ্তের আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। পাশাপাশি যে উদ্দেশ্যে র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল, সেই কাজে যেন তাদের ব্যবহার করা যায় সে লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ও প্রশিক্ষিত কাঠোমো গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

খুন, গুম ও অপহরণের কলঙ্কের জন্য সাবেক বিচারপতি, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীর সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান খালেদা জিয়া।

কোথাও কেউ নিরাপদ নয়

খালেদা জিয়া বলেন, প্রিয় স্বদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকা ও আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। যেন সরকার, শাসন-প্রশাসন নেই। আছে ত্রাস, নিরাপত্তাহীনতা। কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ খুন, গুম, নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে আছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই, খাল-বিল-নদী-নালায় সবখানে শুধু লাশ আর লাশ।

বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উত্পীড়নের পাশাপাশি সরকারের বাহিনীগুলো এখন সাধারণ মানুষ, মানবাধিকারকর্মীদের ওপরও নির্যাতন চালাচ্ছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ জড়িত বলে নিহত ব্যক্তির স্বজন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে, কোন অন্ধকার যুগে আমরা ফিরে যাচ্ছি?’ তাঁর প্রশ্ন, স্বাধীন দেশে আজ এ কী অবস্থা?

প্রতিপক্ষ দমনে র‌্যাবকে জড়ানো হয়েছে

খুন, গুম ও অপহরণে র‌্যাব জড়িত এ অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া বলেন, ভয়ংকর অপরাধীরদের দমনের জন্য বিএনপি র‌্যাব গঠন করেছিল, সে কাজে র‌্যাব সফল হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, বিএনপির সময় র‌্যাবকে কখনো বিরোধী দলকে দমনে ব্যবহার করা হয়নি। তখন র‌্যাবের পেশাদারি ও শৃঙ্খলা অটুট ছিল। পরে বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে র‌্যাবকে জড়ানো হয়েছে।

র‌্যাব জনসমর্থন হারিয়েছে

খালেদা জিয়া বলেন, জনসমর্থন ছাড়া কোনো বাহিনীর কাজ করা সম্ভব নয়। র‌্যাব সেটা হারিয়েছে। তাই র‌্যাব বিলুপ্ত করা এখন সময়ের দাবি। তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা, সাদাপোশাকে পুলিশের অভিযান বন্ধ করা, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানান। পাশাপাশি কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে সাক্ষী রেখে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এই সরকারের পদত্যাগ চেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান খালেদা জিয়া। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন সভ্যতা, আইন ও প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের পথে পা বাড়াতে সোচ্চার হই।’

বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের চেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সাংবাদিক নির্মল সেন লিখেছিলেন, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। আজ অবস্থা এর চেয়েও খারাপ।

এ সময় অধ্যাপক দিলারা হাফিজ, পিয়াস করিম, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ বক্তব্য দেন।