• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

খালেদার জন্ম দিনে হল মিলাদ মাহফিল


প্রকাশিত: ৬:২০ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৯৮ বার

স্টাফ রিপোর্টার : আজ খালেদা জিয়া ৭৬- এ পা রাখলেন। এবার নেত্রীর জন্ম দিনের অনুষ্ঠান পাল্টে গেল মিলাদ মাহফিলে। আজ ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন। এই দিবসটি উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল হলেও দোয়া মাহফিলের ব্যানারে জন্মদিনের কোনো কথা লেখা ছিল না। বরং ব্যানারে লেখা ছিল- ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য ও সুস্থতার কামনা, দেশবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের করোনা ও অন্যান্য রোগে মৃত্যবরণে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুদর্শায় থেকে রেহাই পেতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল’।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিল করেছে বিএনপি। আজ শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কয়েক শ নেতা-কর্মী সমবেত এই দোয়া মাহফিলে যোগ দেন।নিচতলার রুমের বাইরে ফুটপাতে দাঁড়িয়েও নেতা-কর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রীর দোয়া মাহফিলে অংশ নিতে দেখা যায়। একই কর্মসূচি সারা দেশে করছে বিএনপি। কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা বিএনপি আজ শনিবার বিকেলে জিনজিরা পার্টি অফিসে দোয়া মাহফিল কর্মসূচি করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলের থানার সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী।

সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের সাজা স্থগিতে মুক্ত হয়ে বর্তমানে অসুস্থতাবস্থায় তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া করা বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। সেখানে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে তিনি চিকিৎসায় থাকায় নেতা-কর্মীদেরও তার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ নেই। বিএনপির ওয়েব সাইটে রয়েছে, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার জন্ম। বাংলা পিডিয়াসহ খালেদা জিয়ার জীবনীর ওপর রচিত কয়েকটি গ্রন্থে’ও তার জন্ম সাল ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট দেখানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও তিনি দিনাজপুরে ঠিকানা নিয়েছিলেন।

খালেদা জিয়ার জন্মও সেখানে। তার মা তৈয়বা মজুমদার। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনের পর প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। ১৯৮১ সালে ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হলে রাজনীতিতে পা রাখেন খালেদা জিয়া। প্রথমে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন এবং তিন বছর পর চেয়ারপারসন হন তিনি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল’ বিএনপির জনভিত্তি তৈরি করে দেন খালেদা জিয়াই। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

যাহোক, নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিচ তলায় বিএনপির উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয় আজ। দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার।
দোয়া মাহফিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আল্লাহর কাছে আরোগ্য কামনা করব। এদেশের মানুষ, এদেশের জনগণ, এদেশের বাক স্বাধীনতা-আমরা যদি এগুলোর কথা বলি, এগুলো রক্ষার কথা বলি, এগুলো আদায়ের কথা বলি তাহলে একটি নাম উদ্ভাসিত হয় জনতার মানসপটে, বাংলাদেশের দৃশ্যপটে যে বড় প্রতিকৃতিটা আমাদের সামনে ভেসে উঠে সেটি হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’

তিনি আরও বলেন, শোক- দুঃখ- বেদনায় যিনি জনগণকে ছেড়ে যাননি, জনগণের পাশে থেকেছেন। দুই বছর অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে জেলে রাখা হয়েছে। তবুও তিনি অক্ষয়-অব্যয় গণতন্ত্রের প্রশ্নে মাথা নত করেননি তিনি। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহ‘তালা তার দীর্ঘজীবন দান করবেন। আমরা যে দুঃসময়, অন্ধকার, এই অন্ধকার থেকে আমরা মুক্তি পাব দেশনেত্রীকে যখন আমরা আমাদের সাথে পাব।দলের স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটা মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হলো শুধু প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। সেখানে তার স্বাক্ষর নাই, কোনো ধরনের তার কোনো সম্পর্ক নেই। একজন নির্দোষ মহিলা। গণতন্ত্রের জন্যে বার বার নিজের জীবনকে বিপন্ন করেছে। তিনি কারাগারের বাইরে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে মুক্ত নয়। আজকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই এদেরই (সরকারের) আন্দোলনের ফসল তাকে যেভাবে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। আজকে অসুস্থ সুদুর ইংল্যান্ড থেকে দল তিনি পরিচালনা করছেন এই দুর্যোগের মধ্যে, এই দুর্দিনের মধ্যে এই গণতন্ত্রহীনতার মধ্যে।

দেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা একটা দুঃসময় অতিক্রম করছি, ঘোর দুর্দিন অতিক্রম করছি। কথা বলতে হয় ভয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এটা তো একেবারে জাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।যদি কেউ কোথাও কোনো মন্তব্য করেন ফেসবুকে, সেখানে কেউ শেয়ার দিলে রাত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তার কপালে তিনটা জিনিস ঘটতে পারে। একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে অথবা তাকে গুম করে দেয়া অথবা তার লাশ কোনো জায়গায় রেখে দেওয়া অর্থাৎ বিচারবর্হিভুত হত্যার শিকার হওয়া। এই হচ্ছে প্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা।

ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন–

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার মানে পদ্মাসেতুর দুর্নীতি, আওয়ামী লীগ সরকার মানে হলমার্কের দুর্নীতি। এটা কার সময়ে হয়েছে? আওয়ামী লীগের সময়ে হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ মানে ক্যাসিনোর সাথে সম্পর্কিত একটি রাজনৈতিক দল কারণ তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এর সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগ মানে হচ্ছে জিকেজি-রিজেন্ট হাসপাতাল একটা হাসপাতালের লাইসেন্স দেয়া। আওয়ামী লীগ মানে হচ্ছে করোনার মিথ্যা-ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়া। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, ‘বিএনপি আর দুর্নীতি সমর্থক। তাহলে করোনার এই মিথ্যা সার্টিফিকেট কী বিএনপির আমলে দেওয়া হয়েছিল, পদ্মাসেতুর কেলেঙ্কারি কি বিএনপির আমলে হয়েছিল, হলমার্কের কেলেঙ্কারি কি বিএনপির আমলে হয়েছিল, ডেসটিনির কেলেঙ্কারি কি বিএনপির আমলে হয়েছিল, ক্যাসিনো, রিজেন্ট-জিকেজি হাসপাতালে জাল করোনার সার্টিফিকেট কি বিএনপির আমলে হয়েছিল। তাই আমি বলি যে, এই করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট ও স্বাস্থ্য খাতকে ভেঙে দেওয়া, দুর্নীতিগ্রস্ত করা এটার সমর্থক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। পদ্মাসেতু ও আওয়ামী লীগের নেতাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ করার যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতির ধারক বাহক হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’