• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

আইভীকে সমর্থন জাতীয় পার্টি’র


প্রকাশিত: ৬:৪৮ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ১৬ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬০ বার

 
নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী nnলীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

আজ সোমবার নারায়ণগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এ সমর্থনের কথা জানায়। দলটির নেতারা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ে।

এ সময় জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতি, মীর আবদুর সবুর আসুদ, হাজি সাইফউদ্দিন আহমেদ মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নুরু, আলমগীর শিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল ইসলাম সফিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জসিমউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জের-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমান। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের বড় ভাই। সেলিম ওসমান তাঁর বড় ভাই এ কে এম নাসিম ওসমানের আসন থেকে উপনির্বাচনে যখন সংসদ সদস্য পদে দাঁড়ান তখন আওয়ামী লীগও সেখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এবারো সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আইভীকে সমর্থন দিবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন সেলিম ওসমান।

বিগত নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হয়েছিলেন আইভী। তবে এবার দলীয়ভাবে আইভী মনোনয়ন পাওয়ায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছেন। আইন বাধ্যবাধকতা থাকায় সেলিম ওসমান বা শামীম ওসমান কেউই সরাসরি নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে এস এম ফয়সাল চিশতি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভীকে সমর্থন দিয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এখানকার এমপি সেলিম ওসমান প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছেন না। কিন্ত নেতাকর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইভীর পক্ষে কাজ করতে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব আইভীকে জয়ী করতে। আইভী একজন কর্মঠ, দক্ষ ও জনপ্রিয় নেত্রী। এলাকাতে শান্তি ও অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আইভীকে জয়ী করাতে হবে।’

আগামী ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে আরো পাঁচজন মেয়র পদপ্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন।

এর মধ্যে আছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহর (পাখা), ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল ইসলাম (মসজিদের মিনার), এলডিপির কামাল প্রধান (ছাতা), কল্যাণ পার্টির মেয়র প্রার্থী রাসেল ফেরদৌস সোহেল মোল্লা (হাতঘড়ি)। এখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দণ জোটগতভাবে নির্বাচন করছে। ফলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের পরও তা প্রত্যাহার করে নেন।

অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও লড়াইয়ের ময়দানের আছেন জোটসঙ্গী এলডিপি ও কল্যাণ পার্টির দুই মেয়র পদপ্রার্থী। তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ভোটের মাঠ ছাড়েননি। নিয়েছেন দলীয় প্রতীকও। পরে কেন্দ্র থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এই দুই মেয়র পদপ্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়।

এ দিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২২ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নামানো হয়েছে। এই ২২ প্লাটুন বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নারায়ণগঞ্জে কাজ করবে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান।এ ছাড়া নাসিক নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানরত বহিরাগতদের আজ মধ্যরাত ১২টার মধ্যে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নাসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ থেকে পরবর্তী সাতদিনের জন্য বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় লাইসেন্সধারী অস্ত্র মালিকরা যেন অস্ত্রসহ চলাচল না করেন সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের জনসভা, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে নাসিকে আজ দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২২ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং ২১ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত ১২টা থেকে ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, বাস, টেম্পো, কার, পিকআপ, জিপ, ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত যানবাহন ও জরুরি কাজে যান চলাচলের এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিসাপেক্ষে প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে তা শিথিলযোগ্য।

সাংবাদিক, নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, জরুরি কাজে ব্যবহারযোগ্য কার্যক্রমে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।

নাসিক নির্বাচনে একজন মেয়রের সঙ্গে ২৭টি সাধারণ ও নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নাসিকে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র ও এক হাজার ৩০৪টি বুথ রয়েছে। মোট চার লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন।

দলীয় মনোনয়নে প্রথম ভোট হচ্ছে নাসিকে। আগামী ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।