• মঙ্গলবার , ১২ নভেম্বর ২০২৪

ট্রেনের গেটে বাসার মাশুল..


প্রকাশিত: ৫:০০ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ১৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৫ বার

 

উপেন রবি দাস চান না কেউ তাঁর মতো ভুল করুক। ছবি: আবুল কালাম আজাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 দীনা করিম.রাজশাহী :
প্রথমে ভেবেছিলেন পা দুটি উড়ে গেছে। পরে খেয়াল করে দেখেন, উড়ে যায়নি, ঝুলে আছে চামড়ায়। ঘুরে গেছে উল্টো দিকে। একজন যাত্রী পা দুটো ঘুরিয়ে গামছা দিয়ে বেঁধে দেন। এভাবে উপেন রবি দাসের দুর্বিষহ প্রতিবন্ধী জীবনের শুরু।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপেন ট্রেনের সিঁড়িতে পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। রেললাইনের পাশে দাঁড়ানো ছিল একটি ট্রাক। চোখের পলকে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এরপর আড়াই মাস ধরে তিনি পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। এখন নিজের ভুলের জন্য নিজেকেই অভিশাপ করছেন। উপেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছেন। বাড়ি রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাকির মোড়ে। বাবা নেই। ভাই দীপেন রবি দাস কাকার জুতার দোকানে কাজ করেন। সেলাই, পালিস, নতুন করে বানানো—সবই করেন। তিনি ছোট ভাই উপেনের পড়ালেখার খরচ টানেন। মাঝেমধ্যে কাকারাও সহযোগিতা করেন।

গত ১৪ জুন উপেন গিয়েছিলেন দিনাজপুরে। বন্ধুর বোনের বিয়েতে। একসঙ্গে ১৫ জন বন্ধু। ফিরতে ফিরতে রাত। সেদিন খুব ভিড় ছিল ট্রেনে। দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কেটেছিলেন। তবে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। কী মনে করে সব বন্ধুকে ছেড়ে একসময় উপেন ট্রেনের গেটে পা ঝুলিয়ে বসেন। দুই হাতে ধরা ছিল হাতল। রাত প্রায় নয়টা। নাটোরের বাসুদেবপুর স্টেশনের কাছে চলে এসেছে ট্রেন। সেখানে রেললাইনের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ছিল একটি ট্রাক। উপেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কী যেন ঘটে যায়, মনে হয় তাঁর পা দুটি উড়ে গেল। শরীরটা খানিকটা নিচে নিমে গেল। তিনি হাতল ধরে এক ঝাঁকি দিয়ে আবার ওপরে ওঠেন। ওপরে উঠে দেখেন পা দুটি আছে কিন্তু অন্যদিকে ঘুরে গেছে।

আড়াই মাস ধরে উপেন পড়ে রয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। পা দুটি বিচ্ছিন্ন হয়নি বটে, তবে জ্বালাযন্ত্রণার শেষ নেই।

গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিত্সকেরা তাঁর ওঠাবসা করার জন্য বিছানার ওপরে দুটি আংটা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে তাঁর একাধিকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়া কেটে নিয়ে এসে বাম হাঁটুর ক্ষত ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আর ডান পায়ের পুরোটাতেই ব্যান্ডেজ জড়ানো রয়েছে। পাশে বসে মা মীরা রবি দাস তাঁকে খাওয়াচ্ছিলেন। বললেন, ‘ছেলের শরীরের রক্ত শেষ হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে যেতে আরেকটু দেরি হলে রক্তশূন্যতায় সে মারা যেত।’

উপেন বলেন, দুর্ঘটনার পরে বন্ধুরা বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের চালককে জানান। চালক একটি স্টেশনে ইঞ্জিন ঘোরানো ছাড়া আর কোথাও যাত্রাবিরতি দেননি। এক টানে রাজশাহীতে চলে আসেন। পুরো রাস্তায় তাঁর জ্ঞান ছিল, কিন্তু হাসপাতালে আসার পরই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে থাকার কারণে একটি সেমিস্টার পার হয়ে গেল। তিনি পরীক্ষা দিতে পারলেন না। চিকিত্সকেরা শেষ পর্যন্ত আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। উপেন বলেন, তিনি ভুল করেছেন। ট্রেনের গেট বসার জায়গা নয়। তাঁর মতো ভুল যেন কেউ না করেন।