• শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীপুরে চারদিকে দেয়াল তুলে অবরুদ্ধ নিরীহ পরিবারকে বাঁচাতে মানববন্ধন


প্রকাশিত: ৯:৪৪ পিএম, ৫ এপ্রিল ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৮ বার

sreepur-Wall-www.jatirkhantha.com.bd
এস রহমান/ কামাল পাশা :  উঁচু দেয়াল তুলে চারদিকে ঘেরাও দিয়ে একফুট রাস্তা রেখে সম্পত্তি দখল করতে চেয়েছিল শ্রীপুরের এক প্রভাবশালী চিড়া মিল মালিক। এনিয়ে অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর আজ বুধবার বিকেলে সেই রাস্তাটুকুও বন্ধ করে দিয়েছে মিল মালিক। এ নিয়ে আজ এলাকার বিক্ষুদ্ধ মানুষজন পরস্পর চাঁদা তুলে মানববন্ধন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে আজ নতুন করে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলমকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও আজও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। তবে এবার তিনি লিখিত অভিযোগের সতত্যা স্বীকার করে স্থানীয় ইউএনওকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন জানানো হয়েছে।sreepur-Wall-www.jatirkhantha.com.bd.4

এরআগে খুলনার পাইকগাছায় কয়েক ফুট উঁচু দেয়াল তুলে এক নিরীহ পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত চেষ্টার মত ঘটনা ঘটেছিল। খুলনার মত শ্রীপুরে উঁচু দেয়াল তুললেও এখানে একটি নিরীহ কৃষক পরিবারকে চলাচলের জন্য মাত্র এক ফুট জায়গা দেয়া হলেও আজ তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেয়াল তুলে। সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

চারদিকে দেয়াল তুলে ৬ সদস্যের পরিবার
অবরুদ্ধ করার বিরুদ্ধে মানববন্ধন শ্রীপুরে

sreepur-Wall-www.jatirkhantha.com.bd.2
বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য চারপাশের সকল পথ অবরুদ্ধ। শরীর বাঁকা করে ১৫ ফুট দুটি ইটের দেয়াল ঘেঁষে কোনোমতে বাইরে বের হতেন পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে সে পথটুকুও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন লাফিয়ে লাফিয়ে নর্দমা পেরিয়ে বাড়ির বাইরে যেতে হয়।

ওপর থেকে ধানের কুঁড়া এসে পড়ে জামা-কাপড়, শোবার ঘর, বিশুদ্ধ পানি এমনকি খাবারে। শরীরের অবস্থাতো আরও নাজুক। দিনে পাঁচবার গোসল করেও পরিচ্ছন্ন থাকার সুযোগ নেই। ঠান্ডা, কাশি লেগেই থাকে পরিবারের সবার। এমনভাবেই বসবাস করছেন আব্দুল আজিজ ও তার পরিবারের ছয় সদস্য। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার মাইষপুরুষ গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে।
sreepur-Wall-www.jatirkhantha.com.bd.3
আব্দুল আজিজ জানান, তিনি শুটকী ব্যবসা করতেন। গত ২২ বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ মৌজায় মাত্র সোয়া পাঁচ শতক জায়গা কেনেন। শুটকি ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে দুটি ঘর করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন। নাতি নাতনি নিয়ে অন্য সবার মতো খেয়ে পড়ে চলে যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু গত চার বছর আগে থেকে সংকুচিত হতে থাকে চলাফেরা। রান্না-বান্না এমনকি গৃহস্থালীর কাজও করতে হয় শোবার ঘরে।

বাসস্থান থাকার পরও মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। জীবিকায় বাধাগ্রস্থ হয়ে তিনি এখন ক্ষুদ্র (শুটকী) ব্যবসাও চালাতে পারছেন না। যিনি তাকে অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য করছেন তিনি হলেন মুলাইদ (দাইপাড়া) এলাকার মিতালী ফুড প্রোডাক্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী হাজী নূরুল হুদা। তার বিরুদ্ধে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।

Sreepur-7মুলাইদ এলাকার হাজী ইমান আলী বলেন, মানবিক জীবন যাপনের দাবী জানাতে আব্দুল আজিজ বুধবার ওই গ্রামে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এ আয়োজনের জন্য তিনি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে ফেস্টুন, ব্যানার তৈরী করে মানববন্ধনে অংশগ্রহনের আমন্ত্রণ করেন। বুধবার দুপুর ১২টায় এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দাইপাড়া এলাকার বাড়ি ঘরের চালে কুঁড়ার স্তুপ পড়েছে। গাছপালা, লতাপাতা কুঁড়ার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। বাসা বাড়ির লোকজন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দরজা জানালা বন্ধ করে রাখেন। খাওয়া দাওয়াসহ গৃহস্থালীর নানা কাজ দরজা বন্ধ করে করছেন।

দাইপাড়া এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো: আব্দুল আজিজ বলেন, মিতালী চিড়ার মিল থেকে দিনরাত ধানের কুঁড়া এসে পড়ছে। গত এক বছর যাবত ধানের কুঁড়া উড়ে এসে তাদের ঘরের চাল, গাছপালা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। নারিকেল গাছ মরে গেছে। ফল দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সারাদিন ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়। কুঁড়া উড়ে আসার কারণে শোবার ঘরেই খাবার তৈরী করতে হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক ঈমান আলী হাজী বলেন, চিড়ার মালিককে এলাকার পক্ষ থেকে নানা অসুবিধার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি কর্ণপাত করছেন না। কোনো চিমনি ছাড়া উম্মুক্তভাবে কুঁড়া উড়িয়ে চিড়ার মিল পরিচালনা করছেন।

মোতাহার হোসেনের স্ত্রী আকলিমা আক্তার বলেন, শোবার ঘরে চুলা নিয়ে রান্না বান্না করতে হয়। পরিবারের সকল সদস্যদের হাঁচি কাশি লেগেই থাকে। এ দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। আব্দুল কাদিরের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, চিড়ার মিলের আশপাশের এলাকার লোকজন স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

একই পাড়ার আইনুদ্দীন বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরী করে চিড়ার মিলের মালিক আশপাশের বাসিন্দাদের উচ্ছেদে বাধ্য করছেন। আজমত আলীর ছেলে সাহাজ উদ্দিন বলেন, চিড়ার মিল মালিকের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে তেলিহাটী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে চিড়ার মিল মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে সকল মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

চিড়া মিল মালিক হাজী নূরুল হুদার ছেলে খোরশেদ আলম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই চিড়ার মিল পরিচালনা করছি। আমার মিলের চারপাশে আমারই ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা। আবহাওয়ায় বেশি বাতাস থাকলে কিছু কুঁড়া উড়ে যেতে পারে।

তবে অভিযোগকারীদের অভিযোগের সুনির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই। আব্দুল আজিজ যেখানে বসবাস করছেন সেটা তার জায়গা নয়। তিনি ক্রয় করেছেন এক জায়গা বসবাস করছেন অন্য জায়গায়। তার সাথে ২২ বছর যাবত সম্পর্ক রয়েছে, আমরা সঠিক সমাধানে যেতে চাই।