• শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চাল লুটেরা রশিদ-লায়েক গাঢাকা


প্রকাশিত: ১:৫৯ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১৯ বার

এস রহমান :  দেশে অবৈধ চাল মজুদ সিন্ডিকেটের গডফাদার রশিদ-লায়েক চক্র প্রতিদিন ২৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে Rashed-Layek-www.jatirkhantha.com.bdঅভিযোগ উঠেছে। চাল সংকটের সুযোগ নিয়ে এরা কেজি প্রতি ৫ টাকা বেশী নিয়ে ইতিমধ্যে শত কোটি টাকার বানিজ্যে করে ফেলেছে।খুব শিগগির এদের ধরতে পুরস্কার ঘোষনা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্র অভিমত দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, রশিদ ও লায়েক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রায় ৫ হাজার টন মজুদ চাল অবৈধভাবে বাড়তি দামে বিক্রি করছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে এই চক্রের ডেরায় হানা দিয়ে মজুদ চাল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে গাঢাকা দিয়েছে রশিদ ও লায়েক। তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখছে গোয়েন্দারা।
110
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, ‘চার থেকে পাঁচ মাস বা তারও বেশি সময় আগে ধান কিনে গোডাউনে রাখা হয়েছে। আব্দুর রশিদের একেকটি গোডাউনে তিন থেকে চার হাজার বস্তা পর্যন্ত ধান মজুদ আছে। আর প্রতি বস্তায় ৭১ কেজি করে ধান রয়েছে।’

‘মিলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৫০০টন চাল উৎপাদন হয় রশিদের মিলে। প্রতিকেজিতে ৫ টাকার ওপরে মুনাফা করায় প্রতিদিনই অতিরিক্ত লাভ হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এক মাসেই আব্দুর রশিদ চাল বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেছেন সাড়ে ৭ কোটি টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানেই এই মোকামে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫টাকা।’

গুদামে অতিরিক্ত চাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগে বাংলাদেশ রাইস মিল অ্যাসেসিয়েশনের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। কুষ্টিয়ায় আবদুর রশিদের ১৩টি গোডাউনে মাসের পর মাস বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ থাকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আর জয়পুরহাটের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ব্যবসায়ীদের নেতা নির্বাচিত হলেও লায়েক আলীর ব্যবসার পরিধি তত বড় নয়। গ্রেফতারের নির্দেশ আসার পর আব্দুর রশিদকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর লায়েক আলী তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

rrrসরেজমিনে কুষ্টিয়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজা নগরে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদের মালিকানাধীন গোডাউনে বিপুল পরিমাণ ধান মজুদের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বেশি দামে চাল বিক্রির অভিযোগে তার চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রশিদ অ্যাগ্রোকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ রশিদ অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেডে অভিযান চালায়। তবে তার গুদামে সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, খাজানগর চালকল মোকাম এলাকার আইলচারায় রশিদ অ্যাগ্রো ফুডের চারটি স্বয়ংক্রিয় চালকল ও অফিসে প্রতিদিন ৫০০টন চাল উৎপাদিত হয়। যাতে ধান লাগে ৮০০ মেট্রিক টন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত আব্দুর রশিদের মিলের ১৩টি গোডাউনে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে কর্মকর্তারা জানান, এসব গোডাউনে হাজার হাজার বস্তা ধান মজুদ করে রাখা হয়েছে। কতদিন আগে এসব ধান কেনা হয়েছে তা মিলের কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি।

কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাজি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কিছু অসাধু মিলার সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ইচ্ছামতো ধান-চাল মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব মিল মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। ’

অভিযোগের বিষয়ে চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদের মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র এক নেতা জানান, ‘রশিদ আগে বিএনপির সদস্য ছিলেন। জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি  ‘আব্দুর রশিদ এখন বিএনপিতে নিষ্ক্রিয়।

এদিকে কে এম লায়েক আলীর জয়পুরহাট শহরের মৌসুমী মার্কেটে তার নিজস্ব অফিস ও চালের গুদাম রয়েছে। জানা গেছে, জয়পুরহাটের পেঁচুলিয়া মঙ্গলবাড়িতে মদিনা রাইস মিলে ৪০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন ক্ষমতার তার নিজস্ব চাতাল রয়েছে। আগে জয়পুরহাট শহরে তালেবুল রাইস মিল নামে তার যে চাতাল ছিল, সেটি বর্তমানে চাতাল গুদাম ঘর। সেখানে এক-দেড়শ বস্তা চাল মজুদ আছে।অভিযোগ রয়েছে রশিদ এবং লায়েক পরস্পর যোগসাজশে চাল মজুদ করে অবৈধভাবে ফায়দা লুটছেন। এদের সঙ্গে একটি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট  রয়েছে। এরা সম্লিলিতভাবে একটি রাজনৈতিক দলের ইশারায় সরকারকে বিপাকে ফেলতে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইটাখোলা বাজারের চৌধুরী অটো রাইস মিলের মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ী রওনকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নব্বই এর দশকে জয়পুরহাটে চালকল মালিক সমিতি গঠনের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন লায়েক আলী। তখন তিনি জয়পুরহাট শহরের তালেবুল রাইস মিলের মালিক ছিলেন। এরপর উত্তরবঙ্গ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ অটোমেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তার ভূমিকার কারণেই উত্তরবঙ্গে চালকল মালিক সমিতি গঠিত হয়েছে। জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোজাহার আলী প্রধান বলেন, ‘ব্যবসায়ী নেতা লায়েক আলীও বিএনপি’র একজন সমর্থক; তবে দলের কোনও পদে তার নাম নেই।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দুটি গ্রুপ আছে। একটি গ্রুপ সরকারের সমর্থক। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একেএম খোরশেদ আলম খান। তিনি এ সংগঠনের চেয়ারম্যান। অপর গ্রুপটি সরকার বিরোধী বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সেই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আব্দুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী।

সরকার সমর্থিত গ্রুপটি রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার সচিবালস্থ কার্যালয়ে দেখা করেন। এসময় অপর গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদকে (মিনিকেট রশীদ নামে পরিচিত) বিএনপির অর্থ যোগানদাতা ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জামাতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন তারা।